দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

Submitted by WatchDog on Friday, August 14, 2009

সময় আসে এবং সময় চলে যায়; সূখ, দুঃখ, হাসি-কান্না আর মায়া-মমতায় জড়ানো কিছু সৃত্মি পেছনে ফেলে সময় হারিয়ে যায় মহাকালের কক্ষপথে। এ নিয়েই বোধহয় মনুষ্য জীবন, সময়ের ঘোড়ায় চড়ে বেচে থাকার মহাযাত্রা। বাংলাদেশেও আমরা বেচে থাকি, তবে এ বেচে থাকা আর দশটা বেচে থাকার মত নয়, এ অন্য এক বেচে থাকা। এখানে বেচে থাকতে শুধু প্রকৃতির সাথে লড়াই করলেই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি চাই মানুষ, সমাজ, দেশ তথা মিথ্যা, অসততা, অনাচার আর পংকিলতার বিরুদ্বে লড়াই। তাই বলে বেচে থাকার এই বহুমূখী লড়াইয়ের কাছে আমাদের মানুষগুলো কিন্তূ সহজে পরাজয় মেনে নেয়না, তা না হলে ’৭১এ যেখানে আমাদের সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি আজ কেন তা হবে পনের কোটি? জীবন নিশ্চয় কোন না কোন বাকে আলিংগন করে জীবন এবং মৃত্যুর মাঝে বয়ে যাওয়া সূখের নদী। ৩৮ বছর বয়সী একটা দেশের এই জটিল সমীকরনের সাথে জড়িয়ে আছে এর মাটি, মানুষ আর তার হাজার বছরের ইতিহাস। একে ভালবাসা যেমন কঠিন, একে ঘৃনা করা ততই সহজ। বেচে থাকার এই দেশীয় দন্ধ নিয়েই আমার এ লেখা।

সাংবাদিকদের আমরা সবাই কমবেশী ভালবাসি, সন্মান করি, ভয় পাই এবং প্রয়োজনে ঘৃনা করি। অনেকেই সাংবাদিকদের সমাজের বিবেক বলতে পছন্দ করেন, সূখে দূখে আপন ভাবতে ভালবাসেন। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে, শহর বন্দরে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার সাংবাদিকদের জীবন কেমন আমাদের তা জানার দরকার হয়না, এর প্রয়োজনও আমরা অনুভব করিনা, কারণ সাংবাদিক নিজে নন, আমাদের প্রয়োজন তাদের পাঠানো খবর। নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে সাংবাদিকরা কি করে এই জটিল আর্থ-সামাজিক সমাজে বেচে থাকে তার পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য এক অধ্যায়, যা আমরা দেখেও দেখতে চাইনা, শুনেও না শোনার ভান করি।

বিদেশ এবং রাজধানী পর্ব শেষে ছোট একটা জেলা শহরে জীবনকে নতুন করে আবিস্কারের চেষ্টা করছি। পারিবারিক ব্যবসার চালকের আসনে বসে এর মৃতপ্রায় মুখে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে এমন সব মানুষের সাথে পরিচিত হচ্ছি যা কিছুদিন আগেও মনে হয়েছে অপ্রয়োজনীয়। বছর ঘুরতেই আমাদের ব্যবসায় ফিরে এল হারিয়ে যাওয়া গতি। আমাদের একটা বাড়ি কিনতে হবে, ব্যবসা বাড়ানোর এ ছিল অপরিহার্য্য অংশ। ছোট শহর গুলোতে বাড়ি কিনতে দালালের দরকার হয় তা আমার জানা ছিলনা, অনিচ্ছা সত্ত্বেও দালালের দারস্থ হতে হল। দালালের পরামর্শ মত ভূমি নিবন্ধকরন অফিসের বড় সাহেবকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে বাড়ির দাম অর্ধেক দেখিয়ে রেজষ্ট্রি করা হল, তাতে বেশ কিছু টাকা সাশ্রয় হল (এর কোন অন্যথা সম্ভব ছিলনা)। সব কিছু সমাধা হয়ে গেল বিনা সমস্যায়, নীরবে নিশ্চিদ্রে।

শীতের সকাল, চারদিকে আলস্যের আমেজ। অফিসে বসে দৈনিক পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছি, মনযোগ ছিন্ন হল একজনের লম্বা নমস্কারে। চোখ উঠিয়ে তাকাতেই দেখি আমাদের নৃপেন দা, স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি। আমরা একই স্কুল হতে এক বছর আগ পিছে মেট্রিক পাশ করেছি, দশটা বছর একই শহরে বড় হয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই নৃপেনদা প্রেস ক্লাবের সভাপতি, এবং শহরের খুবই শক্তিশালী ব্যক্তি। উলটো নমস্কার দিয়ে স্বাগত জানাতেই উনার চোখে দেখলাম ঠান্ডা চাউনি, ওখানে স্কুল জীবনের নৃপেনদার কোন ছায়া খুজে পেলামনা। ‘শুনলাম আপনারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বেশ বড় ধরনের একটা বাড়ি ক্রয় করেছেন এবং সরকারকে লক্ষাধিক টাকা ফাকি দিয়ে নিজদের পকেট ভারি করছেন। আমরা সাংবাদিক, জাতিকে সত্য জানানোই আমাদের পেশা, তাই আপনাদের এ জালিয়াতি সংবাদপত্রে প্রকাশ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।‘ চমৎকৃত হলাম জেলা শহরের একজন সাংবাদিকের এমন দায়িত্ববোধ দেখে। কথা বেশি দূর গড়ালোনা, যাওয়ার সময় নৃপেনদা জানিয়ে গেলেন ৩ দিন সময় আছে আমাদের হাতে, এ ফাকে ১ লাখ টাকা নগদ না দিলে দেশের সবগুলো জাতীয় দৈনিকে শোভা পাবে আমাদের কাহিনী। ১০ হাজার টাকায় দফা হল অনেক তালগোল পাকানোর পর। টাকাটা যেদিন নিতে এলেন নৃপেনদাকে ইস্কুল জীবনের নৃপেনদা হিসাবেই খুজে পেলাম। লেনদেন শেষে দাদাকে জিজ্ঞেষ করলাম কোন সূত্র হতে আমাদের বাড়ির খোজ পেয়েছিলেন। উত্তরে জানালেন ভূমি অফিসের সেই বড় সাহেব উনাকে খবরটা জানিয়ে ছিলেন। কথা প্রসংগে বেরিয়ে এল জেলা শহরে বেচে থাকা এইসব সল্প আয়ের মানুষগুলোর অনেক অজান কাহিনী। শহরে কাজ করে ভূমি অফিস, থানা, সাংবাদিক এবং স্থানীয় পৌরসভার মেম্বার চেয়ারম্যানদের শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে কেউ একজন ধরা খেলে তাকে ভোগ করার জন্যে একে অন্যের কাছে ভোগের সামগ্রী হিসাবে উপঢৌকন পাঠানো হয়। নৃপেনদা জানিয়ে গেলেন আমার পরবর্তী অতিথি হবেন থানার ওসি, তারপর সমন আসবে চেয়ারম্যান অফিস হতে। স্তব্দ হয়ে গেলাম এমন খবরে। রুজি রোজগারে এমন নোংরা পথও যে থাকতে পারে তা বিশ্বাষ করতে খুব কষ্ট হল। নিজকে ধিক্কার দিলাম এই চক্রের ভোগ্যপন্য হওয়ার জন্যে।

হক সাহেব আমাদের প্রতিবেশী। বয়স ৬০ বছরেরও বেশী, ছোট্ট একটা নার্সারী চালিয়ে বড় একটা পরিবারের ঘানি টানেন। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত এই নার্সারীর দিকে নজড় যায় স্থানীয় এক যুবদল নেতার। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের এক সকালে হক সাহেব বিশ্রাম নিচ্ছেন নার্সারীর ছোট্ট একটা খুপড়িতে। উনার বাসার ১৮ বছর বয়সী কাজের বুয়া নিশ্চদ্রে প্রবেশ করল সে খুপরিতে, নিজে বিবস্ত্র হল এবং আস্তে করে শুয়ে পড়ল হক সাহেবের পাশে। চারদিক ফ্লাশের আলোতে উজ্বল হয়ে উঠল, হাতে ক্যামেরা নিয়ে স্থানীয় ইন্‌কিলাব পত্রিকার সাংবাদিক এবং যুবদল নেতা হক সাহেবের অতিথি। ইন্‌কিলাবের সাপ্তাহিক প্রকাশনা পূর্ণিমায় রংগ রস লাগিয়ে রঙ্গিন ছবি সহ প্রকাশ করা হল হক সাহবের কথিত যৌন কাহিনী। এ অপমান হক সাহেব সয্য করতে পারেন্‌নি, কোন এক কাক ডাকা ভোরে উনাকে পাওয়া যায় মৃতাবস্থায়, হার্ট এট্যাক! নৃপেনদা জানালেন এ ধরনের ব্লাকমেইলিং করে সাংবাদিকরা যাই আয় করুক না কেন, প্রাপ্ত অর্থ জমা হয় প্রেস ক্লাবের যৌথ ফান্ডে এবং তা বটোয়ারা হয় পত্রিকার জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে।

যতই দিন যায় আমার প্রিয় জেলা শহরের অনেক পরিচিত মুখ, যাদের দেখেছি পাঞ্জাবীর উপর বংগবন্ধু কোট, জাতিয়তাবাদের নামে জিয়ার জয়গান আর সৃষ্টকর্তার নামে আলখেল্লা লাগিয়ে মানুষের দরদী সাজতে, তারা আসলে কেউ নন, নিতান্তই লোভ লালসায় জর্জরিত রক্ত মাংসের সাধারণ মানুষ। কেউ রাজনীতি, কেউ সমাজ সেবা, কেউবা ধর্মের নামে বেচে থাকার চেষ্টা করছেন। এ ধরনের বেচে থাকা কতটা সমাজ স্বীকৃত তা বিচারের ভার আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম।

দ্রষ্টব্যঃ
আইন-আদালতে প্রমানিত না হওয়া পর্য্যন্ত কেউ অপরাধী নয়!
এই লেখায় দেশের সব সাংবাদিককে একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে নাসময় আসে এবং সময় চলে যায়; সূখ, দুঃখ, হাসি-কান্না আর মায়া-মমতায় জড়ানো কিছু সৃত্মি পেছনে ফেলে সময় হারিয়ে যায় মহাকালের কক্ষপথে। এ নিয়েই বোধহয় মনুষ্য জীবন, সময়ের ঘোড়ায় চড়ে বেচে থাকার মহাযাত্রা। বাংলাদেশেও আমরা বেচে থাকি, তবে এ বেচে থাকা আর দশটা বেচে থাকার মত নয়, এ অন্য এক বেচে থাকা। এখানে বেচে থাকতে শুধু প্রকৃতির সাথে লড়াই করলেই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি চাই মানুষ, সমাজ, দেশ তথা মিথ্যা, অসততা, অনাচার আর পংকিলতার বিরুদ্বে লড়াই। তাই বলে বেচে থাকার এই বহুমূখী লড়াইয়ের কাছে আমাদের মানুষগুলো কিন্তূ সহজে পরাজয় মেনে নেয়না, তা না হলে ’৭১এ যেখানে আমাদের সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি আজ কেন তা হবে পনের কোটি? জীবন নিশ্চয় কোন না কোন বাকে আলিংগন করে জীবন এবং মৃত্যুর মাঝে বয়ে যাওয়া সূখের নদী। ৩৮ বছর বয়সী একটা দেশের এই জটিল সমীকরনের সাথে জড়িয়ে আছে এর মাটি, মানুষ আর তার হাজার বছরের ইতিহাস। একে ভালবাসা যেমন কঠিন, একে ঘৃনা করা ততই সহজ। বেচে থাকার এই দেশীয় দন্ধ নিয়েই আমার এ লেখা।

সাংবাদিকদের আমরা সবাই কমবেশী ভালবাসি, সন্মান করি, ভয় পাই এবং প্রয়োজনে ঘৃনা করি। অনেকেই সাংবাদিকদের সমাজের বিবেক বলতে পছন্দ করেন, সূখে দূখে আপন ভাবতে ভালবাসেন। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে, শহর বন্দরে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার সাংবাদিকদের জীবন কেমন আমাদের তা জানার দরকার হয়না, এর প্রয়োজনও আমরা অনুভব করিনা, কারণ সাংবাদিক নিজে নন, আমাদের প্রয়োজন তাদের পাঠানো খবর। নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে সাংবাদিকরা কি করে এই জটিল আর্থ-সামাজিক সমাজে বেচে থাকে তার পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য এক অধ্যায়, যা আমরা দেখেও দেখতে চাইনা, শুনেও না শোনার ভান করি।

বিদেশ এবং রাজধানী পর্ব শেষে ছোট একটা জেলা শহরে জীবনকে নতুন করে আবিস্কারের চেষ্টা করছি। পারিবারিক ব্যবসার চালকের আসনে বসে এর মৃতপ্রায় মুখে নতুন প্রাণ সঞ্চার করতে এমন সব মানুষের সাথে পরিচিত হচ্ছি যা কিছুদিন আগেও মনে হয়েছে অপ্রয়োজনীয়। বছর ঘুরতেই আমাদের ব্যবসায় ফিরে এল হারিয়ে যাওয়া গতি। আমাদের একটা বাড়ি কিনতে হবে, ব্যবসা বাড়ানোর এ ছিল অপরিহার্য্য অংশ। ছোট শহর গুলোতে বাড়ি কিনতে দালালের দরকার হয় তা আমার জানা ছিলনা, অনিচ্ছা সত্ত্বেও দালালের দারস্থ হতে হল। দালালের পরামর্শ মত ভূমি নিবন্ধকরন অফিসের বড় সাহেবকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে বাড়ির দাম অর্ধেক দেখিয়ে রেজষ্ট্রি করা হল, তাতে বেশ কিছু টাকা সাশ্রয় হল (এর কোন অন্যথা সম্ভব ছিলনা)। সব কিছু সমাধা হয়ে গেল বিনা সমস্যায়, নীরবে নিশ্চিদ্রে।

শীতের সকাল, চারদিকে আলস্যের আমেজ। অফিসে বসে দৈনিক পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছি, মনযোগ ছিন্ন হল একজনের লম্বা নমস্কারে। চোখ উঠিয়ে তাকাতেই দেখি আমাদের নৃপেন দা, স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি। আমরা একই স্কুল হতে এক বছর আগ পিছে মেট্রিক পাশ করেছি, দশটা বছর একই শহরে বড় হয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই নৃপেনদা প্রেস ক্লাবের সভাপতি, এবং শহরের খুবই শক্তিশালী ব্যক্তি। উলটো নমস্কার দিয়ে স্বাগত জানাতেই উনার চোখে দেখলাম ঠান্ডা চাউনি, ওখানে স্কুল জীবনের নৃপেনদার কোন ছায়া খুজে পেলামনা। ‘শুনলাম আপনারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বেশ বড় ধরনের একটা বাড়ি ক্রয় করেছেন এবং সরকারকে লক্ষাধিক টাকা ফাকি দিয়ে নিজদের পকেট ভারি করছেন। আমরা সাংবাদিক, জাতিকে সত্য জানানোই আমাদের পেশা, তাই আপনাদের এ জালিয়াতি সংবাদপত্রে প্রকাশ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।‘ চমৎকৃত হলাম জেলা শহরের একজন সাংবাদিকের এমন দায়িত্ববোধ দেখে। কথা বেশি দূর গড়ালোনা, যাওয়ার সময় নৃপেনদা জানিয়ে গেলেন ৩ দিন সময় আছে আমাদের হাতে, এ ফাকে ১ লাখ টাকা নগদ না দিলে দেশের সবগুলো জাতীয় দৈনিকে শোভা পাবে আমাদের কাহিনী। ১০ হাজার টাকায় দফা হল অনেক তালগোল পাকানোর পর। টাকাটা যেদিন নিতে এলেন নৃপেনদাকে ইস্কুল জীবনের নৃপেনদা হিসাবেই খুজে পেলাম। লেনদেন শেষে দাদাকে জিজ্ঞেষ করলাম কোন সূত্র হতে আমাদের বাড়ির খোজ পেয়েছিলেন। উত্তরে জানালেন ভূমি অফিসের সেই বড় সাহেব উনাকে খবরটা জানিয়ে ছিলেন। কথা প্রসংগে বেরিয়ে এল জেলা শহরে বেচে থাকা এইসব সল্প আয়ের মানুষগুলোর অনেক অজান কাহিনী। শহরে কাজ করে ভূমি অফিস, থানা, সাংবাদিক এবং স্থানীয় পৌরসভার মেম্বার চেয়ারম্যানদের শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে কেউ একজন ধরা খেলে তাকে ভোগ করার জন্যে একে অন্যের কাছে ভোগের সামগ্রী হিসাবে উপঢৌকন পাঠানো হয়। নৃপেনদা জানিয়ে গেলেন আমার পরবর্তী অতিথি হবেন থানার ওসি, তারপর সমন আসবে চেয়ারম্যান অফিস হতে। স্তব্দ হয়ে গেলাম এমন খবরে। রুজি রোজগারে এমন নোংরা পথও যে থাকতে পারে তা বিশ্বাষ করতে খুব কষ্ট হল। নিজকে ধিক্কার দিলাম এই চক্রের ভোগ্যপন্য হওয়ার জন্যে।

হক সাহেব আমাদের প্রতিবেশী। বয়স ৬০ বছরেরও বেশী, ছোট্ট একটা নার্সারী চালিয়ে বড় একটা পরিবারের ঘানি টানেন। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত এই নার্সারীর দিকে নজড় যায় স্থানীয় এক যুবদল নেতার। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের এক সকালে হক সাহেব বিশ্রাম নিচ্ছেন নার্সারীর ছোট্ট একটা খুপড়িতে। উনার বাসার ১৮ বছর বয়সী কাজের বুয়া নিশ্চদ্রে প্রবেশ করল সে খুপরিতে, নিজে বিবস্ত্র হল এবং আস্তে করে শুয়ে পড়ল হক সাহেবের পাশে। চারদিক ফ্লাশের আলোতে উজ্বল হয়ে উঠল, হাতে ক্যামেরা নিয়ে স্থানীয় ইন্‌কিলাব পত্রিকার সাংবাদিক এবং যুবদল নেতা হক সাহেবের অতিথি। ইন্‌কিলাবের সাপ্তাহিক প্রকাশনা পূর্ণিমায় রংগ রস লাগিয়ে রঙ্গিন ছবি সহ প্রকাশ করা হল হক সাহবের কথিত যৌন কাহিনী। এ অপমান হক সাহেব সয্য করতে পারেন্‌নি, কোন এক কাক ডাকা ভোরে উনাকে পাওয়া যায় মৃতাবস্থায়, হার্ট এট্যাক! নৃপেনদা জানালেন এ ধরনের ব্লাকমেইলিং করে সাংবাদিকরা যাই আয় করুক না কেন, প্রাপ্ত অর্থ জমা হয় প্রেস ক্লাবের যৌথ ফান্ডে এবং তা বটোয়ারা হয় পত্রিকার জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে।

যতই দিন যায় আমার প্রিয় জেলা শহরের অনেক পরিচিত মুখ, যাদের দেখেছি পাঞ্জাবীর উপর বংগবন্ধু কোট, জাতিয়তাবাদের নামে জিয়ার জয়গান আর সৃষ্টকর্তার নামে আলখেল্লা লাগিয়ে মানুষের দরদী সাজতে, তারা আসলে কেউ নন, নিতান্তই লোভ লালসায় জর্জরিত রক্ত মাংসের সাধারণ মানুষ। কেউ রাজনীতি, কেউ সমাজ সেবা, কেউবা ধর্মের নামে বেচে থাকার চেষ্টা করছেন। এ ধরনের বেচে থাকা কতটা সমাজ স্বীকৃত তা বিচারের ভার আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম।

দ্রষ্টব্যঃ
আইন-আদালতে প্রমানিত না হওয়া পর্য্যন্ত কেউ অপরাধী নয়!
এই লেখায় দেশের সব সাংবাদিককে একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে না

ভালো লাগলে শেয়ার করুন