মার্ডার অন দ্যা বার্লিন এক্সপ্রেস। শনিবারের গল্প...

Submitted by WatchDog on Saturday, July 24, 2010

Berlin

- কেউ একজন কথা বলেতে চাইছে তোমার সাথে। ইভান গ্রিগরিয়েভিচ যেতে বলেছেন।
ইসাবেলার কর্কশ কথাগুলো শুনে একটু অবাক হলাম। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ডীন আফিস সাধারণত কাউকে তলব করে না। একটু চিন্তিত হলাম। সেমিস্টারের রেজাল্ট ভাল, মাতলামির পুলিশি রেকর্ড নেই, স্কলারশীপ নিয়েও প্রশ্ন থাকার কথা নয়। তারপরও কেন ডীন অফিস তলব করছে ভেবে পেলাম না।
- চারটা বেজে গেছে। অফিস নিশ্চয় বন্ধ। সকালেই না হয় দেখা করব।
- তুমি বুঝতে পারছো না, বিষয়টা জরুরী। তোমাকে এখুনি যেতে হবে। ওরা অপেক্ষা করছে।
- ওরা? তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছো ডীন ছাড়াও অন্য কেউ আছে ওখানটায়?
- গিয়েই দেখ।
শুধু গলার স্বরে নয়, ইসাবেলার চোখে মুখেও ফুটে উঠল এক ধরণের বিরক্তি। ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে ঝড়ো গতিতে বেরিয়ে গেল সে।

বসন্তের শুরু কেবল। প্রকৃতিতে যদিও ছোঁয়া লাগেনি কিন্তু চোখ কান খোলা রাখলে বুঝা যায়, ওটা আসছে। এমনটাই হয় পৃথিবীর এ অংশে। সাত মাস শীতের কঠিন রাজত্ব শেষে হুড়মুড় করে চলে আসে বসন্ত। বলতে গেলে চব্বিশ ঘন্টার ব্যবধানে বদলে যায় প্রকৃতি। গাছপালা ভরে যায় ফুলে ফলে। জুলাই আগস্ট মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গের আসল চেহারাটা কেমন হয় তা দেখার সৌভাগ্য হয়নি এখনো, যদিও এ শহরে আছি সাত বছরের উপর। শেষ কবে এ দেশে গ্রীষ্মের ছুটি কাটিয়েছে মনে করতে গেলে ফিরে যেতে হবে আরও উত্তরের শহর মুরমুনস্ক। গরম এলেই ছুটে যেতে হয় মহাদেশের আরও পশ্চিমে। সেন্ট পিটার্সবার্গ হতে পশ্চিম বার্লিন হয়ে নেদারল্যান্ডের হোক-ভ্যন-হল্যান্ড বন্দর। ওখান হতে ফেরিতে চড়ে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ডের হারউইচ বন্দর। স্প্রিং টার্ম শেষ। মনে মনে তৈরী হচ্ছি নতুন যাত্রার। এ সময়টায় ডীন অফিসে তলব ভাল ঠেকল না। নিশ্চয় কোথাও কোন গোলমাল হয়েছে।

- তুমি কি চেন মেয়েটাকে? দেখা হয়েছিল কোথাও?
টেবিলের উপর ছুড়ে মারল ছবিটা। ইভান গ্রিগরিয়েভিচ ছাড়াও আরও দুজন। দুজনের পরনেই কালো ট্রাঞ্চ কোট।
- ওরা লাল দালানের লোক। একটা কেস নিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী।
লাল দালান মানে কেজিবি। চক্কর দিয়ে উঠল মাথা। বসে পরলাম খালি চেয়ারটায়।


শেষ রাতের দিকে থেমে গেল ট্রেনটা। সেন্ট পিটার্সবার্গ হতেই ঝিমাচ্ছিল। মনে মনে তৈরী ছিলাম থামার জন্যে। শীতের তান্ডবলীলা এ বছর অস্বাভাবিক রকম ভয়াবহ। বছরের শুরুতে একমাস বিরামহীন তুষারপাত হয়েছে। ফেব্রুয়ারী আসতে না আসতে তাপমাত্রা হিমাংকের নীচে ৪০ ডিগ্রী পর্যন্ত নামতে শুরু করেছে। স্থবির হয়ে গেছে জনপদ। এমন শীতে ৮০০ কিলোমিটার দূরের মস্কো যাওয়া দূরে থাক ঘরের বাইরে যাওয়া পর্যন্ত নিরাপদ নয়। অথচ আমাকে যেতে হবে পশ্চিম বার্লিন। পর্দা সরিয়ে জানালার বাইরে তাকাতেই চোখে পরল দৃশ্যটা। বরফের সমুদ্রে ডুবে গেছে পৃথিবী। যতদূর চোখ যায় শুধু বরফ আর বরফ। বরফ শুভ্রতার কাছে হার মেনেছে রাতের অন্ধকার। চারদিকে ফাটাফাটির জোৎস্না। বেমানান দেখাচ্ছে লাশের মত থেমে যাওয়া বার্লিন এক্সপ্রেস ট্রেনটা।

কেউ না বললেও বুঝতে অসুবিধা হল না আটকে গেছি আমরা। গার্ডের সাথে কথা বলে জানা গেল লিথুনিয়ার রাজধানী ভিলনিউসের খুব কাছাকাছি কোথাও থেমে আছে ট্রেনটা।

... চলবে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন