ওরা মারে, ওরা মরে...ওরা শীতলক্ষ্যার পানিতে ভাসে!

Submitted by WatchDog on Thursday, May 1, 2014

Bangladesh

সিদ্ধিরগঞ্জ। আর দশটা জনপদের মত বাংলাদেশের আরও একটা জনপদ। পালাবদলের সাথে এখানেও বদল হয় ভগবানদের চেহারা। সাথে বদল হয় তাদের দোসর থানা পুলিশ, এসপি, ডিসি, আইন, আদালত ও বিচারক। রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ পদে বসে অপরাধ ও অপরাধীদের লালন করার অভয়ারণ্য আমাদের জন্মভূমি। এখানে দস্যুবৃত্তির মাধ্যমে যেমন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করা যায়, তেমনি ক্ষমতার ছত্রছায়ায় প্রতিপক্ষকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে পোক্ত করা যায় লুটে পাওয়া সে ক্ষমতা। সিদ্বিরগঞ্জও এর বাইরে নয়। এখানেও ভগবান আছেন। তারা নিরাকার। খালি চোখে দেখা যায়না। কেবল ঘাড়ের কাছে তাদের নিশ্বাস অনুভব করা যায়। শিমরাইল টেক পাড়া এলাকার মৃত হাজি বদরুদ্দিনের ছেলে নুর হোসেন। কর্মজীবন শুরু করেন সিদ্ধিরগঞ্জ ইকবাল ট্রাক গ্রুপের হেল্পার হিসাবে। ১৯৮৯ সালে একই এলাকার ট্রাক চালক ও হেল্পার ইউনিয়নের নেতা বনে যান গায়ের জোর। ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাক চালক দাইমুদ্দিনকে উচ্ছেদ করে দখল নেন ইউনিয়নের এবং ক্ষমতাসীন দল জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে পোক্ত করে নেনে অবৈধ দখল। ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে নাম লেখান বিএনপির রাজনীতিতে। ক্ষমতার সিঁড়ি টপকানোর শুরুটা হয় এখানেই। এরপর তরতর করে পদানত করেন ইউপি চেয়ারম্যানের মসনদ। ’৯৬ সালে জয়ী হন দ্বিতীয় টার্মেও। বিএনপি ছেড়ে হাত মেলান শামীম ওসমানের সাথে। বনে যান আওয়ামী নেতা। ২০০২ সাল পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় শিমরাইল মোড়ে গড়ে তোলেন চাঁদাবাজীর সিন্ডিকেট। ভগবানের চরণে নিয়মিত পূজা দিয়ে আবিস্কার করতে থাকেন সম্পদ আহরণের নতুন নতুন দিগন্ত। পরবর্তী স্টপেজ নারায়ণগঞ্জ ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদ। ক্ষমতার সিঁড়ি বাংলাদেশে কখনোই মসৃণ হয়না। নুর হোসেনের বেলায়ও ব্যতিক্রম হয়নি। নজরুল ইসলাম একই এলাকার বাসিন্দা এবং ক্ষমতার সিঁড়ি টপকানোতে নুর হোসেনের প্রবল প্রতিপক্ষ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে গিয়ে থামতে হয় নজরুল ইসলামকে। নুর হোসেনের সাথে নজরুল ইসলামের রেশারেশি ক্ষমতার রুটি হালুয়া নিয়ে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক সিন্ডিকেট, বেশ্যালয় সহ শত শত অবৈধ ব্যবসার মালিকানা নিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী লড়াই। ১৭ বছর একনাগাড়ে চলতে থাকে এ লড়াই।

১৯৯৭ সালের ১৭ই জুলাই। মাগরিব নামাজের পর মিজমিজি চৌধুরী পাড়া এলাকায় নজরুলের ক্যাডারদের হাতে খুন হন সাইফুদ্দিন নামের এক ভদ্রলোক। পরে বের হয় ভুল টার্গেট ছিল এই সাইফুদ্দিন। নামের গোলমালে প্রাণ দিয়ে হয় তাকে। ২০০০ সালের ১৭ই আগষ্ট। নুর হোসেনের সমর্থক জহিরুল ইসলাম নামের এক সব্জি বিক্রেতা নির্বাচনী পোস্টার লাগানোর দায়িত্ব পালন করছিলেন। নজরুলের উপস্থিতিতে তার ক্যাডাররা খুন করে জহিরুল ইসলামকে। এর প্রতিদান ফিরিয়ে দিতে দেরি করেনি নুর হোসেন। তার ক্যাডাররা ১লা অক্টোবর স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে খুন করে নজরুলের সমর্থক যুবলীগ নেতা আবদুল মতিনকে। তারও আগে ১৯৯৬ সালে শিমরাইল মোড়ে নিহত হন আওয়ামী লীগ কর্মী আলী হোসেন। নুর হোসেনকে আসামী করা হলেও ভগবানের হাত ধরে অব্যাহতি পান মামলা হতে। নজরুলে ক্যাডার শিপন, রনি ও ফারুখ ২০০১ সালের ৩১শে মার্চ শিল্পী নামের এক তরুনীকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। তার অপরাধ, বিয়ের প্রস্তাবে অনিচ্ছা প্রকাশ। ২০০০ সালের ৩রা মার্চ ধানমন্ডির ১৫ নং সড়কের ১৬নং বাড়িতে খুন হন এডভোকেট বাবর এলাহি। তদন্তে প্রকাশ পায় নজরুল ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করায় তাকে। খুনের মূল্য ছিল ৫ লাখ টাকা। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ২০০৪ সালে নজরুলকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করে। পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে যান এই নেতা। এবং ফিরে আসেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার বছর। হাইকমান্ডের নির্দেশে হাইকোর্টের আওয়ামী বিচারকগণের হাত ধরে খালাস পান খুনের মামলা হতে। ২০০৯ সালের ১৩ই অক্টোবর মিজমিজি পূর্বপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে খুন হন বাংলাদেশ চুন প্রস্তুতকারক সমিতির সহ-সভাপতি জনাব আবু তালেব। তদন্তে পাওয়া যায় নজরুলের সংশ্লিষ্টতা।

২০১৪ সালের ৩০শে এপ্রিল। বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকা। এলাকার বুক চিড়ে বহমান শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ভাসমান কটা লাশ দেখে উৎসুক হয়ে উঠে স্থানীয় জনগণ। খবর দেয় স্থানীয় পুলিশকে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে খবর দেয় আত্মীয়দের। লাশের মিছিলে খুঁজে পাওয়া যায় নজরুলের লাশ। সনাক্ত করেন তার স্ত্রী। অবশ্য ততদিনে নজরুলের পরিচয়ে কিছু উপাধি যুক্ত হয়ে হয়ে গেছে; যেমন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল চেয়ারম্যান। প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুলকে একা ভাসতে দেখা যায়নি শীতলক্ষ্যা নদীর ঠান্ডা পানিতে। সাথে ছিল তার তিন সহযোগী। সাথে কো-ল্যাটারাল ড্যামেজ হিসাবে প্রাণ হারায় এক এডভোকেট ও তার ড্রাইভার। তাদের অপরাধ এখনো পরিষ্কার নয়। তবে সন্দেহ করা হচ্ছে সাংবাদিক সাগর-রুনির মত তারাও স্বাক্ষী হয়েছিল ভগবানদের বড় কোন অপরাধের।

পাঠক, এবার আসুন নজরুল ও নুর হোসেনদের কাপড় খুলে উন্মোচন করি তাদের লজ্জাশীন অঙ্গ সমূহ। অনেকের মত নজরুল-নুর গংদের জন্ম ক্ষমতার ঘরজামাই, বিশ্ব বেশ্যা সমিতির আজীবন চেয়ারম্যান জনাব হোমো এরশাদের জরায়ুতে। বেশ্যা ভোগের মত বেগম জিয়ার বাহিনীও ভোগ করে গেছে তাদের সার্ভিস। লগিবৈঠা বাহিনীর প্রধান ও ক্ষমতার জারজ কন্যা শেখ হাসিনা কেবল উপভোগই করেই ক্ষান্ত হননি, বরং জাতির গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন পচনশীল মহামারী হিসাবে। দেশের উচ্চ আদালতে নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডার কাম বিচারকরাও বাইরে থাকেননি এ সিন্ডিকেটের। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীকে বেকসুর খালাস দিয়ে প্রমান করেছেন তারাও ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খোর। চেতনার যোনিপথে ফিল্টার লাগিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধের সাথে সহবাস করছেন তাদের হীমশীতল নীরবতা এসব দানবদের উত্থানে ফার্টিলাইজার হিসাবে কাজ করেছে মাত্র। যে দেশে সরকার তার নাগরিকদের রাতের অন্ধকারে খুন করে ক্ষমতার পথ মসৃণ করার জন্য, সে দেশে নুর হোসেন তথা শামীম ওসমানরা নজরুল গংদের শীতলক্ষ্যার গভীর পানিতে সমাহিত করবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের বাতাসে এখন লাশের গন্ধ। এ গন্ধ বিচ্ছিন্ন কোন গন্ধ নয়। বরং এ গন্ধের মাথা আছে, মগজ আছে, হাত-পা আছে। গন্ধের সূত্র চাইলে তা শীতলক্ষ্যার গভীর পানিতে নয়, বরং সন্ধান করতে হবে ভগবানদের দরবারে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন