'মহামান্য' আদালতের কেনিয়ান ম্যারাথন...

Submitted by WatchDog on Friday, August 27, 2010

Justice System in Bangladesh

ভেতরের খবর না রাখলে বাইরে হতে মনে হবে বাংলাদেশে হয়ত কোন ক্যূ ঘটে গেছে। সেনা ক্যূ ও মার্সেনারীদের ক্যু’র সাথে আমাদের কমবেশি পরিচয় আছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে বিচার ব্যবস্থা একটা দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিপতি বনে যায় এমন উদাহরণ খুবই বিরল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ২০০৮ সালে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে নয় বরং ভোট দিয়েছে দেশের উচ্চ আদালতকে। শুরুটা যদিও ইতিহাস দিয়ে কিন্তু আদালতের লম্বা হাত এখন জানজট হতে শুরু করে বোরখা পর্যন্ত। ’মহামান্য’ বিচারকদের পুণ্যস্থান আদালত অবমাননা নিয়ে মামলা হচ্ছে দফায় দফায়। ক্ষমতাসীন দল ছাড়া দেশের বাকি সব রাজনৈতিক দল আদালতের বদান্যতায় এখন দৌড়ের উপর। আওয়ামী লীগ এবং এর নেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য ও কার্যক্রমকে যারা কাছ হতে অবলোকন করেছেন তাদের জানা থাকার কথা বিরোধী দল নিয়ে নেত্রীর ফিলোসফি। বিগত বছরগুলোতে শেখ হাসিনা যা বলেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত তা বাস্তবায়ন করছে অনেকটা কেনিয়ান দৌড়বিদদের ম্যারাথন দৌড়ানোর কায়দায়। বিচার ব্যবস্থা কি তাহলে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের স্বর্গভূমি হয়ে গেল? গত এক মাসে উচ্চ আদালতে যা হয়েছে তার হিসাব মেলালে মনে হবে বিচারকগণ কত দ্রুত শেখ হাসিনার মন জয় করা যায় সে প্রতিযোগীতায় নেমেছেন।

৭২ হতে ৭৫ পর্যন্ত শেখ মুজিবের শাসন এবং এরশাদ উত্তর আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর ছাড়া বাংলাদেশের সব শাসন এখন অবৈধ (খালেদা জিয়ার শাসন! হুম, না হাসলেও চলবে বোধহয়)। এমনটাই মনে করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। শাসনতন্ত্রের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে জেনারেল জিয়াকে কবর হতে আর জেনারেল এরশাদকে ক্ষমতার হানিমুন হতে টেনে ফাঁসিতে ঝুলানোর রাস্তা পাকা করে দিয়েছে আইন ও বিচার ব্যবস্থা। এখন দেখার বিষয় সে পথে ক্ষমতাসীন দল কতটা পথ পাড়ি দেয়। নিন্দুকেরা বলেন ১৯৭২ সালে পাকিস্তান ফেরত শেখ মুজিবের ক্ষমতা গ্রহনও ছিল অগনতান্ত্রিক। অবিভক্ত পাকিস্তানের ৭০’এর নির্বাচনে দেশের জনগণ এই নেতাকে ভোট দিয়েছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যে, বাংলাদেশের সরকার অথবা রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার জন্যে নয়। নিন্দুকেরা আরও বলেন ৭৪-৭৫’এর বাকশালও ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নির্লজ্জ লংঘন। এ দেশের মানুষ ৭২’এর শেখ মুজিবকে শুধু জাতির পিতা কেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার সাথে তুলনা করতেও দ্বিধা করেনি। বাকশাল নিয়েও জনগণ রাস্তায় নামেনি। কারণ এগুলো ছিল সময়ের দাবি এবং জনগণ তা মেনে নিয়েছিল খুব সহজে। চাহিদার প্রয়োজনে আমাদের সড়ে আসতে হয় বই-কিতাব হতে, শাসনতন্ত্রও এর বাইরে নয়। জনগণের জন্যে শাসনতন্ত্র, শাসনতন্ত্রের জন্যে জনগণ নয়, আমাদের আদালত হয়ত ভুলে গেছেন এ সহজ সত্যটা। প্রতিদিন যে হারে রিট হচ্ছে এবং আদালত যতটা দ্রুততার সাথে এর ফয়সালা দিচ্ছে যদি শুনি আদালত নির্ধারণ করে দিয়েছে এখন হতে আমাদের কিভাবে টয়লেট করতে হবে মোটেও অবাক হবনা। প্রাসঙ্গিক ভাবে প্রশ্ন জাগে, প্রধান বিচারপতির দরজায় যে ভদ্রলোক লাথি মারল তাকে কি আদালত অবমাননার দায়ে গ্রেফতার করা হবে না? নাকি বংগবন্ধু সৈনিকদের লাথি খেলে আদালত ধন্য হয়, পূণ্য হয়? বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১৮ মাসের শাসন নিয়ে আদালতে কেউ রিট করেছে বলে শোনা যায়নি। রহস্যটা কি? আদালতের দৃষ্টিতে ঐ সরকারও যদি অবৈধ হয় (যা হওয়াটা স্বাভাবিক) তাহলে কি হবে ঐ ’অবৈধ’ সরকারের গর্ভে জন্ম নেয়া শেখ হাসিনার বর্তমান ’স্মরণকালের সেরা’ গণতান্ত্রিক সরকার যার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ’মহামান্য’ আদালত ?

ছবিটা দেখে খুব ভাল লাগল। ২১শে আগস্ট সভ্যতার বর্বরতম হামলার সাথে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউককে। আইনের হাত অনেক লম্বা এবং এ হতে কারও রেহাই নেই, এমনটাই আদালতের দাবি এ গ্রেফতার নিয়ে। কিন্তু সে ভাল লাগা নিমিষেই তিতে হয়ে গেল অন্য একটা ছবি দেখে। আওয়ামী লীগ নেতা ইকবালের সাঙ্গপাঙ্গরা পিস্তল উচিয়ে গুলি করছে প্রতিপক্ষের মিছিলে। ওরা ছিল ৪জন। যদিও বিএনপি তারপরও ছিল রক্ত-মাংসের মানুষ। এদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল আওয়ামী লীগের গুলি, যার নেত্রীত্বে ছিল আওয়ামী নেতা ইকবাল ও নুরন্ননবী শাওন। রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং ’মহান’ আদালতের সিদ্ধান্ত অব্যাহতি দেয়া হয়েছে খুনিদের। যদিও তা প্রকাশ করেনি তবে আদালতের সিদ্ধান্ত বিশ্লেষন করলে আমাদের মেনে নিতে হবে শেখ হাসিনাকে মারার চেষ্টা রাষ্ট্রীয় অপরাধ হলেও বিএনপিওয়ালদের মারা আইনের চোখে জায়েজ। তবে কি আমরা ধরে নেব বঙ্গবন্ধু সৈনিকদের হাতে মৃত্যু আমাদের ধন্য করে, পূণ্য করে? খুনি ইকবাল আর ডাবল খুনি শাওনের অব্যাহতি কি তাই প্রমান করেনা?

খবরটা মিডিয়াতে কেন যথাযোগ্য আদর পায়নি তার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রীর তনয় জয় ওয়াজেদ সস্ত্রীক দোহা যাওয়ার পথে এয়ারপোর্টে সীল মারতে দেরী করেন এসআই হুমায়ুন খালেদ। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনে এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় এসআই খালেদকে। অভিযোগ, এসআই খালেদ জয় ওয়াজেদের ভিআইপি মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। জনাব খালেদের কপালে সামনে কি আছে ’মহামান্য’ আদালত রায় দেয়ার আগেই আমরা আমজনতা তা বলে দিতে পারি। কারণ এটা বাংলাদেশ। এখানে বিচারক মানে নেত্রীদের গৃহপালিত সেবাদাস, আদালত মানে প্রতিপক্ষ আটকানোর রাজনৈতিক খোঁয়াড়।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন