এন্ডিস পর্বতমালার বাঁকে বাঁকে - ১৬তম (শেষ) পর্ব

Submitted by WatchDog on Tuesday, October 20, 2009

Andes Mountains - South America

লা পাজ ‘এল আল্‌ত’ এয়ারপোর্ট হতে লিমা ’হোরহে চাভেজ‘ এয়ারপোর্ট ২ ঘন্টার পথ। দেশ দু’টোর মধ্যে রয়েছে ১ ঘন্টা সময় ব্যবধান। সাধারণ মানের এক প্যাকেট পটেটো চিপস্‌, সাথে মিনি গ্লাশে এক গ্লাশ ইন্‌কা কোলা, আর্ন্তজাতিক ফ্লাইটে এ ধরনের দায়সারা গোছের আপ্যায়নে বেশ হতাশ হলাম। এতগুলো ডলার খসে গেল মাত্র দুই ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে, ভেতরের এই অসন্তূষ্টিটা কাটা গায়ে নূন ছেটানোর মত যন্ত্রণা দিচ্ছিল বার বার। দৃশ্যটা প্রথমবারও লক্ষ্য করেছি, লিমা এয়ারপোর্টকে ঘিরে থাকা এন্ডিসের চূড়াগুলো ঘন মেঘের স্তর ভেদ করে আকাশে উঠে গেছে। হঠাৎ করে দেখলে দৈত্য দানবের মত মনে হবে। প্রাক ধারণা না থাকলে চূড়াগুলি ভয় ধরিয়ে দেয় ফ্লাইট সেফ্‌টির আশংকায়। সীট নিয়ে ভাল করে বসার আগেই মন হল হল ল্যান্ড করছি আমরা।

৯টার ভেতর ঝামেলা চুকিয়ে বেরিয়ে এলাম এয়ারপোর্ট হতে। নিউ ইয়র্কের ফ্লাইট রাত ১২টায়; মাঝখানের ১৫ ঘন্টা কোথা যাব, কি করব ভেবে চিন্তিত হয়ে পরলাম। ইচ্ছা ছিল এয়ারপোর্ট লাউঞ্জেই কাটিয়ে দেব সময়টা, কিন্তূ এত লম্বা সময়ের কথা মনে হতেই দ্বিধায় পরে গেলাম। রাতে ভাল ঘুম হয়নি, তা ছাড়া সামনে পরে আছে আরও ৭ ঘন্টার ফ্লাইট। এত ধকল শরীরে সইবার নয়, তাই হিসাব শেষে হোটেলে উঠার সিদ্বান্ত নিলাম। ট্যুরিষ্ট ব্যুরোর ডেস্কে গিয়ে সন্ধান চাইলাম কাছাকাছি সস্তা হোটেলের। আগের বার বোকার মত ৭৫ ডলার দিয়ে লিমার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা মিরাফ্লোরেসে হোটেল বুক করেছিলাম। ডেস্কের লাস্যময়ী তরুনী এক সপ্তাহের ভেতর দ্বিতীয় বার স্বাগত জানিয়ে আগের হোটেলে যেতে চাই কিনা জিজ্ঞেষ করল। ৩৫ ডলারে এয়ারপোর্টের সবচেয়ে কাছের হোটেলটায় বুকিং দিয়ে ক্যাব নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলাম।

রাজধানী লিমা ইতিমধ্যে জেগে উঠেছে। অগুনিত যানবাহন, গিজ গিজ করা মানুষের ভীড়। এয়ারপোর্টের কাছাকাছি রাস্তাগুলো হঠাৎ করে দেখলে ঢাকার কোন রাস্তা বলে ভুল হতে পারে। এলোমেলো ট্রাফিক, শ্রীহীন ইমারত, যত্রতত্র নির্বাচনী চিকা, লক্কর ঝক্কর মিনিবাস এবং রাস্তায় পরিকল্পনাহীন দোকান পাট, নির্ঘাত ঢাকার ছবি! শুধু পার্থক্য এর চর্তুদিকের প্যনোরমা। এন্ডিসের বিশাল বিশাল চূড়ায় নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে সকালের সূর্য্য, এক ধরনের ঘন কুয়াশা রাজত্ব করছে শহর জুড়ে। একটু এগিয়ে হাইওয়ে ধরতেই পার্থক্যটা প্রকট হয়ে উঠল, ঢাকায় এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক চলাচল অকল্পনীয়। পনের মিনিটের ভেতর হাজির হলাম হোটেলটার সামনে। হোটেল ’ম্যানহাটন’, নির্জন পরিবেশে বেশ খোলামেলা জায়গায় হোটেলটাকে দেখে পছন্দ হয়ে গেল।

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই ৩২ দাঁত বের করে স্বাগত জানাল অবিকল বাংগালী চেহারার এক তরুনী।

আমার ভ্রমন কাহিনীর এখানেই বোধহয় সমাপ্তি টানা যায়, কারণ এর পরের ১৫ঘন্টায় যা ঘটবে তার সাথে ভ্রমনের কোন সম্পর্ক নেই। লম্বা একটা ঘুম সেড়ে নীচে নামতেই আলাপ হবে সকালের সেই মেয়েটার সাথে। সে আলাপ চলবে টানা ৩ ঘন্টা। এবং এই ৩ ঘন্টায় বীজ বপিত হবে নতুন এক কাহিনীর। এ কাহিনীর ট্রেইল ধরে আমাকে আবারও ফিরে আসতে হবে লীমায়, সৃত্মির অলিগলি হাতড়াতে আবারও যেতে হবে কুস্‌কো, মাচা পিচু, পদানত হবে এন্ডিসের নতুন নতুন চূড়া, পাড়ি দিতে হবে কলার দেশ ইকুয়েডর, ড্রাগের স্বর্গভূমি কলম্বিয়া সহ এন্ডিসের আরও অনেক বাঁক। এ নিয়ে হয়ত লেখা যেতে পারে বিশাল ক্যানভাসের আরও একটা কাহিনী, যা ভ্রমনের পাশাপাশি ছুয়ে যাবে প্রেম, ভালবাসার মত নাটকীয় বিষয়গুলি।
- সমাপ্তি

লেখাটা শেষ করে গিন্নীকে আনতে যেতে হবে, সে এখন কাজে। এবং আমার গিন্নীই সেই জন যার সাথে দেখা হয়েছিল লিমার সেই হোটেলটায়।

লেখকের কথাঃ ধৈর্য্য ধরে যারা লেখাগুলো পড়েছেন সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। লেখাটা শেষ করতে পেরেছি অনেকের উৎসাহজনক মন্তব্যের কারণে। অতিরিক্ত ধন্যবাদ রইল তাদের জন্যে।

ছবিগুলো আমার নিজেরঃ

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains

andes mountains


ভালো লাগলে শেয়ার করুন