একটি গাড়ি ও একজন নিবাস চন্দ্র মাঝির কেচ্ছা

Submitted by WatchDog on Tuesday, October 1, 2013

Bangladesh Police

প্রথম প্রেমের মত প্রথম গাড়িটাও ছিল আমার প্রথম প্রেম। যেখানেই যাই ছায়ার মত কাছাকাছি রাখি। পূর্ব উপকূলের শহর নিউ ইয়র্ক ছেড়ে যেদিন আমেরিকার হিংস্র পশ্চিমের দিকে রওয়ানা দেই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ১৯৯৪ সালের পুরানো সেডান গাড়িটা। বয়সের ভারে নূহ্য, কয়েক হাজার মাইল ড্রাইভ করার মত অবস্থায় নেই। কেনার মত তাৎক্ষণিক গ্রাহক খুঁজে পাওয়াও প্রায় অসম্ভব। আবার রাস্তায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে দিলে ইন্সুরেন্স এবং রেজিষ্ট্রেশন ওয়ালারা গন্ধ শুকে পিছু নেবে এবং জরিমানা সহ মুখোমুখি করবে হরেক রকম ঝামেলার। তাই জেক্সন হাইটসের এক বন্ধুর কাছে গছাতে বাধ্য হই। তাও এক মাসের জন্য। নতুন জায়াগায় যেনতেন ভাবে খাপ খাওয়ানোর পর ধর্না দিতে বাধ্য হই ফেলে আসা পুরানো প্রেমের দুয়ারে। নতুন জায়গায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে দুয়েকটা বাস ছাড়া আর কিছু নেই। গাড়ি ছাড়া এক কদম সামনে যাওয়ার বিকল্প নেই। তাই বড় অংকের ভাড়া গুনে সুদূর নিউ ইয়র্ক হতে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হই গাড়িটাকে। বছর না ঘুরতে ভাগ্যের চাকায় কিছুটা রং লাগার কারণে নতুন গাড়ি কিনতে হল। দিন যায়, বছর ঘুরে আসে এবং পুরানো গাড়িটাকে বাসার সামনে সাজিয়ে রাখি। ইনসুরেন্স ও মোটর ভেইক্যালস কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত টোল খাওয়াই। চাইলেও বিক্রি করতে পারিনা হরেক কারণে। বুক ভরা মায়া তার অন্যতম। একদিন সকালে হঠাৎ করে আবিস্কার করি গাড়িটা জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। ছাঁৎ করে উঠল বুকটা।

পুলিশকে খবর দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাই দিলাম এবং প্রায় এক ঘন্টা পর ওরা এসে দরজায় কড়া নাড়ল। বর্ণনা করার মত তেমন কিছু ছিলনা। শুধু জানালাম আমার প্রথম প্রেম আমাকে ফাঁকি দিয়েছে। পুলিশ শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করল এবং জানাল ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। গাড়ি ও আমার বিস্তারিত নিয়ে এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওরা চলে গেল। পুরানো অনেক স্মৃতি দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে এল বুক হতে। বিকেল না হতেই ভুলে গেলাম ১৯৯৪ সালে তৈরী টয়োটা সেডান গাড়ির মালিক ছিলাম আমি। রাত তখন ৮টা। রাতের খাবারের জন্য তৈরী হচ্ছি। অসময়ে ফোন বাজতে বিরক্ত হলাম। অপর প্রান্তে অচেনা গলার সূরের মূর্ছনায় বিমোহিত হলাম। ভাবলাম হয়ত নতুন কোন ইনস্যুরেন্স কোম্পানী পণ্য বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। ভুল ভাঙ্গতে দেরি হলনা। বের্ণালিয়ো কাউন্টি পুলিশ অফিস হতে কেউ একজন খুঁজছে আমাকে। নিজের পরিচয় দিতে জানালো এখুনি আসতে হবে ব্রিজ স্ট্রীটের উপর ম্যাগডোনাল্ডসের পার্কিং লটে। পাওয়া গেছে গাড়িটা। দশ মিনিট ড্রাইভ করে শহরের দক্ষিণ প্রান্তে আসতেই দেখা পেলাম পুলিশ বহরের। অসংখ্য গাড়ি। লাল লাইটের ঘূর্ণায়মান আলোতে বিভীষিকার সৃষ্টি করেছে চতুর্দিকে। গোটা এলাকা সীল করা। সামনে এগিয়ে নিজের পরিচয় দিতে জামাই আদরে এসকর্ট করে নিয়ে গেল গন্তব্যস্থলে। ম্যাকডোনাল্ডসের ঝলমল আলোতে ততোধিক ঝলমল করছে আমার লাল রঙের প্রেয়সী। টুয়েন্টি টু ক্যালিবার পিস্তল, হিরোইন, গাজার পুটলি ও কনডম সহ হরেক রকম উপাদান পাওয়া গেল গাড়ির ট্রাংকে। পুলিশ জানাল টের পেয়ে আসামিরা পালিয়েছে। কিন্তু পাকিং লটের সার্ভেলেন্স ক্যামেরায় পাওয়া গেছে ওদের চেহারা যা দেখে পুরানো রেকর্ড হতে সনাক্ত করা গেছে তাদের পরিচয়। ধরা পরাটা এখন সময়ের ব্যাপার। এবং সপ্তাহ না ঘুরতে হাজির করা হল আদালতে।

নাম নিবাস চন্দ্র মাঝি হলেও ভদ্রলোক কাজে মাঝি নন। জন্ম মেঘনা পাড়ের চাঁদপুরে। অবশ্য মেঘনা নদীতে নাও (নৌকা) বাওয়ার প্রয়োজন হয়নি কোনদিন। কারণ তিনি সিলেট মেট্রো পুলিশের বড় কর্তা, কমিশনার। কমিশনার অনেক বড় মাছ, বাংলাদেশ পুলিশের সাধারণ সিপাহিদেরও প্রয়োজন হয়না গা গতরে কামলা দেয়ার। কারণ পুলিশ বাহিনী মাস্টার অব দেয়ার ওউন ডোমেইন, ভাগ্য গড়ার অলৌকিক কারখানা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহন মাত্রই ধর্মণিরপেক্ষতার ধারক বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশেষ একটা ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পরে। যার প্রতিফলন দেখা যায় প্রশাসনে। ঐ বিশেষ ধর্মের নাগরিকদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে কুড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয় প্রশাসনের হোমরা চোমড়া পদে। হতে পারে দল ও নেত্রীর প্রতি শর্তহীন আনুগত্যই এনে দেয় এসব ’সাফল্য’। সেই সুবাদে নিবাস চন্দ্রদের এখন ভরা যৌবন। মেট্রো পুলিশের হাল ধরতে বাবু নিবাস চন্দ্রকে যেদিন সিলেটে হিজরত করানো হয় সেদিন হতেই শুরু হয় শহরের আইন শৃংখলা ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। এর আগে তিনি ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি। সেখানের ইতিহাস আরও ’গৌরবময়’। আইন শৃংখলার ডিজিটাল অর্থ নাকি পকেট শাসন, বলা হয় ব্যাখ্যাটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জনৈক আইটি বিজ্ঞানীর বহুদিনের গবেষণার ফসল। সে যাই হোক, কমিশনারের কাজ যদি কমিশন খাওয়া হয় বাবু নিবাস চন্দ্র মাঝি সাফল্যের সাথে পালন করে যাচ্ছেন নিজ দায়িত্ব। তিনি বদলি বাণিজ্যের বাজার খুলেছেন থানায় এবং এক লাফে তিন গুন করেছেন রেট। মাল দিয়ে পকেট সন্তুষ্ট করতে অক্ষম হলে সাথে সাথে ব্যবহার করেন বদলি অস্ত্র। এবং এ অস্ত্রের খড়গ হতে বাঁচতে সাব-ইন্সপেক্টরের দর ঠিক করেছেন মাথাপিছু দেড় লাখ ও কনস্টেবলের ত্রিশ হতে পঞ্চাশ হাজার। অবশ্য এসব দরের অনেকটাই নির্ভর করে ফাঁড়ি ভেদে। একেক ফাঁড়ির দর একেক রকম। মোটর সাইকেল বানিজ্য বলতে একটা খাত আছে তা প্রথম ইন্ট্রুডিওস করেন সিলেট মেট্রোতে। যাকে পাও তাকে ধর এবং জামাতি কানেকশন অথবা ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে লুটে নাও, এমনকি ১০০ টাকা হলেও - মোটর সাইকেল বাণিজ্যের এমনটাই মৌলিক ধর্ম। শোনা যায় বাবু নিবাস চন্দ্র স্থানীয় ডাকাতদের সাথে আঁতাত করে ডাকাতি প্রতি কমিশন ভক্ষণ করেন। যার কারণে সিলেট শহরের আইন শৃংখলা পরিস্থিতিতে ঘটছে ডমিনো এফেক্ট।

বাবু নিবাস চন্দ্রের বস জনাব মখা আলমগীর এবং জনাব মখা আলমগীরের বস জনাবা শেখ হাসিনা। আমরা সবাই জানি শেখ হাসিনার নির্দেশ ও আদেশ ছাড়া দেশের একটা পিঁপড়াও পা ফেলার অধিকার রাখেনা। এই তিনিই দাবি করছেন, আমেরিকা ও ইউরোপ সংসদ এবং মন্ত্রিসভা সচল রেখে নির্বাচন করতে পারলে আমরাও পারব। কারণ তাদের মত আমরাও নাকি গণতন্ত্রের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমার মত ম্যাঙ্গোদের একটাই প্রশ্ন, কোন গণতন্ত্র, নিবাস চন্দ্রের গণতন্ত্র? মাতৃভূমিকে উলঙ্গ করে সিরিয়াল ধর্ষকের ভূমিকায় নামা এসব নিবাস চন্দ্রদের হাত ধরেই কি জনাবা হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রীর স্বাদ আহলাদ পূরণ করার স্বপ্ন দেখছেন?

http://www.mzamin.com/details.php?nid=NzM1MzI=&ty=MA==&s=MTg=&c=MQ==

ভালো লাগলে শেয়ার করুন