'যেদিন পরবে না মোর পায়ের চিহ্ন...'

Submitted by WatchDog on Saturday, May 18, 2013

Bangladeshi

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবসর প্রাপ্ত একজন সেনা অফিসারের সাথে দেশ নিয়ে কথা বলছিলাম। মেরুকরণের সুনামিতে ভেসে এই জেনারেল কোন বন্দরে ঠাঁই নিয়েছেন কথা বার্তায় কিছুটা হলেও আন্দাজ করা গেছে। বিত্ত বৈভবের সমুদ্রে ভাসছেন তিনি। কেবল দেশে নয়, বিদেশেও জমিয়েছেন সম্পদের পাহাড়। সরকারের সুনজর ছাড়া বাংলাদেশের একটা তেলাপোকাও অতিরিক্ত তেল শিকার করতে অক্ষম, এমনটাই আজকের বাস্তবতা। জেনারেলদের জন্য বলতে গেলে দেশকে বিবস্ত্র করে দেয়া হয়েছে। যে যেভাবে পারছে শ্লীলতাহানি করছে। ডেসটিনি ও তার আড়ালে কতিপয় জেনারেলের আসমান সমান লুট তারই নির্লজ্জ উদাহরণ। এই জেনারেল আমাকে আশ্বস্ত করলেন ক্ষমতার মসনদ হতে শেখ হাসিনা কিছুতেই পিছু হটছেন না। তার মতে কেবল হেফাজত নয়, প্রয়োজনে গোটা বাংলাদেশকে মতিঝিল বানাতেও কার্পণ্য করবেন না তিনি। তার বহুমুখী কারণ দেখালেন।

এক; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে। এটা জানা হয়ে গেছে শেখ কন্যা সহ আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতাদের। তবে এ মুহূর্তে ক্ষমতা হারানোর শোকের চাইতে এর পরে যা ঘটবে তা নিয়ে চিন্তিত সবাই। অবৈধ অর্থের ভান্ডার খুলে সেনাবাহিনীর সব অফিসারকে যে সন্তুষ্ট করা যায়নি এমনটা নেত্রীও বুঝেন। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে এখনো অনেক অফিসার অন্ধ গলিতে হন্যে হয়ে আলোর সন্ধান করেন। এবং সুযোগ পেলে ১৫ই আগষ্টের চাইতেও নির্মম কিছু ঘটাতে প্রস্তুত তারা। নেত্রীর ভয়, যে রাতে নির্বাচনের ফলাফল বেরুবে সে রাতেই বিদ্রোহ করবে সেনাবাহিনী।

দুই; প্রতিবেশী উলফা নেতাদের ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়ে প্রণব বাবুকে খুশি করা গেলেও খুশি করা যায়নি আসামের এই জঙ্গী গ্রুপকে। তারা হায়েনার ক্ষুধা নিয়ে অপেক্ষা করছে শিকারের আশায়। আওয়ামী লীগের ভয়, নির্বাচনে ভরাডুবি হলে নতুন সরকার তাৎক্ষনিকভাবে সরিয়ে নেবে শেখ হাসিনার সরকারী নিরাপত্তা এবং আন্ধা ও বোবার কায়দায় উপভোগ করবে জঙ্গিদের পৈশাচিক উন্মত্ততা।

তিন; সদ্য গজিয়ে উঠা হেফাজতে ইসলামের কিলিং স্প্রী নেই। এসব করার মত ট্রেনিং অথবা মনমানসিকতা কোনটাই নেই কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক হুজুরদের। খালি মাঠ পেলে তারাও পশু হয়ে উঠতে পারে এবং প্রতিশোধ নিতে ধাওয়া করতে পারে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাদের পর্যন্ত। হেফাজতী ও জামাতি ফ্রন্টে লড়াই করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ভুলে গেছে ভয়াবহ এক সাপের কথা, হরকাতুল জেহাদ। এই জেহাদিদের অভিধানে মার্সি বলে কোন শব্দ নেই। দল হিসাবে আওয়মী লীগের চাইতেও নির্মম ও হিংস্র তাদের প্রতিশোধপরায়ণতা। নতুন সরকার চোখ বন্ধ করে রাখবে এবং দুয়ার খুলে আহ্বান জানাবে প্রতিশোধের হিসাবনিকাশে ভারসাম্য আনতে।

চার; খালেদা জিয়া। এই মহিলার প্রতিশোধের তালিকা এত লম্বা তার কিয়দংশ বাস্তবায়ন করতে গেলে শেখ পরিবারে শোকের মাতম চিরস্থায়ী হতে বাধ্য। ৪০ বছরের পাতানো সংসার দুমড়ে মুচড়ে উপড়ে ফেলা, বাড়ি হতে টেনে হিঁচড়ে উচ্ছেদ করা, দুই সন্তানকে দেশছাড়া, মামলা দিয়ে ব্যতিব্যস্ত রাখা, স্বামী জিয়াউর রহমানের নাম নিশ্চিহ্ন¡ করার চেষ্টা। কোন কিছু ভুলে যাওয়ার মানুষ নন এই নেত্রী। সময় এবং সুযোগ পেলে কড়ায় গণ্ডায় তা ফিরিয়ে দেবেন এ নিয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। ক্ষমতা পাওয়ার অতি অল্প সময়ে বাংলাদেশের মাঠ, ঘাট, শহর, বন্দর, শৌচাগার হতে খসে পরবে শেখ পরিবারের নামকরণ মহামারী। প্রতিশোধের তালিকায় নাম আসবে ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ি। তারপর বাকি সব। এখানেও প্রশ্ন আসবে প্রতিশোধ ভারসাম্যের।

পাচ; নগ্নভাবে উন্মোচিত হবে পাচ বছরের পারিবারিক লুটপাটের কালো অধ্যায়। পদ্মা সেতুতে আবুল হোসেনকে বলি বানিয়ে শেখ রেহানার ২%, সজিব ওয়াজেদ জয়ের ১%, সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলের ১% সহ ভিওআইপি ব্যবসা, কুইক রেন্টাল কমিশন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প কমিশন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড ও ইলিয়াস আলী গুমে শেখ পরিবারের সংশ্লিষ্টতা সহ বেরিয়ে আসবে শত শত অজানা কাহিনী। সাময়িক ভাবে হলেও এসব কাহিনী কবর রচনা করবে শেখ পরিবারের রাজনৈতিক অধ্যায়ে।

কেবল ক্ষমতা ধরে রাখা নয়, প্রাণে বেচে থাকতে চাইলে শেখ হাসিনাকে নির্বাচনে জিততে হবে। তাই জাতিসংঘ দূতের আগমন উপলক্ষে আলোচনার আহ্বান জানালেও প্রতিপক্ষের সাথে কোন আলোচনায় বসার পরিকল্পনা নেই প্রধানমন্ত্রীর। কারণ একটাই, রাজনীতির মিঠা পানিতে ক্ষমতা শিকার বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে, তাই প্রয়োজন ঘোলা পানির। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যত অবনতি হবে ততই লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। প্রয়োজনে মতিঝিলের মত রক্তের নতুন নদী খনন করা হবে, খালেদা জিয়ার পায়েও ডান্ডাবেড়ি পরানো হবে, তবুও ক্ষমতা হারানো যাবেনা, এমনটাই নাকি নেত্রীর সিদ্ধান্ত।

পদটীকাঃ ক্ষমতার পাগলা ঘোড়ায় চড়ে শেখ মুজিবের পিত্তের পাথর অপসারণ দিবস পর্যন্ত পালন করছেন অনেকে। আর কেউ মনে রাখুক শেখ হাসিনা নিশ্চয় ভুলে যাননি উনার পিতার মৃত্যুতে এদেশের একটা পাখি পর্যন্ত বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসেনি। শেখ পরিবারের বাকি সবার পতন হলে এ দেশের কেউ রাস্তায় এসে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে সে আশা একেবারেই দুরাশা। দুঃখজনক বাস্তবতা হল শেখ হাসিনারও পতন হবে। মানুষ হত্যা করে কেউ কোনদিন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পারেনি, শেখ হাসিনাও পারবেন না। সভ্যতার এ অমোঘ বাস্তবতা এড়ানোর ভাগ্য নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন স্বৈরশাসক জন্ম নেয়নি।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন