মিথ্যাচারের গর্ভে জন্ম নেয়া আওয়ামী পাপাচার

Submitted by WatchDog on Friday, April 9, 2010

hypocrisy of awami league

দিনাজপুর গণপূর্ত বিভাগ কার্যালয়ে দরপত্র দাখিল করতে গেলে সাধারণ ঠিকাদারদের এভাবেই ধাওয়া করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ছবি: প্রথম আলো

সামনে পুলিশ, পিছে পুলিশ, ডাইনে চামচা বায়ে চামচা, আসমান জমিনে স্তূতির বানে ভেসে পথ চলেন তিনি। একাধারে প্রধানমন্ত্রী, আলিশান দলের ততধিক আলিশান সিইও, চেয়ারম্যান, প্রোপাইটর, নামের আগে শেখ পিছে ওয়াজেদ। পাঠক, আপনার কি চিনতে অসুবিধা হচ্ছে? তিনি আর কেহ নহেন, ৫৪ হাজার বর্গমাইলের দেশ বাংলাদেশের অন্যতম মালিক, বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মহিলা, একক ও অন্যতম শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। উনি কথা বলেন আমরা শুনি, উনি স্বপ্ন দেখান আর আমরা দেখি। বিগত ১৫মাসে উনি অনেক কথাই বলেছেন, অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছেন, আশার বাণীতে দেশে অকাল বন্যা এনেছেন। মহিয়সীর কথা ও কাজের যোগ বিয়োগ শেষে উপসংহারে যা বেরিয়ে আসে তার সহজ সরল বাংলা করলে যা দাড়াবে তা হলঃ
- আর কিছু না হোক অন্তত নিজের ১৪ মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া গেছে
- আর যাই হোক অন্তত ৭৫’এর খুনীদের ফাঁসি দেয়া গেছে (মাতা-পিতা-ভ্রাতা হত্যার প্রতিশোধ)
- গাজি গাজি করে আজীবনের জন্য নিজের এবং পরিবারের বাকি সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে
- রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল-ইয়াতিমখানা, শৌচাগার-পাঠাগার, পশুরহাট-খেলার মাঠ সহ বাংলাদেশের তাবৎ স্থাপনার নাম নিজ পিতা-মাতার নামে নামকরণ করা গেছে
- ছেলে বিদেশে, মেয়ে বিদেশে, নায়-নাতি বিদেশে, বোন বিদেশে, বোনের কাচ্চা-বাচ্চা বিদেশে পাঠিয়ে আর যাই হোক মারামারি, কুপাকুপি, আলো নাই, গ্যাস নাই, পানি নাই, শান্তি নাই, বিচার নাই, এ সব হাহাকার হতে পরিবারের সবাইকে বাঁচানো গেছে
- নোবেল না হোক অন্তত ‘শান্তির কন্যা‘ উপাধি পাওয়া গেছে
এ তালিকা এত বেশী লম্বা, জোড়া দিলে হয়ত টুইন টাওয়ায়ের মত আসমানে গিয়ে ঠেকবে।

দেশে সমস্যা বলতে যদি কিছু থাকে, হোক তা বর্তমান বা অতীতের, কোনোটারই দায়-দায়িত্ব নাকি উনার নয়। কারণ, এগুলো সবই অন্যের সৃষ্টি! একই সূরে নতুন একটা তথ্য দিলেন গতকাল ওসমানী মিলনায়তণের এক ভাষণে। অতীতে গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা না থাকার কারণে নাকি দেশের স্বৈরশাসক ও গুটি কয়েক মানুষ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। যদিও উল্লেখ করেননি তবু আমরা ধরে নেব, একই কারণে তিনি সম্পদ বলতে কিছুই করতে পারেননি। আসলেই কি তাই? তত্ত্ববধায়ক আমল হতে উনার মাথায় যে ১৪টা মামলা ঝুলছিল তার সব কটাই ছিল অন্যায় ও অবৈধ পথে কোটি টাকা আয় সংক্রান্ত। নিজ দলের প্রাক্তন সভাপতি কাম হাইকোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে রাতারাতি মামলাগুলো খারিজ না করিয়ে আইনী মোকাবেলায় নিজের দারিদ্রতা প্রমান করলে ম্যাংগো পিপলদের বুঝতে বেশী সুবিধা হত।

মিলনায়তনের মায়াবি পরিবেশে বাংলাদেশের প্রোপাইটর যখন এসব অমৃত সূধা বর্ষন করছিলেন আসুন দেখতে চেষ্টা করি দূরের শহর পঞ্চগড়ে কি ঘটছিল। উল্লেখ করার মত আসলে তেমন কিছুই ঘটেনি, কারণ এসব ঘটনা এখন বাংলাদেশের নিত্যদিনের অতি স্বাভাবিক ঘটনা। খবরে প্রকাশ, ১৪ কোটি টাকার দরপত্র দাখিল নিয়ে বাংলাদেশের সিইও শেখ হাসিনার সূর্যসেনা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ফেরেশতারা নিজেদের ভেতর কাইজ্জা ফ্যাসাদ বাধিয়ে রক্তের সামান্য একটা নদী বইয়ে দিয়েছিল মাত্র। পঞ্চগড়ে যখন এ নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছিল আসুন চোখ ফেরাই কাছের শহর দিনাজপুরের দিকে। ওখানে চলছিল রক্তারক্তির ত্রিমুখী লড়াই। আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ দরপত্র দাখিল নিয়ে বাধিয়ে ফেলে তুমুল কুরুক্ষেত্র। অভিযোগ উঠেছে, গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ নিতে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মির্জা আশফাকের অনুসারী যুবলীগের নেতা-কর্মীরা সাধারণ ঠিকাদারদের দরপত্র জমা দিতে বাধা দিলে ঘটনার সূত্রপাত হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১০টি সরকারি পুকুর ইজারার দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই দরপত্র দাখিলের স্থান উপজেলা পরিষদ চত্ব্বরে অবস্থান নেন। এতে নেতৃত্বে ছিলেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও সংগঠনের পৌর সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের আরেকটি অংশ দরপত্র জমা দিতে যায়। এ সময় প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে ফারুকের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা দরপত্র জমা দিয়ে উপজেলা পরিষদ ভবন ত্যাগ করার সময় হামলার শিকার হন। প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা ছুরি ও রড নিয়ে ফারুকের অনুসারী নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। এতে দুই পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে ফারুকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্রলীগের ফারুক (২০), সুজন (২২), লিটন (২৪) ও আমিনুল ইসলামকে (২৫) সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফারুকের অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

দেশের তাবৎ সমস্যার জন্যে অতীত সরকারগুলোকে দায়ী করার মানসিকতা না হয় বুঝলাম (চোরের রাজত্বে ওরাও চোর), কিন্তু বাংলাদেশের জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আর স্বেচ্ছালীগ নামের যে ক্যান্সার দিনের পর দিন জাতিকে উপহার দেওয়া হচ্ছে তার জন্যে কাকে দায়ি করবেন মিথ্যুক নেত্রী? নাকি এগুলোর জন্যেও দায়ী অতীতের স্বৈরশাসকের দল? যদি তাই হয় তাহলে নিকট অতীতের স্বৈরশাসক এরশাদের সাথে ক্ষমতার হানিমুনকে কোন হিপোক্রেসি দিয়ে বৈধ করবেন তিনি? দিন যদি এভাবেই চলতে থাকে, অবাক হবনা যদি এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে শেখ হাসিনার ভৃত্যদের হারিকেন দিয়ে খুঁজতে শুরু করে দেয়। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ, চিরস্থায়ী বাদশাহী করার ইচ্ছা নিয়ে অতীতে যারা এ দেশকে নিজের সম্পত্তি ভেবেছিল তাদের পরিণতি কি হয়েছে তা হতে এই জুনিয়র শেখকে শিক্ষা নিতে অনুরোধ করব।

সূত্র: প্রথম আলো

ভালো লাগলে শেয়ার করুন