বিশ্ববেহায়া হতে থুতু এরশাদ...অভিনন্দন হোসেইন মোহম্মদ এরশাদকে!!!

Submitted by WatchDog on Sunday, November 24, 2013

Hussain Muhammad Ershad

হোসেন মোহম্মদ এরশাদকে অভিনন্দন না জানালে তার প্রতি অন্যায় করা হবে। বাংলাদেশের কর্দমাক্ত রাজনীতির মাঠে অনেক বড় বড় খেলোয়াড় খেলেতে গিয়ে ঘায়েল হয়েছেন। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই আহত নিহত হয়ে মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। শেখ মুজিবের মত আজন্ম রাজনীতিবিদও নিজেকে নিরাপদ রেখে খেলেতে পারেননি। জিয়ার মত জাদরেল জেনারেলকেও বিদায় নিতে হয়েছে অত্যন্ত করুণ ভাবে। সে তুলনায় জেনারেল এরশাদ অনেকটাই সফল। অন্তত গদি হতে বিদায় পর্বে পূর্বসূরিদের ভাগ্য বরণ করে বিদায় নিতে হয়নি। জেনারেলের ভরা যৌবন ও ভাটা পর্বের প্রায় সবটা সময় দেশে ছিলাম। তাই তার শাসনামলের অটোপসি জানতে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খোর স্বদেশি মিডিয়ার সাহায্য নিতে হয়না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান শর্ত। এ অর্থে এরশাদ আমলকে দুভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, স্বৈরতান্ত্রিক উপায়ে হোক আর যেভাবেই হোক তার আমলের কটা বছর দেশ রাজনৈতিক ঝামেলামুক্ত ছিল। ফলশ্রুতিতে ক্ষুদ্র শিল্পের একটা ভিত্তি গড়ে উঠার প্রবণতা শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তার আমলের অন্তিম লগ্নেই বপিত হয় ক্ষমতা পালাবদলের নতুন বীজ, ক্যান্সার। গাজী গোলাম মোস্তফাকে দুর্নীতির আদি পিতা বললে বোধহয় খুব একটা অন্যায় হবেনা। কারণ রেডক্রসের প্রধান হয়ে কম্বল চুরির মাধ্যমে এই নেতাই দেশে দুর্নীতি নামক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছিলেন। পরবর্তীতে এ অধ্যায় শাখা প্রশাখা বিস্তার করে গোটা বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল হিমালয়ের চূড়ায়। আজকের পদ্মা সেতুর আবুল ও রেলের কালো বিড়াল সুরঞ্জিত গাজি গোলাম মোস্তফার কম্বল চুরিরই ’গর্বিত’ সন্তান। এ লাইনে মোহম্মদ এরশাদ হোসেনের সাফল্য ছিল অনেকটা নীরব বিপ্লবের মত। বলতে গেলে গাজীর বপিত বীজ হতে এরশাদ বিশাল এক বটগাছের জন্ম দিয়েছিলেন। এবং এ বটের ছায়ায় রাজনৈতিক চোরের দল অনেকটা নীরবে নিঃশব্দে রূপান্তরিত হয়েছিল রাষ্ট্রীয় ডাকাত দলে।

Hussain Muhammad Ershad

এরশাদ মন্ত্রিসভার অনেকের সাথে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ভাবে জানা শোনা ছিল। গৃহপালিত এসব মন্ত্রিদের মুখ হতেই শোনা জেনারেলের দুর্নীতির লোমহর্ষক উপাখ্যান। এরশাদ নিজ হাতে অর্থকড়ি নিতেন না। টাকা পয়সা দুই উপায়ে জমা হত তার ভাণ্ডারে। এক, রওশন এরশাদ। সরকারী সূতিকাগারে জন্ম নেয়া কোন প্রকল্পই রওশন এরশাদকে বাইপাস করার সুযোগ পেতনা। বাকিতে কাজ করতে অভ্যস্ত ছিলেন না এই মহিলা। এমনকি দলের মন্ত্রীরাও ব্যক্তিগত প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্বে রওশনের পাওনা পরিশোধ করতে বাধ্য ছিলেন। এর হেরফের হলে মধ্যরাতে সক্রিয় হতেন স্বামী এরশাদ। মন্ত্রিদের ফোন করে ঘুম ভাঙ্গাতেন এবং মনে করিয়ে দিতেন মিসেসের গোস্বার কথা। ঐ আমলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সবটাই নির্ভর করত রওশন এরশাদের গোস্বা দূরীকরণের উপর। অবাধ্য মন্ত্রীদের শায়েস্তা করার জন্য জেনারেল নিজেই মিডিয়ার সাথে যোগাযোগ করতেন এবং তাদের হাতে তুলে দিতেন মন্ত্রীদের নাম ও তাদের দুর্নীতির বিবরণ। জেনারেল এরশাদের মূল আয় ছিল বিদেশ ভিত্তিক কমিশন। আর্ন্তজাতিক দরপত্র ও বিদেশি পণ্য দেশীয় বাজারে বিপনন করতে চাইলে এরশাদের বিদেশি একাউন্টের স্বাস্থ্য স্ফীত করা ছিল জরুরি। মন্ত্রিদের মতে স্ত্রী রওশন এরশাদকে অর্থকড়ি আদায়ের স্বাধীনতা দিতেন বিশেষ কিছু কারণে। তার অন্যতম নিজ রক্ষিতাদের ভোগ করার মূল্য। রক্ষিতাদের সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিলনা। এদের পিছনেও রাষ্ট্রকে অনেক অর্থ ব্যায় করতে হত। পরবর্তীতে যারা এরশাদকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে উৎখাত করার আন্দোলনে নেমেছিলেন তাদের প্রায় সবাই গোপনে জেনারেলের অনুকম্পায় নিজেদের ভাগ্য গড়েছিলেন। এদের তালিকায় এমন কিছু নাম আছে যা প্রকাশ পেলে চমকে উঠতে হবে।

হোসেন মোহম্মদ এরশাদ জাতিকে আবারও চমক উপহার দিয়েছেন। সদলবলে মহাজোটের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে নতুন করে প্রমান করেছেন বাংলাদেশের রাজনীতির প্রায় সবটাই বেশ্যাবৃত্তি এবং এ লাইনের তিনি সফল দালাল। এরশাদ কোন দলে যোগ দেবেন, কার সঙ্গে জোট বাঁধবেন আর কার সঙ্গ ত্যাগ করবেন তা একান্তই তার নিজস্ব ও দলীয় ব্যাপার। এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার মাঠ রাজনীতিবিদদের জন্য কেউ বন্ধ করেনি। কিন্তু এ পথে হাঁটার জন্য এরশাদ যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তা একান্তই একজন দেহপসারিনী দালালের পথ। বিশ্ব বেহায়া উপাধি হতে অনেকটাই নিরাপদে ছিলেন নিজের পার্টনার-ইন-ক্রাইম শেখ হাসিনার কারণে। কিন্তু এ যাত্রায় ’থুথু এরশাদ’ উপাধি বলতে গেলে নিজেই নিজের কপালে এঁটে দিলেন। এরশাদকে থুতু আখ্যা দিলে আমি বলবো থুতু কে অপমান করা হবে। থুতুর একটা রং আছে, পরিচয় আছে, ধর্ম আছে। কিন্তু হোসেন মোহম্মদ এরশাদ তার ধারে কাছেও নেই। এরশাদের মত একজন প্রফেশনাল মহিলাবাজ, রাষ্ট্রীয় ডাকাত অন্য একজন নির্লজ্জ ক্ষমতালিপ্সু দস্যুর সাথে আঁতাত করবে এতে যারা অবাক হয়েছেন তাদের উচিৎ হবে দেশীয় রাজনীতির ধারাপাত পড়ে দেখা। এরশাদকে আমি অভিনন্দন জানাই, কারণ ১৫ কোটি জনগণের ৩০ কোটি খোলা চোখের সামনে এ ধরণের বেশ্যাবৃত্তি করাও এক ধরনের সাফল্য।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন