"বাকশালীদের দিন শেষ, তারেক জিয়ার বাংলাদেশ"

Submitted by WatchDog on Monday, November 18, 2013

ভিন্ন জনের ভিন্ন কারণ থাকতে পারে, আমার জন্য আওয়ামী বিরোধিতার মূল কারণ ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস। বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশের মত জনসংখ্যাবহুল তৃতীয় বিশ্বের দেশকে অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়াতে চাইলে চাই উন্নত বিশ্বের সার্বিক সহযোগীতা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দাবিদার বৈরী দুটি রাজনৈতিক দল এ কাজে কতটা সফল তার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। দাতা গুষ্টির কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে বিদেশ হতে দয়া দাক্ষিণ্য এনে বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন একটা উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারেনা। তার জন্য চাই উচ্চাকাক্ষী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। যারা সুদকে অভিশাপ আখ্যা দিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা নিয়ে আহাজারি করছেন তাদের বেশির ভাগই দলকানা নেত্রীদাস অথবা নেত্রীকানা দলদাসের সদস্য। নেত্রী সুদখোর বলেছেন বিধায় এসব দাসদের মুখেও সুদখোরের গিবত। অবস্থা রাতারাতি পালটে যাবে যদি আগামীকাল একই নেত্রী ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে অন্যভাবে আখ্যায়িত করেন। এমনটাই আজকের বাস্তবতা। গোটা বিশ্বের অর্থনীতি চলে সুদের উপর। আমাদের ব্যবসা বানিজ্য, বিনিয়োগ, দৈনন্দিন জীবন, রিটায়ারমেন্ট সহ সবকিছু এখন ব্যাংক ভিত্তিক। ব্যাংক মানেই সুদ। তাই সুদ নিয়ে রাজনীতি করার রাস্তা সীমিত। নেত্রীরা বিদেশ হতে অল্প সুদে ঋণ এনে দেশে বেশি সুদে লগ্নি খাটান এবং তাতে যা লাভ হয় তা দিয়ে সরকার চালান। মন্ত্রি, প্রধানমন্ত্রী সে সরকারেরই অংশ। এ অর্থে তারা সবাই সুদখোর। ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে সুদখোর বলে সুদকে অবজ্ঞা করা এক ধরণের হিপোক্রেসি এবং নোংরা রাজনীতি। আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতির প্রতি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা অনেক পুরানো রোগ। এ কাজে লবিং করার জন্য দেশে অলিখিত মন্ত্রনালয় কাজ করে থাকে। আগের টার্মে আজকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীরের নেত্রীত্বে সরকারী অর্থায়নে গোটা এক বাহিনী নিয়োজিত ছিল পদক যোগারের কাজে। গোটা দশেক পিএইচডি সে মিশনেরই বাই-প্রোডাক্ট। এ টার্মে পদক আহরণে ভাটা লাগে মূলত ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসের কারণে। এবং এখানেই শুরু ইউনূস সাগা। গ্রামীন ব্যাংকের সাথে যৌথভাবে নোবেল পাওয়াটা যেন ছিল বেচারার জন্য রাষ্ট্রীয় অপরাধ। পাশাপাশি আর্ন্তজাতিক ভাবে স্বীকৃত চোর আবুল হোসেনকে দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেবল নিজের অযোগ্যতাই প্রমাণ করেননি বরং প্রমাণ করেছেন রাষ্ট্রীয় চোরদের আসল অভিভাবক তিনি নিজে। ইউনূস দেবতা নন। তিনি নিজেও তা দাবি করেন না। তাকে দেবতার আসনে বসানোর কাজে গোপন কোন মিশনও কাজ করছেনা। বরং উন্নত বিশ্ব সহ বাকি বিশ্বের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা ই ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে কাছে টানছেন এবং আগ্রহ প্রকাশ করছেন ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসায়। আজকে ডক্টর মোহম্মদ যে আসনে বসে আছেন তার কাছাকাছি পৌঁছতে শেখ হাসিনাকে হিমালয় পাড়ি দিতে হবে। এমনটা বুঝতে পেরেই হয়ত ইউনূসের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রের সবকটা ইনস্টিটিউশনকে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনা ইদানিং যা করছেন তা নিয়ে যারা চিন্তিত তাদের ভাল করেই জানা আছে দেশীয় রাজনীতির দুই রাজনৈতিক শক্তি একে অপরের পরিপূরক, মুদ্রার এ পীঠ ও পীঠ। দুই মহিলার একজনকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবো অথচ হরতাল, জ্বালাও, পোড়াও দেখতে চাইব না এ অলীক ও অবাস্তব চাওয়া। রাজপথের লাশ নিয়ে আজকে যারা আহাজারি করছেন তারা আসলে মৃতদের জন্য আহাজারি করছেন না, করছেন লাশকে পুঁজি বানিয়ে নির্বাচনী মুনাফার জন্য। এতটাই রুগ্ণ আমাদের রাজনীতি এবং এর সাথে জড়িত দলদাসের দল।

তারেক জিয়ার অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলার রায় বেরিয়েছে। অনেকের জন্য এ রায় ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত। হয়ত খোদ তারেক জিয়ার আইনজীবীরাও এমনটা আশা করেননি। যার প্রমান রায়ের আগে বিবাদী পক্ষের প্রতিবাদের প্রস্তুতি। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং এর উচ্চ নিম্ন আদালত সরকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরকার প্রধান এবং উনার লেফটেন্যান্টদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার কাজে আদালত ক্ষমতাসীনদের সাথে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করে থাকে। তাই সবাই আশা করছিল তারেক জিয়াকে শাস্তি প্রধানের মাধ্যমে আদালত আরও একজন শত্রু নিধনে সরকার প্রধানকে সহযোগীতা করবে। ঠিক যেমনটা করা হয়েছিল ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসের বেলায়। কি এমন ঘটল যার দরুন নিম্ন আদালতের বেতনভুক্ত কর্মচারী বিচারক মহাশয় সরকারকে হতাশ করলেন? এখানে দুটি সম্ভাবনা থাকতে পারে। এক, এ রায় সরকারের নতুন কোন মিশনের অংশ; দুই, বিচারক মহাশয় নির্বাচনী হাওয়া অনুভব করছেন এবং আগ বাড়িয়ে নিজের পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্যে এ রায় দিয়েছেন। সন্দেহ নেই বিএনপি ক্ষমতা ফিরে পেলে এই বিচারকের স্থান হবে উচ্চ আদালতে। বিচার ব্যবস্থার এই কলঙ্কিত অধ্যায় ধারাবহিকভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায়। সরকারের হাতে আরও ১৩ মামলার অস্ত্র আছে যা দিয়ে তারেক জিয়াকে ঘায়েল করা যাবে। হতে পারে অর্থ পাচার মামলার রায় সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ যার মূল আর্কিটেক্ট আমারের প্রতিবেশী। তবে একটা বাস্তবতা এখানে উল্লেখ না করলে তারেক জিয়া গংদের প্রতি অবিচার করা হবে। খাম্বা মামুনের মাধ্যমে জিয়া পরিবারের দুর্নীতির যে চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছিল তা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে বর্তমান সরকারের লুটপাটের কাছে। সরকারের অর্থমন্ত্রী বলছেন লুট হয়ে যাওয়া ৪০০০ কোটি টাকা এমন কোন অংক নয় যা নিয়ে সময় ব্যায় করতে হবে। স্টক মার্কেট এবং কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে যে টাকা পকেটস্থ করা হয়েছে তার তুলনায় খাম্বা মামুনদের খাম্বা চুরি মহাসমুদ্রে এক ফোটা বৃষ্টি মনে হতে বাধ্য। তারেক জিয়াকে দুর্নীতির দায়ে জেলে নিতে সরকারের কালো বিড়ালদের ক্ষমতা হারানোর পরবর্তী বাস্তবতাও চিন্তা করতে হবে। হতে পারে এটাও একটা কারণ।

বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক ক্ষমতা দুটি পরিবারের জন্য সংবিধিবদ্ধ সম্পত্তি। পাকিস্তান আমলে যা ছিল ২২ পরিবারের তা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে এসে ঠেকেছে দুইয়ে। ছাগলের ৩নং বাচ্চা হিসাবে আমরা ১৪ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৮ জন নাগরিক চাইলে এ নিয়ে গর্ব করতে পারি। 'বাকশালীদের দিন শেষ, তারেক জিয়ার বাংলাদেশ...'আদালতে শত শত শিক্ষিত আইনজীবীদের এই একটা স্লোগানই নির্ধারন করে আমাদের গন্তব্য। অন্তত আগামী পাচ বছরের জন্য।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন