পতাকায় ভারতীয় দাদা এবং আমাদের দেশপ্রেম!

Submitted by WatchDog on Tuesday, January 5, 2010

India

ছবিটা নিয়ে যা আশা করা গিয়েছিল তাই হল শেষ পর্য্যন্ত, ব্লগে ব্লগে আলোচনা সমালোচনার কালবৈশাখী, দেশপ্রেমের অকাল সূনামী আর ভারতীয় গুষ্টি উদ্বারে ওয়াসীম আকরামীয় বাউনসার! সহজ বাংলায় বল্‌লে, আমাদের রাজনীতিতে সেই অতি পরিচিত নেভার এন্ডিং ভারত বিরোধীতা। বেশ কিছুদিন ধরেই রাজনীতির বসতবাড়িতে ভারত সংগমে ভাটা যাচ্ছিল, সংগম উত্তেজনা নেতিয়ে আসছিল খাদ্য আর পানীয়র অভাবে। এমন একটা ঝিম ধরা মুহুর্তে এ ধরনের ছবি ঠিক ভায়াগ্রা, সিয়ালিসের মত কাজ করল জাতিয়তাবাদী-মৌলবাদীদের সংসারে। বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে ভারতীয়দের সাংস্কৃতি চর্চা, তাও আবার পায়ের নীচে দলিথ মথিত করে! এ যেন না চাইতেই ক্ষুধার্ত মুখে ৩ কোর্স খাবার তুলে দেয়া।

ভারতীয় তারা টিভিতে বাংলাদেশী পতাকার মত আঁকা কিছু একটার উপর কেউ একজন গান গাইছে। বাংলা ব্লগসমূহে এ নিয়ে যা বলা হচ্ছে তার সারমর্ম করলে এই দাঁড়ায়, সীমান্তে নিয়মিত বাংলাদেশী নিধনের মত এ যাত্রায় ভারতীয়রা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কটাক্ষ করছে পতাকা সাংস্কৃতির মাধ্যমে। কোন মহাপরিকল্পনার অংশ হিসাবে ভারতীয়রা এমনটা করেছে তা তারাই ভাল বলতে পারবে, কিন্তূ ঘটনাটা আমাদের জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেমে পাগলকরা যে স্ফুলিংগ জ্বালিয়ে দিল তার জন্যে ভারতীয়রা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবী রাখে। সাধারণত এমন ঘটনা কমই ঘটে যা বাংলাদেশীদের দেশপ্রেম দাড়িপাল্লায় মাপার সূযোগ এনে দেয়, এ ঘটনাটা তাই এনে দিল।

বাংলাদেশ এমনই এক দেশ যেখানে চেকের মাধ্যমে চাঁদাবাজী করেও প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়, এই সেই দেশ যেখানে ৩ বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ঠেলায় পরে অবৈধ টাকা বৈধ করতে সামান্যতম কুণ্ঠাবোধ করেন্‌না। এ দেশেই শতকরা ১০০ জন রাজনীতিবিদ অসৎ, আমলারা চোর, বুদ্বিজীরা চরিত্রহীন, এখানে ছাত্ররা নিয়মিত শিক্ষক পেটায়, নেতা-নেত্রীর স্বার্থ রক্ষার্থে শিক্ষকরা নামে লাল-নীল-হলুদ যুদ্বে, সমাজের পরতে পরতে অন্যায়, অনাচার আর অবক্ষয়ের জয়জয়কার। এসব কোন কিছুই আমাদের দেশপ্রেমেকে জাগ্রত করেনা, প্রশ্নবিদ্ব করেনা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের মূল উদ্দেশ্যকে। অথচ ভারতীয় টিভির কোন চ্যানেলে কে আমাদের কটাক্ষ করছে তা বের করছি বাইনাকুলার দিয়ে। আমাদের নষ্ট রাজনীতিবিদ্‌রা ক্ষমতারোহন/ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কলা কৌশলে ভারত ইস্যু ব্যবহার করে যাচ্ছেন স্বাধীনতার পর হতেই। এসব কৌশলের সংগী হয়ে কতদূর এগুতে পেরেছি আমরা সাধারণ মানুষেরা? দেখতে দেখতে ৩৯টা বছর পার হয়ে গেল, আর কত বছর অপেক্ষা করলে আমরা বুঝতে পারব ভারতীয় টিভির পতাকা সাংস্কৃতি এ মুহুর্তে আমাদের সমস্যা নয়? আমাদের সমস্যা আমরা নিজেরা, সমস্যা আমাদের চরিত্র, আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সমস্যা জনসংখ্যা বিস্ফোরন, এবং এমন আরও হাজারো সমস্যা। দেশপ্রেমের গোলা ছুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা যায় ঠিকই, কিন্তূ এ গোলা বুমেরাং হয়ে আমাদের কাছেই ফিরে আসছে, যার শিকার হয়ে জাতি হিসাবে আমরা স্থায়ী পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, বুঝতে পারছি কি আমরা?

ভালো লাগলে শেয়ার করুন