কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামার দেয়া ভাষনের পূর্ন টেক্সট

Submitted by WatchDog on Saturday, June 6, 2009

আপনাদের ধন্যবাদ এবং শুভ অপরাহí। আমি এই কালোত্তীর্ণ কায়রো নগরীতে এসে এবং দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের আতিথেয়তায় সম্মানিত বোধ করছি। হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে আলআজহার ইসলামি শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে থেকেছে এবং এক শতকেরও অধিককাল ধরে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় মিসরের অগ্রগতির উৎস হয়ে থেকেছে এবং একত্রে আপনারা ঐতিহ্য ও প্রগতির মধ্যে এক ধরনের ঐকতানের প্রতিনিধিত্ব করেন। আমি আপনাদের এবং মিসরের জনগণের আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞ এবং আমি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আমেরিকার জনগণের জন্য শুভেচ্ছা এবং শান্তির শুভ কামনা বহন করতে পেরে গর্বিত বোধ করছি। আসসালামু আলাইকুম।
আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের মধ্যে একটি প্রচণ্ড উত্তেজনার মুহূর্তে মিলিত হয়েছি, যে উত্তেজনার শেকড় গ্রথিত রয়েছে ঐতিহাসিক উপাদানের মধ্যে যা কিনা নীতি সম্পর্কিত যে কোনো চলমান বিতর্ককে অতিক্রম করে যায়। ইসলাম ও পশ্চিমের মধ্যকার সম্পর্কের মধ্যে যেমন রয়েছে সহাবস্খান ও সহযোগিতা, তেমনি রয়েছে সঙ্ঘাত ও ধর্মযুদ্ধের ঘটনাও। আরো সাম্প্রতিককালে এ উত্তেজনায় ইìধন জুগিয়েছে উপনিবেশবাদ যা কিনা অনেক মুসলমানকে তার অধিকার ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। আর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে, তাদের নিজেদের আকাáক্ষার প্রতি কোনো তোয়াক্কা ছাড়াই প্রায়ই শীতল যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। তা ছাড়া আধুনিকতা ও বিশ্বায়নের কারণের যে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তার ফলে অনেক মুসলমানই পশ্চিমকে ইসলামের ঐতিহ্যের প্রতি বৈরী বলে গণ্য করেছে।

সহিংস উগ্রপন্থীরা এসব উত্তেজনাকে একটি ক্ষুদ্র অথচ সম্ভাবনাময় সংখ্যালঘু মুসলিমদের মধ্যে ব্যবহার করেছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের আক্রমণ এবং অসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লিপ্ত হতে এসব উগ্রপন্থীর অব্যাহত প্রচেষ্টার কারণে আমার দেশেরও কিছু লোক ইসলামকে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিই কেবল নয়, মানবাধিকারের প্রতিও বৈরী বলে গণ্য করেছে। এর ফলে আরো আশঙ্কা ও অবিশ্বাস যুক্ত হয়েছে।
যে পর্যন্ত আমাদের সম্পর্ক আমাদের মধ্যকার বিভেদ দ্বারা সংজ্ঞায়িত হবে, আমরা তাদেরকেই ক্ষমতাশালী করে তুলব যারা শান্তির বদলে ঘৃণার বীজ বপন করেছে এবং যারা সহযোগিতার পরিবর্তে সঙ্ঘাতকে উৎসাহিত করছে। সহযোগিতাই আমাদের সব জনগণের জন্য সুবিচার ও সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। এই সংশয় ও মতানৈক্যের চক্র আমাদের ভাঙতেই হবে।

আমি এখানে, এই কায়রোতে এসেছি পারস্পরিক স্বার্থ ও পারস্পরিক মর্যাদাবোধের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে এক নতুন সূচনার সìধানে যার ভিত্তি হবে এই সত্য যে আমেরিকা ও ইসলাম পরস্পর থেকে পৃথক নয় এবং তাদের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতারও প্রয়োজন নেই। বরং তারা কোথাও কোথাও পরস্পর সম্পৃক্ত এবং তাদের অভিন্ন নীতি রয়েছে সুবিচার ও সমৃদ্ধির নীতি; সব মানুষের প্রতি সহিষäুতা ও সম্মানের নীতি।

আমি জানি এই ভাষণ সম্পর্কে যথেষ্ট প্রচার হয়েছে কিন্তু কোনো একটি মাত্র ভাষণ বহু বছরের অবিশ্বাস মোচন করতে পারে না এবং এই বিকেলে আমার এই সময়সীমার মধ্যে সেসব জটিল প্রশ্নেরও আমি উত্তর দিতে পারব না যা আমাদের এই বিন্দুতে নিয়ে এসেছে। তবে আমি নিশ্চিত যে সামনে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের খোলাখুলিভাবে পরস্পরকে সেসব কথা বলতে হবে যা আমাদের মনের মধ্যে আমরা রেখে দিয়েছি কিংবা যেসব কথা প্রায়ই রুদ্ধদ্বার কক্ষে বলা হয়। যেমনটি পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর সম্পর্কে সচেতন থেকো এবং সময়ে সত্য কথা বলো।’ আর আমি সেটাই আজ করার চেষ্টা করব সত্য বলার আপ্রাণ চেষ্টা করব। আমাদের সামনে যে কাজ রয়েছে, বিনীতভাবে সেটা গ্রহণ করে এবং দৃঢ়ভাবে এই বিশ্বাস পোষণ করে যে মানুষ হিসেবে আমরা যে অভিন্ন স্বার্থ পোষণ করি তা সেসব শক্তির চেয়েও শক্তিশালী যা আমাদের পরস্পরকে বিভক্ত করে।

আমার এই বিশ্বাসের একটি অংশ গ্রথিত আমার নিজের অভিজ্ঞতার মধ্যেই। আমি খ্রিষ্টান কিন্তু আমার বাবা কেনিয়ার এমন একটি পরিবার থেকে এসেছিলেন যেখানে রয়েছে কয়েক প্রজন্মের মুসলমান। বালক বয়সে আমি ইন্দোনেশিয়ায় বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছি এবং ভোরে, সìধ্যায় আমি আজানের আওয়াজ শুনেছি। তরুণ বয়সে আমি শিকাগোর জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাজ করেছি যেখানে তাদের অনেকেই মুসলিম ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে শান্তি ও মর্যাদার সìধান পেয়েছে।

ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে, সভ্যতায় ইসলামের অবদানের কথাও আমি জানি। আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো স্খানে, যা কিনা শত শত বছর ধরে শিক্ষার আলো বহন করেছে, ইউরোপে পুনর্জাগরণ এবং যুক্তি বিজ্ঞানের উন্মেষের পথ উন্মোচন করেছে। মুসলমান সম্প্রদায়ের উদ্ভাবনের পথ ধরেই এলো অ্যালজেব্রা, আমাদের চৌম্বক কম্পাস এবং নৌচলাচলের সাজসরঞ্জাম, কলম ও ছাপাখানার বিষয়ে আমাদের দক্ষতা, রোগ সংক্রমণের কারণ এবং নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান। ইসলামি সংস্কৃতি আমাদের দিয়েছে রাজকীয় খিলান সুউচ্চ চূড়া, কালোত্তীর্ণ কাব্য, কাáিক্ষত সঙ্গীত, অভিজাত চারুলিপি এবং শান্তির সাথে ধ্যান করার স্খান। আর গোটা ইতিহাসজুড়ে ইসলাম কথায় ও কাজে প্রমাণ করেছে ধর্মীয় সহিষäুতা ও বর্ণগত সাম্য।আমি এও জানি যে, ইসলাম সব সময় আমেরিকার ইতিহাসেরও অংশ হয়ে থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম দেশটি ছিল মরক্কো। ১৭৯৬ সালে ত্রিপোলি চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে আমাদের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস লিখেছিলেন, ‘মুসলমানদের আইন, ধর্ম কিংবা তাদের শান্তির বিরুদ্ধে আমেরিকায় বৈরিতার লেশমাত্রও নেই।’আর আমাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই, আমেরিকান মুসলমানরা যুক্তরাষ্ট্রকে সমৃদ্ধ করেছেন। তারা আমাদের যুদ্ধে লড়েছেন, আমাদের সরকারে কাজ করেছেন, নাগরিক অধিকারের পক্ষে অবস্খান নিয়েছেন, ব্যবসা শুরু করেছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়িয়েছেন, আমাদের ক্রীড়াক্ষেত্রে শীর্ষস্খান দখল করেছেন, নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, আমাদের উচ্চতম ভবন নির্মাণ করেছেন এবং অলিম্পিক মশাল প্রজ্বলিত করেছেন। আর এই প্রথম যখন একজন মুসলিম আমেরিকান কংগ্রেসে নির্বাচিত হলেন তখন তিনি আমাদের সংবিধান সংরক্ষণের জন্যই সেই কুরআন স্পর্শ করে শপথ নেন, যেটি আমাদের অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা জনক টমাস জেফারসন তার ব্যক্তিগত পাঠাগারে রেখেছিলেন।

সুতরাং এই অঞ্চলে যেখানে ইসলাম প্রথমে নাজিল হয় সেখানে আসার আগেই আমি ইসলামকে জেনেছি তিনটি মহাদেশে। আর এই অভিজ্ঞতার কারণেই আমার এ রকম প্রত্যয় হয়েছে যে আমেরিকা ও ইসলামের মধ্যে অংশীদারিত্ব হওয়া উচিত­ ইসলাম যা তার ওপর ভিত্তি করে, ইসলাম যা নয় তার ওপর ভিত্তি করে নয়। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি মনে করি এটা আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে বদ্ধমূল নেতিবাচক ধারণার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া। তবে ওই একই নীতি আমেরিকা সম্পর্কে ধারণার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত। মুসলমানরা যেমন ত্রুটিপূর্ণ গৎবাঁধা ধারণার মধ্যে পড়েন না, তেমনি আমেরিকাও একটি স্বার্থপর সাম্রাজ্যের ত্রুটিপূর্ণ গৎবাঁধা ধারণার মধ্যে পড়ে না। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বিশ্বে অগ্রগতির অন্যতম একটি প্রধান উৎস। একটি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের জন্ম। আমরা এই আদর্শের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হই যে সবাই জন্ম থেকে সমান এবং আমরা এসব শব্দকে অর্থবহ করে তোলার জন্য কয়েক শতাব্দী ধরে আমাদের সীমান্তের ভেতরে এবং বিশ্বব্যাপী সংগ্রাম করেছি এবং রক্তদান করেছি। আমরা বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রত্যেকটি সংস্কৃতির উপাদানে নির্মিত এবং এই সহজ ধারণার প্রতি অনুগত, ঊহলৎড়মদৎঢ় ৎষৎশ : সবাই মিলে এক। বারাক হোসেন ওবামা নামের একজন আফিন্সকান আমেরিকান যে প্রেসিডেন্ট হতে পারে এ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। তবে আমার ব্যক্তিগত কাহিনী তেমন কোনো অনন্য ঘটনা নয়। আমেরিকায় সুযোগ পাওয়ার স্বপ্নটা প্রত্যেকের জন্য এখনো বাস্তবায়িত হয়নি তবে যারাই আমাদের তটভূমিতে আসেন তাদের সবার জন্যই রয়েছে সেই প্রতিশ্রুতি­ তাদের মধ্যে আমাদের দেশের প্রায় ৭০ লাখ মুসলমানও রয়েছেন যাদের আয় ও শিক্ষার মান গড় আমেরিকানদের চেয়ে বেশি।তা ছাড়া আমেরিকায় স্বাধীনতা ও নিজ নিজ ধর্মচর্চার স্বাধীনতা অবিভাজত বিষয়। সে জন্যই আমাদের দেশের প্রতিটি রাজ্যে মসজিদ রয়েছে এবং ১২০০-এরও বেশি মসজিদ আছে গোটা দেশে। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সরকার নারী ও মেয়েদের হিজাব পরার অধিকার সংরক্ষণের জন্য এবং যারা তা মানে না তাদের শাস্তির জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে কোনো সংশয় যেন না থাকে যে ইসলাম আমেরিকার অংশ। আর আমি বিশ্বাস করি, আমেরিকার ভেতর সেই সত্যটি রয়েছে যে বর্ণ, ধর্ম এবং জীবনের অবস্খান নির্বিশেষে আমরা সবাই অভিন্ন আশা পোষণ করি : শান্তি ও নিরাপদে বসবাস করার, শিক্ষা অর্জন করার এবং মর্যাদার সাথে কাজ করার। আমাদের পরিবার, আমাদের জনগোষ্ঠী এবং আমাদের স্রষ্টাকে ভালোবাসার। এই বিষয়গুলো আমাদের মধ্যে অভিন্ন এবং এটি হচ্ছে সব মানবতার আশা। আমাদের এই অভিন্ন মানবতাকে স্বীকার করা হচ্ছে আমাদের কাজের সূচনা। এই প্রয়োজনীয়তাগুলো তখনই কেবল মেটানো সম্ভব হবে যখন আমরা আগামী দিনগুলোতে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করি এবং বুঝতে সক্ষম হই যে আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো অভিন্ন, সেগুলো মোকাবেলায় আমাদের ব্যর্থতা সবারই ক্ষতি করবে।

যখন একটি দেশে অর্থনৈতিক ব্যবস্খা দুর্বল হয়ে পড়ে, সমৃদ্ধি ব্যাহত হয় সর্বত্র। যখন একটি নতুন ফ্লু একটি মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়, তখন সবাই ঝুঁকির সম্মুখীন হন। যখন একটি রাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করে তখন সবার জন্য পারমাণবিক আক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যখন সহিংস উগ্রবাদীরা পর্বতের এক প্রান্তে অভিযান চালায়, তখন সমুদ্রের অপর পারের মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়। আর যখন দারফুর ও বসনিয়ায় নিরপরাধ লোকদের হত্যা করা হয়, তখন আমাদের সম্মিলিত বিবেকে সেই দাগ লেগে থাকে। এ-ই হচ্ছে একুশ শতকে এই বিশ্বের অভিন্ন বিষয়। আর এই দায়িত্ব গ্রহণটা কঠিন। কারণ মানব ইতিহাস প্রায়ই নিজস্ব স্বার্থের জন্য জাতি ও উপজাতির এবং হ্যাঁ ধর্মের, একে অপরকে দমনের ইতিহাস। তবে এই নতুন যুগে এ ধরনের আচরণ হচ্ছে আত্মঘাতী। আমাদের পরস্পর-নির্ভরতার প্রসঙ্গে বলা যায়, কোনো বিশ্বব্যবস্খা যদি কোনো একটি জাতি বা জনগোষ্ঠীকে অপরের তুলনায় তুলে ধরে তা হলে তা অনিবার্যভাবে ব্যর্থ হবে। সুতরাং অতীত সম্পর্কে আমরা যাই-ই ভাবি না কেন, আমরা যেন অতীতের আবর্তে আবদ্ধ হয়ে না পড়ি। আমাদের সমস্যাগুলো সহযোগী মনোভাব নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে, অগ্রগতিগুলো ভাগাভাগি করতে হবে। এর অর্থ এ-ই নয় যে আমাদের উত্তেজনার উৎসগুলোকে অগ্রাহ্য করা উচিত। বরং এর অর্থ ঠিক বিপরীত, আমাদের সমানভাবে এসব উত্তেজনার মুখোমুখি হতে হবে। আর সেই চেতনা নিয়ে আমি কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পরিষ্কার ও সহজভাবে বলতে চাই যেসব ইস্যু আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত আমরা একত্রেই মোকাবেলা করব। যে প্রথম বিষয়টি আমাদের মোকাবেলা করতে হবে সেটি হচ্ছে সকল প্রকারের সহিংস উগ্রবাদ। আঙ্কারায় আমি স্পষ্টত বলেছি, আমেরিকা ইসলামের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত নয়, কখনোই লিপ্ত হবে না। আমরা অবশ্য সহিংস উগ্রবাদীদের নিরন্তর মোকাবেলা করব যারা আমাদের নিরাপত্তার প্রতি বড় রকমের হুমকি। কারণ আমরাও সেসব বিষয় প্রত্যাখ্যান করি­ যেগুলো যেমন নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা, সব ধর্মবিশ্বাসের লোকও প্রত্যাখ্যান করেন। আর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমেরিকান জনগণের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে আমার প্রথম দায়িত্ব।

আফগানিস্তানের পরিস্খিতি আমেরিকার লক্ষ্য এবং একত্রে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। সাত বছরেরও বেশি সময় আগে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আলকায়েদা ও তালেবানকে তাড়া করেছে। আমরা ইচ্ছে করেই সেখানে যাইনি। আমরা প্রয়োজনের কারণেই গেছি। আমি জানি, এখনো হয়তো কেউ কেউ আছে যারা হয়তো ৯/১১-এর ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করবে এমনকি এর যৌক্তিকতাও তুলে ধরবে। তবে আসুন আমরা এ বিষয়টি পরিষ্কার করে বলি, আলকায়েদা ওই দিন প্রায় তিন হাজার লোককে হত্যা করে। এ ঘটনার শিকার হয়েছে আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের নিষ্পাপ নারী, পুরুষ ও শিশু যারা কারো কোনো ক্ষতি করেনি। আর তা সত্ত্বেও আলকায়েদা নির্মমভাবে হত্যা করেছে এসব লোকজনকে, ওই আক্রমণের সাফল্য দাবি করেছে এবং এখনো ব্যাপকভাবে হত্যা করার জন্য তাদের প্রত্যয় প্রকাশ করেছে। অনেক দেশেই তাদের অধিভুক্ত লোকজন আছে এবং তারা নিজেদের নাগাল সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। এটা কোনো মতামত নয় যে বিতর্ক হবে, এটা হচ্ছে বাস্তব সত্য যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

এ নিয়ে ভুল করবেন না যে আমরা আফগানিস্তানে আমাদের সৈন্য রাখতে চাই। আমরা সেখানে কোনো সামরিক ঘাঁটি স্খাপন করতে চাই না। আমাদের তরুণ নারী-পুরুষকে হারানো আমেরিকার জন্য বেদনাবহ ঘটনা। এই সঙ্ঘাত আমাদের জন্য ব্যয়বহুল এবং তা অব্যাহত রাখা রাজনৈতিকভাবেও কঠিন। আমরা প্রতিটি সৈন্যকে আনন্দের সাথে দেশে ফিরিয়ে আনতাম যদি আমরা নিশ্চিত হতে পারতাম যে আফগানিস্তানে এবং এখনকার পাকিস্তানে কোনো সহিংস উগ্রবাদী নেই, যারা সম্ভব হলে যতসংখ্যক পারে, ততসংখ্যক আমেরিকানকে হত্যা করবে। তবে এখনো সেই পরিস্খিতি আসেনি। সে জন্যই আমরা ৪৬টি দেশের জোটের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। আর এতে প্রচুর ব্যয় সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আমেরিকার প্রতিশ্রুতি দুর্বল হবে না। বস্তুত আমাদের কারো এই উগ্রপন্থীদের সহ্য করা উচিত নয়। তারা বহু দেশে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। বহু ধর্মবিশ্বাসের লোককে হত্যা করেছে এবং সবচেয়ে বেশি হত্যা করেছে মুসলমানদের। তাদের কর্মকাণ্ড মানবাধিকারের সাথে, দেশগুলোর উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পবিত্র কুরআন আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, যারা নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করে, তারা যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করে। আর পবিত্র কুরআন আরো বলছে, যারা কোনো ব্যক্তিকে রক্ষা করে তারা যেন গোটা মানবজাতিকেই রক্ষা করে। এক শ’ কোটি লোকের এই চিরস্খায়ী ধর্ম কয়েকটি লোকের ঘৃণার চেয়ে অনেক বড়। ইসলাম উগ্রবাদ মোকাবেলায় সমস্যার অংশ নয়, এটি হচ্ছে শান্তিকে উৎসাহিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এখন আমরা এটাও জানি, শুধু সামরিক শক্তি দ্বারা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সমস্যা সমাধান করা যাবে না। সে কারণে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি আগামী পাঁচ বছরের প্রতি বছর পাকিস্তানিদের সহযোগী করে ১.৫ বিলিয়ন ডলার দেয়া হবে স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তা নির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য এবং যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের সহযোগিতার জন্য শত শত মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করব। সেই কারণে আমরা আফগানদের তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ২.৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্য দিতে যাচ্ছি, যাতে তারা অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে জনগণকে এমন সেবা দিতে পারে যার ওপর জনগণ নির্ভর করতে পারবে। আমি ইরাকের সমস্যা নিয়েও কথা বলতে চাই। ইরাক যুদ্ধ, যা আফগানিস্তান থেকে ভিন্ন। ইরাক যুদ্ধে আমরা নিজেদের ইচ্ছায় গিয়েছি যা আমার দেশের ভেতরে এবং সমগ্র বিশ্বে চরম মতপার্থক্য গড়ে তুলেছে। তবে আমি বিশ্বাস করি সর্বোপরি ইরাকি জনগণ সাদ্দাম হোসেনের অত্যাচারী শাসনের চেয়ে অনেক ভালো আছে, আমি আরো বিশ্বাস করি, ইরাকের ঘটনাগুলো আমেরিকাকে কূটনৈতিকভাবে এবং আন্তর্জাতিক মতৈক্যের মাধ্যমে সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সত্যিকার অর্থে, আমরা আমাদের একজন মহান রাষ্ট্রপতির একটি উক্তি মনে করতে পারি। থমাস জেফারসন, যিনি বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি আমাদের শক্তির সাথে জ্ঞানেরও বৃদ্ধি হবে এবং আমাদের শিক্ষা দেবে, আমরা যত কম শক্তি প্রয়োগ করব আমাদের শক্তি তত বৃদ্ধি পাবে।’
আজ আমেরিকার ওপর দু’টি দায়িত্ব : ইরাককে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করা, ইরাককে ইরাকিদের হাতে ছেড়ে দেয়া। আমি ইরাকি জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার করে দিয়েছি, আমরা এখানে সামরিক ঘাঁটি গড়ার চেষ্টা করছি না এবং কোনো ভূমি বা সম্পদের দাবি করব না। ইরাকিদের সার্বভৌমত্ব তাদের নিজস্ব এবং সে জন্যই আমি আমাদের যুদ্ধে থাকা ব্রিগেডগুলোকে আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে সরিয়ে আনতে আদেশ দিয়েছি। সে জন্য আমরা ইরাকের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের সাথে আমাদের চুক্তিকে মেনে চলব। সেই অনুযায়ী আমাদের সামরিক বাহিনীকে আগামী জুলাই মাসের ভেতর সব শহর থেকে সরিয়ে আনা হবে এবং ২০১২ সালের মধ্যে আমাদের সব সৈন্য সরিয়ে আনা হবে।

আমরা ইরাকে তাদের নিরাপত্তা বাহিনী এবং অর্থনীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করব। কিন্তু আমরা একটি নিরাপদ এবং অখণ্ডিত ইরাককে সহযোগী হিসেবে সহযোগিতা করব, অভিভাবক হিসেবে নয়। সবশেষে ঠিক যেমন আমেরিকা কখনোই উগ্রবাদীদের সহিংসতা সহ্য করবে না, তেমনি কখনোই আমাদের নীতি পরিবর্তনও করব না বা ভুলে যাব না। আমাদের দেশের জন্য নয়-এগারো একটি বিশাল আঘাত। এতে যে ভীতি ও ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছিল তা বোধগাম্য, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা আমাদের ঐতিহ্য ও আদর্শের বিপরীতে তাড়িত করেছিল। আমি যুক্তরাষ্ট্রে শারীরিক নির্যাতন সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করে দিয়েছি এবং আগামী বছরের প্রথমেই গুয়ানতানামো বে কারাগার বìধ করার আদেশ দিয়েছি।

সব জাতির সার্বভৌমত্ব এবং আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমেরিকা নিজেকেই নিজে সুরক্ষিত করবে এবং আমরা সেটা মুসলমান সম্প্রদায়ের যারা হুমকির সম্মুখীন তদের সাথে সহযোগী হয়েই করব, যত তাড়াতাড়ি উগ্রপন্থীদের বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হবে, মুসলমান সম্প্রদায়ে তারা তত বেশি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে এবং তত তাড়াতাড়ি আমরা সবাই নিরাপদ হতে পারব, আমেরিকার সেনাবাহিনীও তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে আসবে।
দ্বিতীয় প্রধান উত্তেজনার উৎস যা নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই সেটা হচ্ছে, ইসরাইল, ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বের মধ্যকার পরিস্খিতি। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইসরাইলের দৃঢ় বìধনের কথা সবারই জানা। এই বìধন ভাঙার মতো নয়। এটা ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক বìধনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, ইহুদিদের স্খায়ী নিবাসের জন্য উচ্চাভিলাষের স্বীকৃতি, যা একটি মর্মান্তিক ইতিহাস থেকে শুরু হয়েছিল, সেটাকে অস্বীকার করা যাবে না। ইহুদিরা সমগ্র বিশ্বে ধর্মীয় কারণে শত শত বছর থেকে নিগৃহীত হয়ে আসছে এবং এই ইহুদিবাদের বিরুদ্ধতার শেষ পরিণতি ছিল নজিরবিহীন হলোকাস্ট। আমি আগামীকাল বুচেনওয়ার্ল্ডে যাব, যেটি অনেক ছাউনির একটি অংশ ছিল যেখানে তৃতীয় রাইখ দ্বারা ইহুদিদের জোরপূর্বক দাসত্বে বাধ্য করা হয়েছিল, শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছিল তারপর গুলি করে এবং গ্যাস দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল যা আজকের ইসরাইলের মোট ইহুদি জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এই সত্যকে অস্বীকার করা ভিত্তিহীন, জ্ঞানহীন এবং হিংসাত্মক। ইসরাইলকে ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি, ইহুদিদের সম্পর্কে বারবার একই ধরনের হীন মন্তব্য সম্পূর্ণ ভুল, এটা শুধু ইসরাইলিদের মনে সেই বেদনাদায়ক স্মৃতিকেই উঠিয়ে নিয়ে আসে, যা এ এলাকার মানুষের কাম্য শান্তিকে নষ্ট করে। অন্য দিকে এ কথাও অনস্বীকার্য ফিলিস্তিনিরা মুসলমান ও খ্রিষ্টান­ তারা তাদের আবাসভূমির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রায় ৬০ বছর থেকে তারা তাদের উচ্ছেদ অবস্খায় থাকার কষ্ট সহ্য করে আসছে, পশ্চিমতীরের শরণার্থী শিবিরে অপেক্ষা করছে, গাজা এবং অন্যান্য প্রতিবেশীদের ভূমিতে একটি শান্তিপূর্ণ নিরাপদ জীবনের জন্য অপেক্ষা করছে যা তারা কখনোই পায়নি। বড় বা ছোট যা-ই আসুক এই দখলদারির জন্য তারা প্রতিদিন এই হীনতা সহ্য করে। সুতরাং এখানে কোনো সন্দেহ থাকা চলবে না যে ফিলিস্তিনিদের অবস্খাও অসহনীয় এবং ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব আবাসভূমিতে সম্মানের সাথে বাঁচা এবং সুযোগের আকাáক্ষা ও ন্যায্য পাওনা থেকে আমেরিকা কখনো ঘুরে দাঁড়াবে না। কয়েক দশক থেকে আমরা অচলাবস্খায় আছি : দুই দল মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবি, প্রত্যেকে তাদের বেদনাদায়ক স্মৃতি নিয়ে, যা তাদের আপসে আসা থেকে কৌশলে দূরে সরিয়ে রাখছে। আঙুল তাক করা খুব সহজ­ ফিলিস্তিনিরা তুলে ধরতে পারে ইসরাইল গঠন হওয়ার কারণে তদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া এবং ইসরাইলিরাও তুলে ধরতে পারে নিয়মিতভাবে ইতিহাসজুড়ে তদের ওপর নিজেদের সীমান্তের ভেতর থেকে এবং সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাসী হামলার কথা। কিন্তু আমরা এক দিক থেকে কিংবা অন্য দিক থেকে যদি বিরোধটাই দেখি তা হলে আমরা সত্য থেকে অìধ থাকব। উভয় জাতির জন্য আকাáক্ষা মেটানোর একমাত্র সমাধান হচ্ছে নিজস্ব আবাসভূমি, যেখানে ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিরা নিরাপদে ও শান্তিতে থাকতে পারবে। সেটা ইসরাইলের স্বার্থ, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ এবং আমেরিকার স্বার্থ। সে জন্য আমি চাই ব্যক্তিগতভাবে এ ফলাফলের জন্য ধৈর্য নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। রোডম্যাপে চুক্তি অনুযায়ী দলগুলো তাদের দায়বদ্ধতা পরিষ্কারভাবে জানে। তাদের জন্য এবং আমাদের জন্য এখন সময় এসেছে শান্তি আনার জন্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করার।

ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই সহিংসতা ত্যাগ করতে হবে। হত্যা ও সহিংসতা দিয়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি করা ভুল, এতে সফলতা আসে না। শত শত বছর থেকে আমেরিকায় কৃষাঙ্গরা দাসত্বের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েছে, সমাজের ঘৃণ্য জাতি হিসেবে আলাদা জীবনযাপন করেছে। কিন্তু আজ তাদের এই সম অধিকার সহিংসতার মধ্য দিয়ে আসেনি। এসেছে আমেরিকার পত্তনের আদর্শের ওপর শান্তিপূর্ণ প্রত্যয় প্রকাশের মাধ্যমে। এই একই কাহিনী বলতে পারে দক্ষিণ আফিন্সকা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ; পূর্ব ইউরোপ থেকে ইন্দোনেশিয়ার জনগণ। এটা এমনই একটি কাহিনী যা একটি সহজ সত্য বলে দেয়, সহিংসতা সব প্রচেষ্টার শেষ ডেকে আনে। একটি ঘুমন্ত শিশুকে রকেট মেরে উড়িয়ে দিয়ে এবং একজন বৃদ্ধ নারীকে বাসে উড়িয়ে দেয়ার মধ্যে কোনো শক্তি বা বীরত্বের নিদর্শন পাওয়া যায় না। এভাবে আদর্শের জোর দেখানো যায় না, এতে তার আত্মসমর্পণই ব্যক্ত হয়। ফিলিস্তিনিদের জন্য এখনি এর দিকে দৃষ্টি দেয়ার সময় যে, তারা কি গড়তে পারে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্খা তাদের জনগণের জন্য উপযুক্ত, তা দ্বারা পরিচালনা করার ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। হামাসের জন্য কিছু কিছু ফিলিস্তিনির সমর্থন আছে কিন্তু হামাসেরও মনে রাখতে হবে, তাদেরও তাদের সমর্থকদের প্রতি দায়িত্ব আছে। ফিলিস্তিনিদের আশা-আকাáক্ষা ও তাদের একতা বদ্ধ করার ভূমিকা পালন করতে হলে হামাসকে অবশ্যই হত্যা ও হানাহানি বìধ করতে হবে। অতীতের চুক্তিগুলোকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং দেশ হিসেবে ইসরাইলকে টিকে থাকার অধিকার দিতে হবে।

একইভাবে ইসরাইলকেও অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তাদের যে রকম টিকে থাকার অধিকার আছে একইভাবে তাদেরও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের কথাও অস্বীকার করলে চলবে না। যুক্তরাষ্ট্র যারা ইসরাইলকে সমুদ্রে ঠেলে দেয়ার কথা বলে তাদের বৈধতা মেনে নেয় না, কিন্তু আমরা ইসরাইলের চলতে থাকা বসতি স্খাপনের বৈধতাও মেনে নেই না। এই বসতি নির্মাণ আগের চুক্তিকে ভঙ্গ করে, শান্তি অর্জনের চেষ্টাকে ছোট করে। এখন সময় এসেছে বসতি স্খাপন বìধ করার। ইসরাইলকে অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের ভালোভাবে বেঁচে থাকার, কাজ করার এবং সামাজিক উন্নতির ব্যাপারে তাদের যে দায়বদ্ধতা আছে তা পালন করতে হবে। ঠিক যেমন গাজায় ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর অব্যাহত মানবিক সমস্যা ইসরাইলের নিরাপত্তার কাজে আসে না, একইভাবে পশ্চিমতীরের লেগে থাকা সুযোগের অভাবের ব্যাপারেও সাহায্য আসে না। ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি অবশ্যই শান্তি স্খাপনের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হতে হবে এবং ইসরাইলের উচিত এই উন্নতিকল্পে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া এবং সবশেষে আরব রাষ্ট্রগুলোকে বুঝতে হবে আরবের শান্তির পদক্ষেপ নেয়া ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সেখানেই দায়িত্বের শেষ হয়ে যায়নি। এই আরব-ইসরাইল বিরোধকে আরব জাতির জনগণের অন্যান্য সমস্যা থেকে দূরে রাখার জন্য আর ব্যবহার করা যাবে না। বরং এটাকে অবশ্যই একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে যাতে তাদের রাষ্ট্রকে টিকে থাকার মতো করে গড়ে তুলতে পারে; ইসরাইলের বৈধতা মেনে নিতে হবে, অতীতে নিজেকে পরাজিত হওয়ার পথ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে উন্নতির পথ বেছে নিতে হবে। যারা শান্তি খোঁজে, আমেরিকা সব নীতি নিয়ে তাদের পেছনে শামিল থাকবে। আমরা প্রকাশ্যে সেটাই বলব, যা আমরা ব্যক্তিগতভাবে ইসরাইলি, ফিলিস্তিনি এবং আরবদেরও বলি। আমরা শান্তি চাপিয়ে দিতে পারি না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে অনেক মুসলমান স্বীকার করে, ইসরাইল চলে যাবে না; ঠিক একইভাবে অনেক ইসরাইলি অনুধাবন করে যে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রয়োজন আছে। এখন সময় এসেছে, সেটার ওপর কাজ করার­ যা সবাই সত্য বলে মনে করে।
অনেক অশ্রুপাত হয়েছে। অনেক রক্তপাত হয়েছে। আমাদের সবারই একটি দায়িত্ব আছে এর ওপর কাজ করার, যে দিন দেখা যাবে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলের মায়েরা দেখতে পারবেন, তাদের শিশুদের আর ভয়ভীতির মধ্যে বড় হতে হবে না, যখন দেখা যাবে যে তিনটি মহান বিশ্বাসের পবিত্র ভূমি একটি শান্তির স্খান, যা ঈশ্বর চেয়েছিলেন; যখন ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং মুসলমানদের জন্য জেরুসালেম একটি মজবুত স্খান হবে এবং একটি স্খান যেখানে ইব্রাহিমের সব সন্তান নিরাপদে বিচরণ করতে পারবে ঠিক যেমনটি ইসরার কাহিনীতে উল্লেখ করা হয়েছিল; যখন হজরত মূসা আ:, ঈসা আ: এবং মুহাম্মদ সা: প্রার্থনার জন্য একত্র হয়েছিলেন। তৃতীয় উত্তেজনার উৎস হচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর জাতিগত স্বার্থের অংশীদারিত্বের অধিকার ও দায়িত্ব। এই ব্যাপারটি কিছু দিন যাবৎ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসলামিক ইরানি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হয়ে আছে। অনেক বছর হলো ইরান তার পক্ষ থেকেই নিজেকে আমার দেশের বিরুদ্ধে সংজ্ঞায়িত করেছে এবং সত্যিকার অর্থে আমাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ ও আবেগপূর্ণ একটি ইতিহাস আছে। স্নায়ুযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ইরানের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দেয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা নিয়েছিল।

ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরান জিম্মি নেয়ার ব্যাপারে এবং সামরিক ও বেসামরিক মার্কিন নাগরিকদের ওপর হামলার ব্যাপারে ভূমিকা নিয়েছিল। এই ইতিহাস সবার ভালো জানা আছে। অতীতের মতো এভাবে ফাঁদে পড়ে না থেকে, আমি এটা ইরানি সরকার এবং জনগণের কাছে পরিষ্কারভাবে বলেছি যে আমার দেশ এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইরান কিসের বিরুদ্ধে তা নয়, বরং কী ধরনের ভবিষ্যৎ সে গড়ে তুলতে চায়?
কয়েক দশকের অবিশ্বাসকে ভুলে যাওয়া এত সহজ হবে না, কিন্তু আমরা সত্যনিষ্ঠ, সমাধান ও প্রত্যয়ের সাথে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের দুই দেশের মধ্যে আলোচনার জন্য অনেক বিষয় থাকবে, আমরা কোনো প্রকার পূর্বশর্ত ছাড়াই একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে আগ্রহী। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রের প্রশ্নে সবার জানা আছে যে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে এসেছি। এটা শুধু আমেরিকার স্বার্থেই নয়, এটা মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বìধ করার জন্য দরকার, যা এই এলাকাকে অত্যন্ত ঝুঁকির পথে টেনে নিয়ে যাবে বিশ্বের অস্ত্রের বৃদ্ধি বìধ করার প্রয়াসকে বানচাল করবে।

আমি বুঝি, অনেকে এর বিরুদ্ধাচরণ করেন কোন দেশের অস্ত্র আছে এবং কোন দেশের নাই। কোনো দেশেরই উচিত নয় বেছে নেয়া যে, কোনো দেশ পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে। সে জন্য আমি খুব শক্তভাবে আমেরিকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছি যে, এমন একটি বিশ্ব চাই যেখানে কোনো দেশই পারমাণবিক অস্ত্র রাখবে না এবং ইরানসহ যেকোনো দেশ শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার পাবে যদি সে পারমাণবিক অস্ত্র বৃদ্ধির বিরুদ্ধে চুক্তির সব নিয়ম মেনে চলার দায়িত্ব নেয়। এই প্রতিশ্রুতি এই চুক্তির মূলেই আছে এবং সবার উচিত এই প্রতিশ্রুতি রাখা এবং আমি আশা করি যে এই এলাকার সব দেশই এই লক্ষ্যকে ব্যবহার করতে পারবে।

এই চতুর্থ বিষয় যেটা নিয়ে আমি কথা বলব, সেটি হচ্ছে গণতন্ত্র। আমি জানি, গত কয়েক বছর যাবৎ এই মানবাধিকার উন্নয়নের ব্যাপারে কিছু বিতর্ক দেখা দিয়েছে এবং এই বিতর্কের বড় একটি অংশ ইরাক সম্পর্কিত। সুতরাং আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, কোনো দেশের সরকারের কোনো নিয়ম অন্য কোনো দেশের ওপর চাপানো যাবে না বা চাপানো উচিত হবে না। সেটি যেসব সরকার জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়, অবশ্য তাদের প্রতি আমার অঙ্গীকারকে খাটো করে না। প্রতিটি দেশই নিজ নিজ জনগণের ঐতিহ্যের ওপর দাঁড়িয়ে নিজেদের মতো করে এই মূল নীতিতে প্রাণসঞ্চার করেছে। আমেরিকা এটি ধরে নেয় না যে প্রত্যেকের জন্য সবচেয়ে ভালো কোনটা, যেমন আমরা একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ফলাফল কি তা অনুমান করতে পারি না। কিন্তু আমার এই অনবনত বিশ্বাস আছে যে সব মানুষেরই আকুল আকাáক্ষা থাকে কিছু জিনিসের জন্য, আপনার মনের কথা বলার সক্ষমতা এবং কিভাবে আপনি শাসিত হবেন সে বিষয়ে আপনার মতামত দেয়ার, আইনের শাসনের প্রতি আস্খা রাখা এবং বিচার পরিচালনায় সাম্য আনা; স্বচ্ছ সরকার এবং যা জনগণের কাছ থেকে কিছু লুকায় না, আপনার পছন্দমতো জীবনযাপনের স্বাধীনতা। এগুলো শুধু আমেরিকান চিন্তাধারা নয়, এগুলো মানবাধিকার, সে কারণেই সর্বত্র আমরা এগুলোর প্রতি সমর্থন দিয়ে যাব। যেসব সরকার এসব অধিকারকে রক্ষা করে পরিণতিতে তারা অনেক বেশি স্খিতিশীল, সফল ও নিরাপদ থাকে। দমনমূলক ব্যবস্খা কখনোই চিন্তাধারাকে তাড়িয়ে দিতে সফল হয় না। আমেরিকা পৃথিবীজুড়ে শান্তিপূর্ণ ও আইনশৃঙ্খলা মান্যকারী যেসব কণ্ঠস্বর শোনা যাবে তাদের সবার অধিকারকে শ্রদ্ধা করে, এমনকি যদি তাদের সাথে আমরা একমত না-ও হই। আমরা সব নির্বাচিত, শান্তিপূর্ণ সরকারকে স্বাগতম জানাব এই শর্তে যে তারা তাদের জনগণকে শ্রদ্ধা করে শাসনকার্য পরিচালনা করবে। এই শেষের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কিছু লোক আছেন যারা গণতন্ত্রের প্রবক্তা বনে যান তখনই যখন ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়েন; ক্ষমতায় থাকাকালে তারা নির্মমভাবে অন্যের অধিকারকে দমন করেন। যেখানেই বিষয়টি প্রযোজ্য হোক না কেন জনগণের এবং জনগণ দ্বারা পরিচালিত সরকার যারা ক্ষমতায় আছে তাদের সবার জন্য একটি মাপকাঠিই নির্ধারণ করা আছে : আপনি আপনার ক্ষমতা বজায় রাখবেন সবার সম্মতি নিয়ে, নিপীড়ন করে নয়; আপনাকে অবশ্যই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারগুলোকে সম্মান করতে হবে, এবং আপনার দলের ঊর্ধ্বে আপনার জনগণের এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বৈধ কাজের স্বার্থকে স্খান দিতে হবে। এই উপাদান ছাড়া, কেবল নির্বাচন সত্যিকার গণতন্ত্র আনতে পারে না।

এরই সাথে পঞ্চম যে বিষয়টিতে আমরা মনোযোগ দেবো সেটা হচ্ছে ধর্মীয় স্বাধীনতা। ইসলাম ধর্মের আছে গর্ব করার মতো সহনশীলতার ঐতিহ্য। আমরা সেটা দেখতে পাই ধর্মবিচারের সময়ে আন্দালুসিয়া ও কর্ডোভায়। আমি প্রত্যক্ষভাবে সেটা দেখেছি আমার বালক বয়সে ইন্দোনেশিয়ায়, যেখানে ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টানরা উপাসনা করত স্বাধীনভাবে একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে। সেই চেতনারই আজ আমাদের প্রয়োজন। প্রতিটি দেশের মানুষকে মুক্ত মনে বেছে নেয়ার এবং মন, হৃদয় ও আত্মার প্রণোদনার ওপর নির্ভর করা বিশ্বাসের ভিত্তিতে বেঁচে থাকার সুযোগ দিতে হবে। এই সহনশীলতা ধর্মের সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য, কিন্তু এটি বিভিন্নভাবেই বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
কোনো কোনো মুসলমানের মধ্যে এমন ঝোঁক আছে যা ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী­ নিজের ধর্মবিশ্বাসকে পরিমাপ করতে অন্যের ধর্মবিশ্বাসকে বাতিল করে দেয়। ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রাচুর্যকে অবশ্যই বজায় রাখতে হবে, সেটা লেবাননের কোনো ম্যারোনাইটের জন্য হোক বা মিসরের কোনো কপের জন্যই হোক। আর আমাদের সততার সাথে মুসলমানদের মধ্যেও ভ্রান্ত দলাদলি অবশ্যই বìধ করতে হবে, সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যকার বিভাজনও বìধ করতে হবে, যা কিনা বিশেষত ইরাকে দু:খজনক সহিংসতার জন্ম দিয়েছে।

সব মানুষের একত্রে থাকার সক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ধর্মীয় স্বাধীনতা। আমাদের অবশ্যই সব সময় সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কিভাবে আমরা এটা সুরক্ষা করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মুসলমানদের জন্য তাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা পূর্ণ করার লক্ষ্যে দরিদ্র সেবা-দানের ব্যবস্খাকে কঠোরতর করা হয়েছে। সে কারণে আমি আমেরিকার মুসলমানদের সাথে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এটা নিশ্চিত করতে যে তারা যেন জাকাতের শর্ত পূর্ণ করতে পারেন। অনুরূপভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে মুসলমান নাগরিকদের তাদের মতো করে ধর্ম অনুশীলন করতে বাধা প্রদান না করা। উদাহরণস্বরূপ, মুসলমান নারীরা কী পোশাক পরবেন তা নিয়ে আদেশ না দেয়া। আমরা কোনো ধর্মের প্রতি আমাদের বৈরিতাকে উদারতার ভণ্ডামি দিয়ে গোপন করতে পারব না। ধর্মবিশ্বাস আমাদের একত্র করবে। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে আমরা দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি সেবামূলক উদ্যোগ নিয়ে­ যা খ্রিষ্টান, মুসলমান ও ইহুদিদের একত্র করবে। এ কারণেই আমরা স্বাগত জানাই সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহর বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীদের মধ্যকার সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টা সভ্যতার জোটে তুরস্কের নেতৃত্বকে। দুনিয়াজুড়ে, আমরা এই সংলাপকে পরিবর্তন করতে পারি বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীদের সেবামূলক কাজে, যাতে যেসব মানুষ কর্মোদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যায় তাদের মধ্যে সেতুবìধ রচিত হয়।
ষষ্ঠ বিষয় যেটি নিয়ে আমি বলব সেটি হচ্ছে নারীর অধিকার। আমি জানি এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে। পশ্চিমা দুনিয়ার কারো কারো এই দৃষ্টিকোণকে আমি প্রত্যাখ্যান করি, যে নারী তার চুল ঢেকে রাখে সে কোনো না কোনোভাবে কম যোগ্যতাসম্পন্ন। তবে আমি এটা বিশ্বাস করি, যে নারীর শিক্ষাকে অগ্রাহ্য করা হয় তাকে সমযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করা হয়। এটা কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয় যে যেসব দেশে নারীরা ভালোভাবে শিক্ষিত তাদের অনেক বেশি সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমি পরিষ্কারভাবেই বলছি : কোনো অবস্খাতেই নারীর সমযোগ্যতার প্রশ্নটি শুধু ইসলামের জন্য একটি বিষয় নয়। তুরস্ক, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ায় আমরা দেখেছি মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশগুলো নারীকে নেতৃত্ব দানের জন্য নির্বাচিত করেছে। আমি নিশ্চিত যে সমাজে আমাদের কন্যারা আমাদের পুত্রের মতোই অবদান রাখতে পারেন। আমাদের অভিন্ন সমৃদ্ধি আসতে পারে সব মানুষকে নারী-পুরুষ সবাইকে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকশিত করার সুযোগ দিয়ে। আমি এটা মনে করি না যে পুরুষের সমকক্ষতা অর্জনের জন্য পুরুষদের মতো নারীদেরও একই জিনিস বেছে নিতে হবে এবং আমি সম্মান জানাই সেই সব নারীকে যারা তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা পালনে তাদের মতো জীবনযাত্রা বেছে নেন। সেটা তাদের পছন্দের বিষয়। সে কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেকোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের সাথে অংশীদার হতে চায় বালিকাদের সাক্ষরতা বাড়ানোর উদ্যোগে সমর্থন দিয়ে ও তরুণীদের সাহায্য করতে চায় ক্ষুদ্র পরিসরে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে কর্মসংস্খানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের জীবনের স্বপ্নকে সতেজ রাখতে।
পরিশেষে আমি আলোচনা করতে চাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুযোগ সম্পর্কে।

আমি জানি যে অনেকের জন্য, বিশ্বায়নের চেহারাটা অসঙ্গতিপূর্ণ। ইন্টারনেট ও টেলিভিশন জ্ঞান ও তথ্য এনে দিতে পারে, কিন্তু সেই সাথে বাড়িতে অশোভন যৌনতা এবং বিবেকহীন হিংস্রতাকেও আনে। ব্যবসা-বাণিজ্য নতুনতর নতুন সম্পদ ও সম্ভাবনাগুলো এনে দিতে পারে, কিন্তু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশাল ভাঙন ও পরিবর্তনও আনে। আমেরিকাসহ সব জাতির মধ্যেই এই পরিবর্তন আনতে পারে ভীতি। ভীতি কারণ আধুনিকতার ফলে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক পছন্দগুলোর ওপর, রাজনীতি, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের পরিচিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাব বলে মনে করি। এই পরিচিতির মধ্যে হচ্ছে আমাদের কাছে সর্বাধিক কাáিক্ষত আমাদের সমাজ, পরিবার, ঐতিহ্য ও ধর্মবিশ্বাস।

উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের মধ্যে কোনো অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলো তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বজায় রেখেই অর্থনীতির প্রভূত উন্নয়নসাধন করেছে। একই কথা প্রযোজ্য কুয়ালালামপুর থেকে দুবাই পর্যন্ত মুসলিম সংখ্যাগিরষ্ঠ দেশে বিস্ময়কর অগ্রগতির ক্ষেত্রে। প্রাচীনকালে আমাদের নিজেদের কালেও মুসলমান সমাজ উদ্ভাবন ও শিক্ষার পুরোভাগে ছিল। তেলের কারণে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো বিশাল সম্পদের অধিকারী হয়েছে এবং কোনো কোনো দেশ এখন আরো ব্যাপক উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করছে। কিন্তু আমাদের সবাইকে এটা স্বীকার করতে হবে যে শিক্ষা ও উদ্ভাবনই হবে একুশ শতকের মূল বিষয়। অনেকগুলো মুসলিম রাষ্ট্রে এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ যৎসামান্য। আমি আমার নিজের দেশে এ ধরনের বিনিয়োগের ওপর জোর দিচ্ছি। আর আমেরিকা যদিও অতীতে এ অঞ্চলে গ্যাস ও তেলের ওপরই নজর দিয়েছে, আমরা এখন ব্যাপক ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হতে চাই।

শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা বিনিময় কর্মসূচি সম্প্রসারিত করব এবং বৃত্তি বৃদ্ধি করব, যে রকম বৃত্তিতে আমার বাবা এসেছিলেন এই দেশে। একইভাবে আরো বেশি আমেরিকানদের আমরা উৎসাহিত করব মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে গিয়ে অধ্যয়ন করতে। আমরা প্রতিশ্রুতিশীল মুসলমান ছাত্রদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজের প্রশিক্ষণ দেবো, গোটা বিশ্বের শিক্ষক ও শিশুদের জন্য অনলাইন শিক্ষাক্রমের ওপর বিনিয়োগ করব; সৃষ্টি করব নতুন অনলাইন নেটওয়ার্কের, যাতে ক্যানসাসের এক তরুণ মুহূর্তের মধ্যেই কায়রোর এক তরুণের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর, আমরা একটি নতুন ব্যবসায়ী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সৃষ্টি করব যারা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে আমাদের সহপক্ষদের সাথে কাজ করবে। আর আমি এ বছরই উদ্যোক্তাদের একটি শীর্ষ বৈঠকের উদ্যোগ নেবো যাতে চিহ্নিত করা হবে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলোর ব্যবসায়িক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক উদ্যোক্তাদের নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ গভীরতর করা যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য আমরা একটি নতুন তহবিলের সূচনা করব মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য এবং তাদের চিন্তাভাবনাকে স্খানান্তর করে বাজারে নিয়ে আসব যাতে তারা কর্মসংস্খান করতে পারে। আমরা আফিন্সকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ কেন্দ্র খুলব, এবং নিযুক্ত করব নতুন বিজ্ঞান-দূতদের যারা সেই সব কার্যক্রমে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে যা নতুন জ্বালানির উৎসগুলো গড়ে তুলবে, প্রকৃতিবাìধব কাজের সৃষ্টি করবে ডিজিটাল-নির্ভর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ব্যবস্খা করবে এবং সুপেয় পানি ও নতুন নতুন ফসল ফলানোর উন্নয়ন করবে। আজ আমি ঘোষণা করছি ইসলামি সম্মেলন সংস্খার সাথে মিলে সমূলে পোলিও উৎপাটনের বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার কথা এবং আমরা মুসলমান সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করে শিশু ও মাতৃস্বাস্খ্যসেবাকে উন্নত করব।

মানুষের উন্নততর জীবন অন্বেষায় আমেরিকানরা প্রস্তুত আছে নাগরিক এবং সরকার; সম্প্রদায়গত সংগঠন, ধর্মীয় নেতা এবং সমগ্র পৃথিবীর মুসলমান ব্যবসায়ীদের সাথে যোগ দিতে। যেসব বিষয়গুলোর আমি বর্ণনা দিলাম সেগুলো বাস্তবায়ন করা কোনো সহজ কাজ হবে না। তবে আমাদের একটি দায়িত্ব আছে এক সাথে মিলে সেই কাáিক্ষত বিশ্ব গড়ার, সেই বিশ্ব যেখানে উগ্রপন্থীরা আর কখনোই আমাদের জনগণকে হুমকি দেবে না, মার্কিন বাহিনী ঘরে ফিরে আসবে; সেই পৃথিবী যেখানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিরা নিজস্ব রাষ্ট্রে নিরাপদে বসবাস করবে এবং পারমাণবিক শক্তি ব্যবহৃত হবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, সেই পৃথিবী যেখানে সরকার তার নাগরিকদের সেবা দান করবে, স্রষ্টার সব সন্তানের অধিকারগুলোকে সম্মান দেখানো হবে। এইগুলো পারস্পরিক স্বার্থ।

আমি জানি আনেকেই আছেন­ মুসলমান এবং অমুসলমান­ যারা প্রশ্ন করবেন আমরা নবসূচনার পথে এগিয়ে যেতে পারব কি না। অন্য অনেকেই বিভাজনের অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিতে ও অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন। অনেকে পরামর্শ দেন যে এই প্রচেষ্টার কোনো মূল্য নেই কারণ আমাদের এই বিরোধ নিয়তি নির্দিষ্ট এবং সভ্যতার অনিবার্য বিপর্যয়ের জন্য এই সংঘর্ষ। আর অনেকেই পুরোপুরিভাবে সংশয়বাদী যে প্রকৃত পরিবর্তন আসবে কি না। সেখানে আছে এত বেশি ভীতি, এত বেশি অবিশ্বাস যে বছরের পর বছর ধরে তা গড়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা যদি বেছে নিই যে অতীতেই বìধনেই পড়ে রইব আমরা তাহলে কিছুতেই সামনে এগিয়ে যেতে পারব না। এবং আমি বিশেষভাবে এটা বলতে চাই প্রতিটি ধর্মবিশ্বাসী, প্রতিটি দেশের তরুণ-তরুণীকে আপনারা, অন্য কারো চেয়ে অনেক বেশি, এই পৃথিবীকে নতুন করে কল্পনা করার, নতুন করে গড়ার সামর্থ্য রাখেন। আমরা সবাই সময়ের হিসাবে মুহূর্তের জন্য এই পৃথিবীর অংশে ভাগ বসাতে এসেছি।

যুদ্ধ বন্ধের চেয়ে যুদ্ধ শুরু করা খুবই সহজ। অন্যকে দোষ দেয়া সহজ নিজের ভেতরে দেখার চেয়ে; এটা সহজ অন্যের মধ্যে কী পার্থক্য আছে সেটা দেখা আমাদের মধ্যকার অভিন্নতার চেয়ে। কিন্তু আমাদের বেছে নিতে হবে সঠিক পথটি, শুধু সহজ পথটিই নয়। প্রতিটি ধর্মের অন্তস্তলে একটি নিয়ম আছে, সেটা হলো­ আমরা অন্যের প্রতি তা-ই করি যা আমাদের আমরা অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি। এই সত্য জাতি ও মানুষের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। এই বিশ্বাস নতুন কিছু নয়; এটা কালো, সাদা বা বাদামি নয়; সেটা খ্রিষ্টান বা মুসলমান বা ইহুদিও নয়। এটা হলো সেই বিশ্বাস যা সভ্যতার দোলনাতেই স্পন্দিত হয়েছিল, এবং এটা হলো সেই বিশ্বাস যা স্পন্দিত হয়েছে সভ্যতার দোলনায় এবং এখনো যা বিশ্বজুড়ে লাখো-কোটি মানুষের বুকে স্পন্দিত হয়ে চলেছে। এটা হলো অন্য মানুষের প্রতি আস্খা, এবং এটা তা-ই যা আজ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমাদের সেই সামর্থ্য আছে যে পৃথিবী চাই তাকে বানানোর, তবে শুধু যদি কি লিখা আছে সেটা মনে রেখে আমাদের মনে নবসূচনা সৃষ্টির সাহস থাকে।

পবিত্র কুরআন আমাদের বলে, হে মানবজাতি, আমি তোমাদের পুরুষ ও নারী হিসেবে সৃষ্টি করিয়াছি; আমি তোমাদের জাতি ও গোত্রে ভাগ করিয়াছি যাতে তোমরা একে অন্যকে জানিতে পারো। তালমুদ আমাদের বলে : সমগ্র তৌরাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে শান্তি প্রবর্তন করা। পবিত্র বাইবেল আমাদের বলে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারীরা আশীর্বাদপ্রাপ্ত, তাহাদের বলা হইবে ঈশ্বরের সন্তান। পৃথিবীর মানুষ একত্রে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। আমরা জানি সেটি স্রষ্টারও ইচ্ছা। এখন এই পৃথিবীতে এটি আমাদেরই কাজ।

ধন্যবাদ। এবং আপনাদের ওপর ঈশ্বরের শান্তি বর্ষিত হোক। অসংখ্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।
কায়রো বিশববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর।
৪ঠা জুন,২০০৯ , ১:১০ মি ( স্খানীয় সময়)

ভালো লাগলে শেয়ার করুন