রেকর্ড...শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ
উইকিলিকসে মার্কিন দূতাবাসের গোপন তারবার্তা ফাঁস
নয়া দিগন্ত ডেস্ক

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অনেক অভিযোগ রয়েছে বলে ঢাকা থেকে মার্কিন দূতাবাস গোপন তারবার্তা পাঠিয়েছিল। সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া মার্কিন দূতাবাসের গোপন বার্তায় এ এসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। তারবার্তায় বলা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নূর আলী ও তাজুল ইসলাম ফারুক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তায় রাশিয়া থেকে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগের কথাও উল্লেখ রয়েছে। ওয়াশিংটনে পাঠানো সে তারবার্তায় (ইউএনসিএলএএস ০০১১৬১) বলা হয়, চাঁদাবাজির অভিযোগে ১৬ জুলাই ২০০৭ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হয়। ২০০১ সালে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট নির্মাণে অনুমতির বিনিময়ে শেখ হাসিনা ও তার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে আদালতে উঠানোর পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট তার জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। সংসদ ভবন এলাকায় ডেপুটি স্পিকারের জন্য নির্মিত খালি বাড়িটিকে সাবজেল হিসেবে ঘোষণা করে তাকে সেখানে আটক রাখা হয়। টেকনো প্রম এক্সপোর্ট নামের রাশিয়ান বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের স্খানীয় প্রতিনিধি ইস্টকোস্ট ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্খাপনা পরিচালক আজম চৌধুরী ১২ জুন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। আজম চৌধুরী তার মামলায় বলেন, ২০০০ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ও শেখ সেলিম স্বাস্খ্যমন্ত্রী থাকাকালে টেকনো প্রম নারায়ণগঞ্জে একটি বিদ্যুৎ প্লান্টের প্রথম ধাপটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। কিন্তু আজম চৌধুরীকে শেখ সেলিম জানান যে, ‘কমিশন’ প্রদান না করা হলে শেখ হাসিনা প্রকল্পটি বìধ করে দেবেন এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে টেকনো প্রমের পাওনা পরিশোধ আটকে রাখতে বলবেন। এ পরিস্খিতিতে আজম চৌধুরী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংকের আটটি চেকের মাধ্যমে শেখ সেলিমকে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা প্রদান করেন। শেখ সেলিমকে ২৯ মে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আদালতে প্রকাশ্য শুনানিতে স্বীকার করেন যে, তিনি ইস্টকোস্টের কাছ থেকে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা আদায় করেছিলেন এবং শেখ হাসিনার সাথে তা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (এসিসি) তদন্তকারীরা শেখ হাসিনা ও শেখ সেলিমের অ্যাকাউন্ট থেকে চেকগুলোর অস্তিত্ব পান।

শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পরপরই তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়ায় তার মায়ের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, পরোয়ানা ছাড়াই তাকে আটক করা হয়েছে এবং তার গ্রেফতার অগণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মামলাটির সাথে সংশ্লিষ্ট একজন সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে বিশেষ ক্ষমতাবলে নয়, বরং ঘুষের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই আইনজীবী আরো জানান, বাংলাদেশ ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী এ ধরনের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রয়োজন হয় না এবং শেখ সেলিমের সাক্ষ্য ছাড়াও ব্যাপক তদন্তের পর শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোপন তারবার্তায় এও উল্লেখ করা হয় যে, মিডিয়া ও সরকারি সূত্র অনুযায়ী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে আরো কয়েকটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। ওয়েস্টমন্ট পাওয়ার কোম্পানির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ফারুক ৯ এপ্রিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মামলা করেন। ফারুক অভিযোগ করেন যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে ৯০ মেগাওয়াটের একটি বার্জ-মাউন্টেড বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে তার কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। ওয়েস্টমন্ড চুক্তিটি সম্পাদন করতে পেরেছিল। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তারবার্তায় আরো বলা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইউনিক গ্রুপের পরিচালক ও ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলের ব্যবস্খাপনা পরিচালক নূর আলী একটি চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। মামলায় নূর আলী উল্লেখ করেন যে, একটি ১১০ মেগাওয়াট বার্জ-মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে তার কোম্পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসার জন্য ১৯৯৮ সালে তিনি শেখ হাসিনা ও তার চাচাতো ভাই শেখ হেলালকে পাঁচ কোটি টাকা এবং হেলালের স্ত্রীকে দু’টি অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা হস্তান্তর করেছেন। নূর আলী দাবি করেন যে, তিনি তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যক্তিগতভাবে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন, অবশিষ্ট টাকা তিনি সরাসরি হেলালকে
দিয়েছিলেন।দুর্নীতি দমন ব্যুরো ২০০১ সালে রাশিয়া থেকে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি ফিন্সগেট কেনায় দুর্নীতি নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার বিরুদ্ধে দু’টি দুর্নীতি মামলার শুনানি আবার শুরুর জন্য হাইকোর্টে আবেদন করে।

২০০২ সালের অক্টোবরে একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ হাসিনা ও অন্য সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে দুর্নীতি প্রশ্নে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সে মাসেই বিচার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হাইকোর্ট তাতে স্খগিতাদেশ দেয়। তারবার্তায় বলা হয়, ১১ এপ্রিল পুলিশ শেখ হাসিনা, জামায়াতে ইসলামী প্রধান মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং অপর ৫০ জন রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজপথে বিক্ষোভ ও দাঙ্গায় খুন, সহিংসতায় উসকানি ও অন্যান্য মারাত্মক অপরাধের জন্য মামলা করে। ঢাকার কেন্দ্রস্খলে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=all&sec=2