৫২'র পাকি বনাম আজকের পাকি!

Submitted by WatchDog on Friday, February 19, 2010

Bangladeshi

ফাল্গুনের মৌঁ মৌঁ গন্ধে ভাষা দিবস পালনের সময় এখন। সংগত কারনে জাতির বিবেক এ মুহুর্তে ইতিহাসমূখী। ২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রাক্কালে এ ধরনের খবর খুব একটা বাতাস পাবে বলে মনে হয়না। খবরগুলো জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে, আমরা পড়ছি এবং স্বাভাবিক খবর হিসাবে হজম করছি বিনা প্রশ্নে।

খবর ১) সূত্র দৈনিক প্রথম আলো: চট্টগ্রাম মহানগরের চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) একটি ব্যাংক হিসাবে গত পাঁচ মাসে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা জমা হয়েছে। এই ওসি বাংলা সিনেমার ঢাসুম ঢিসুম মার্কা ওসি কিনা এ ব্যপারে পত্রিকাটি বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে মজার খবর হল ওসি একজন মহিলা এবং উনার নাম রওশান আরা বেগম। মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতনের একজন ওসি কি করে পাঁচ মাসে সাড়ে আট লাখ টাকা জমা করলেন এ প্রশ্নের উত্তরে জনাবা ওসি যা বল্‌লেন তাও বেশ চমকপ্রদঃ ‘আমি পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকে জমা রাখি। এ টাকা আমার মেয়ে ও তার স্বামীর জন্য লন্ডন পাঠাতে হয়।’ ওসি রওশন আরা আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে ব্যারিস্টারি পড়ে। তার জন্য প্রতি সেশনে (ছয় মাস পরপর) পাঁচ-ছয় লাখ টাকা করে পাঠাতে হয়।’ আবার তিনি বলেন, ‘আমার ভাইদের অনেক টাকা, দুজন যুক্তরাষ্ট্রে ও একজন ফ্রান্সে থাকেন, একজন দেশে ব্যবসা করেন। তাঁরাই আমার মেয়ের খরচ জোগান। আমি এঁদের কিছু কিছু করে টাকা দিই। মাঝেমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে এসএ পরিবহনে করে টাকা পাঠাই।’ ভাষার মাস ফেব্রুয়ারে, এমন মাসে এ ধরনের বাংলার কি আনুবাদ হতে পারে আশাকরি পাঠকদের তা না বুঝালেও চলবে। আসল খবর হল, স্থানীয় রাজনীতিক ও পুলিশের একটি চক্র কাপ্তাই-বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে চোরাই পথে কাঠ পাচারে জড়িত ব্যবসায়ী, বৈধ কাঠের আড়তদার, করাতকল, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড, জুয়ার আসরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছে। মাসোহারার অংশ পুলিশকেও দেওয়া হয়। আর স্বাভাবিক ভাবেই সে অংশের একটা সিংহভাগ চলে যায় জনাবা ওসির ব্যাংক একাউন্টে।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-02-20/news/43726

খবর ২) সূত্র দৈনিক কালের কন্ঠঃ রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন কোটি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, তিনটি মালিক সমিতি ও দুটো শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিটির একাধিক কমিটির নামে এ চাঁদাবাজি চলছে। দিনরাত চাঁদা আদায়ের কাজটি করে থাকে 'লাঠি বাহিনী', 'যানজট বাহিনী' ও 'লাইন বাহিনী'। কোটি টাকা চাঁদার একটা ব্রেক-আপও আছে খবরটায়ঃ সায়েদাবাদে প্রতিদিন ৬০ লাখ, গাবতলীতে দৈনিক ২৭ লাখ, মহাখালীতে দিনে ১২ লাখ। সরকারী ও বিরোধী দলীয় চাঁদাবাজদের হাত আর পকেট হয়ে এ অংকের সিংহভাগ অংশ কার পকেটে গিয়ে সমাহিত হয় এর লেজ ধরে টানলেই বেরিয়ে আসবে দেশীয় রাজনীতি আর নেতা-নেত্রী পূঁজার আসল কাহিনী।

বছরে ৩৬১ কোটি ৩৫ লাখ! নেত্রী পূজার সেবাদাস তৈরীর মন্দ পূঁজি না!
http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&type=single&pub_no=83&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=0

খবর ৩) সূত্র দৈনিক নয়া দিগন্তঃ আজরাইল তুই এত কাছে ছিলি? গুলি করে হত্যার পর পুলিশের উক্তি। “পুলিশ শাহীনের জামার কলার ধরে টেনে ঘরের বাইরে আনতে চাচ্ছে আর শাহীন যাচ্ছিল পেছনের দিকে। তিনজন পুলিশ তার দিকে বন্দুক তাক করে আছে। শাহীন ছিল অনেক উঁচু লম্বা ও শক্তসমর্থ পুরুষ। পুলিশ তাকে টেনে ঘর থেকে বাইরে আনতে পারছিল না। কলার ধরে টানার ফলে শাহীন সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এ সময় দরজার পাশে দাঁড়ানো দারোগা তিনবার বলে, ‘গুলি কর’। তখন বন্দুক তাক করে থাকা একজন পুলিশ গুলি করে। শাহীন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। উপুড় হয়ে মাথাটা ডানে-বামে ঘোরাতে চেষ্টা করে শাহীন। রক্ত গড়িয়ে দরজা পর্যন্ত চলে আসে। এর কিছুক্ষণ পর শাহীনের একটি পা একবার ঝাঁকি দিয়ে উঠল। পরে আর তিনি নড়াচড়া করেনি। নিস্তব্ধ হয়ে গেল সব কিছু। এরপর শাহীনের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে একজন পুলিশ বলে, ‘আজরাইল, তুই এত কাছে ছিলি’?” উল্লেখ থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহিন ছিল একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যা মামলার আসামী। পুলিশ কর্তৃক এভাবে শাহীনকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য বর্ণনা করে শাহীনের দূর সম্পর্কীয় চাচা আজহারুল হক বলেন, “আমি যেন কেমন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যাই এ ঘটনা দেখার পর। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী হচ্ছে এসব। শাহীনকে মারার পর দেখলাম একজন পুলিশ (এসআই ইয়ামিন) গেটের কাছে গিয়ে ফোনে বলতে লাগল, ‘স্যার একটা বোমা ফুটছে। একটি লাশ পাওয়া গেছে। আত্মহত্যা করেছে মনে হয়।’
http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=196480&sec=1

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী পাকিরা কেবল মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার জন্যে সালাম-রফিক-জাব্বার-বরকতদের হত্যা করেছিল এমনটা বলে যারা ভাষা মহিমা গাইছেন তাদের সাথে দ্বিমত করতে চাচ্ছি। পাকিদের আসল উদ্দেশ্য ছিল ভাষার সাথে এ অংশের মানুষের স্বাবলম্বী হওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া। ১৯৫২ হতে ২০১০। ৫৮ বছর পর কতটা স্বাধীন ও স্বাবলম্বী আমরা? কেবল ভৌলগিক স্বাধীনতা একটা জাতির স্বাধীনতা ও স্বাবলম্বীতা নিশ্চিত করার জন্যে যথেষ্ট নয়। ৫২'র পাকিদের সাথে আজকের পাকিদের তফাৎ শুধু ভাষায়। কাজে কর্মে ও উদ্দেশ্যে ওরা যে একই মানুষ উপরের খবরগুলো তাই প্রমান করে। ৫২'তে ওরা হত্যা করেছিল হাতে গোনা ক'জনকে, আজকের 'পাকিরা' হত্যা করছে প্রতিদিন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন