ছাত্রজীবন শুধু একবারই আসে

Submitted by WatchDog on Thursday, September 3, 2009

Students of Bangladesh!

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিমুক্ত একটি শিক্ষাঙ্গন। এখানে রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। এর পরও ছাত্রলীগ সমর্থিত শিক্ষার্থীদের দুটি গ্রুপের বাড়াবাড়ি আর শক্তি প্রদর্শনে প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়। অভিযোগ আছে, তিন সাংসদের প্রশ্রয়েই এই দুটি গ্রুপ বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, জাতীয় সংসদের হুইপ ও কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাংসদ মুজিবুল হক, কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও কুমিল্লা-৮ (বরুড়া ও সদর দক্ষিণের একাংশ) আসনের সাংসদ নাছিমুল আলম চৌধুরীর প্রশ্রয় পাওয়া ওই দুই গ্রুপের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। গত সোমবার হুইপ মুজিব ও সাংসদ নাছিমুলের আশীর্বাদপুষ্ট মাসুম-অর্ণব গ্রুপের সঙ্গে সাংসদ বাহাউদ্দিনের আশীর্বাদপুষ্ট চিশতি-শাওন গ্রুপের সংঘর্ষের কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এক মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়। ভাঙচুর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন। এ অবস্থায় সব বর্ষের চুড়ান্ত পরীক্ষা মাঝখানে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেশনজটের কবলে পড়ে নবগঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।

উপরের খবরটা আজকের প্রথম আলো হতে নেয়া। শুধু প্রথম আলো কেন, আজকাল যে কোন পত্রিকার পাতা উল্টালেই এ ধরনের খবরের প্রাধান্য চোখে পরার মত। ভাবতে কষ্ট হয় আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মকে খুব কম বয়সে এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে দেখে। প্রসংগটা এ জন্যেই টানলাম কারন, একটা কাজে বাসার পাশে ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো ক্যাম্পাসে যেতে হয়েছিল একটু আগে। শহরের ব্যস্ততম এলাকায় শতবর্ষের ঐতিয্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হাজারো ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহলে চারদিক মুখরিত; হরেক রকম চেহারা আর বাহারী পোশাকের মিছিলে কে কালো, কে সাদা আর কেই-বা আদিবাসি, তাকিয়ে দেখার কেউ নেই। ওরা সবাই হয় ছাত্র নয়ত শিক্ষক, ব্যাস্ত যে যার কাজে। মূল ক্যাম্পাসের কাফ্যেটেরিয়াটায় গেলে মনটা জুড়িয়ে আসে, না চাইলেও স্মৃতির অলিগলি পেরিয়ে ফিরে যেতে হয় উত্তর ইউরোপের কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে আমিও কাটিয়ে এসেছি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলো। ক্যাম্পাস মানেই লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রেম-ভালবাসার কুঞ্জবন, গান-বাজনার বাধভাংগা জোয়ার, সমসাময়িক সমস্যাগুলোর উপর সভা-সেমিনারে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত নিয়ে তুমুল তর্ক বিতর্ক। গেল নভেম্বরে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জন ম্যাক্‌কেইনের নির্বাচনী বক্তব্য শুনতে গিয়েছিলাম একই ক্যাম্পাসে। যাওয়ার আগে ভেবেছিলাম হয়ত পূরো ক্যম্পাসটাই ভেঙ্গে পরবে জনপ্রিয় এ নেতাকে দেখার জন্যে। হাজির হয়ে হতাশ হলাম, ক্যাম্পাসের হলটা ভাড়া নিয়েছে রিপাবলিকানরা, এর বাইরে ছাত্রদের কোন সম্পৃক্ততা দেখলাম না। শুধু ৪/৫ জন ছাত্রকে দেখলাম প্লাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানাচ্ছে রিপাবলিকানদের যুদ্বাংদেহী মনোভাবের। ম্যাক্‌কেইন সভা শেষ করে নীরবে বেরিয়ে গেলেন। ছাত্ররা তেমন একটা তোয়াক্কা করল না ভুবনখ্যাত এই রাজনীতিবিদের আসা যাওয়া। পরের সপ্তাহেই ছিল ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী এবং আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সভা, একই জায়গায় একই সময়ে।

তুলনাটা না করতে চাইলেও মাথায় সব সময় উকিঝুকি মারতে থাকে। এমনটা কি আমাদের ক্যাম্পাগুলোতে হতে পারে না, যদু মধু রাম শ্যাম রাজনীতিবিদ্‌দের নোংরা ও সন্ত্রাষী রাজনীতি হতে মুক্ত হয়ে ছাত্ররা নিজ নিজ চাহিদার দাসত্ব করতে? একজন ছাত্রের মূল কাজ লেখাপড়া, সাথে থাকবে প্রেম-ভালাবাসার সোনালী সময়, গান-বাজনা, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির নিয়ে যুক্তি তর্ক। কষ্ট হয় দেশীয় ছাত্রজীবনের এমন করুন খবর পড়লে। ছাত্রদের হয়ত মনে করিয়ে দেয়ার কেউ নেই, জীবনে এমন একটা মধুর সময় শুধু একবারই আসে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন