যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে ভূষিত ইউনূস

Dr. Yunus

ঢাকা, আগস্ট ১৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক 'প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম' এ ভূষিত হলেন।

বুধবার বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউজে আনুষ্ঠানিকভাবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৬ বিশিষ্টজনকে এ পদক পরিয়ে দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ, বিশ্বশান্তি, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এ পদক দিয়ে সম্মানিত করে থাকেন।

এ বছর আরও যারা 'প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম' পেলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- দক্ষিন আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং, মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের সাবেক বিচারপতি স্যান্ড্রা ডে ও'কনর, সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, মার্কিন অভিনেতা সিডনি পয়টার, আয়ারল্যান্ডের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসন, ঐতিহাসিক জো মেডিসিন ক্রো প্রমুখ।

সারাবিশ্বে 'গরিবের ব্যাংকার' হিসেবে পরিচিত ক্ষুদ্রঋণের জনক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তার তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৬০ সালে বিএ ও ১৯৬১ সালে এমএ সম্পন্ন করেন। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অফ ইকোনমিক্স-এ যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক নিযুক্ত হন। ১৯৬৫ সালে ইউনূস ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যান। ১৯৬৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যাণ্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রফেসর ইউনূস টেনেসির ন্যাশভিলে নাগরিক কমিটি গঠন করেন। 'বাংলাদেশ নিউজলেটার' নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অন্যান্য বাংলাদেশীদের সঙ্গে নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ তথ্য কেন্দ্র চালু করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অন্যদের সমর্থন আদায় এবং পাকিস্তানকে সামরিক সহযোগিতা প্রদান বন্ধ করতে মার্কিন কংগ্রেসে লবি করার উদ্দেশ্যে তিনি এসব উদ্যোগ নেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইউনূস ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনে যোগ দেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগ দেন। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষকে খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করার পর ইউনূস দারিদ্র্য দূরীকরণে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং তার অর্থনীতি বিভাগের একাডেমিক প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে গ্রামীণ অর্থনীতি কর্মসূচি চালু করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি নতুন ধরনের কৃষি সমবায় 'নবযুগ তেভাগা খামার' সংগঠিত করেন, যা পরবর্তীতে সরকার প্যাকেজড ইনপুট প্রোগ্রাম হিসেবে গ্রহণ করে।

১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামে অত্যন্ত দরিদ্র্য কিছু পরিবারের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার পর তিনি আবিষ্কার করেন যে, খুব সামান্য পরিমাণ ঋণ একজন দরিদ্র্য মানুষের জীবনে বড়ো ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

তিনি দরিদ্র্যদের ঋণ দেওয়ার জন্য প্রথাগত ব্যাংকগুলোর কাছে ধর্ণা দিয়ে দেখতে পেলেন তারা এ ব্যাপারে আগ্রহী নয়। কারণ, ব্যাংকগুলো মনে করে গরিব মানুষ ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত নয়। অনেক প্রচেষ্টার পর অবশেষে প্রফেসর ইউনূস একটি ক্রেডিট লাইন প্রতিষ্ঠায় সফল হলেন। তিনি নিজে গরিব মানুষের ঋণের জামিনদার হয়ে ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরে স্থানীয় জনতা ব্যাংক থেকে তাঁর প্রকল্পের মাধ্যমে জোবরা গ্রামের গরিব মানুষদের ঋণ দেওয়া শুরু করলেন।

১৯৮৩ সালের ২ অক্টোবর তার এই প্রকল্প পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়। যার নাম হলো 'গ্রামীণ ব্যাংক'।

প্রফেসর ইউনূসের অর্জিত অন্যান্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার, বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, সিডনি শান্তি পুরস্কার। আর বাংলাদেশে তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার (১৯৭৮), কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরস্কার (১৯৮৫) এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৮৭)।

অধ্যাপক ইউনূস ২৮টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। তিনি অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বোর্ডের সদস্য হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস-এর দু'টি বেস্ট সেলার বইয়ের লেখকও তিনি। এর একটি হচ্ছে- ব্যাংকার টু দি পুওর (১৯৯৭) এবং অপরটি- ক্রিয়েটিং এ্যা ওয়ার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি, সোশ্যাল বিজনেস এ্যান্ড দ্য ফিউচার অফ ক্যাপিটালিজম (২০০৮)।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এএনএস/এইচএ/০৩৩০ ঘ.