আউলা ঝাউলা বাউলা চিন্তা!

Submitted by WatchDog on Friday, October 2, 2009

Mizid Mia

ধ্যান ধারণায় দুই মেরুর দুই বাসিন্দা। কিন্তূ পরিচয় একটাই, রাজনীতিবিদ। এই ক’দিন আগে একজন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হাই প্রোফাইল বিদায় নিলেন, গন্তব্যঃ জাতিসংঘের সদর দপ্তর, নিউ ইয়র্ক। অন্যজন নীরবে ছায়ার মত মিশে গেলেন অনেক যাত্রীর ভীড়ে। চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাত্রা, হয়ত মালেশিয়া অথবা সিংগাপুর!

কর্ম সমাধা শেষে দু’জনই ফিরে এলেন জননী জন্মভূমিতে। একজনের কপালে এটে দেয়া হল বিশ্ব জয়ের নমস্য তিলক, বরন করা হল ফুলেল শুভেচ্ছায়। থেমে গেল নগড় জীবন; গাড়ি-ঘোড়া, রিক্সা-সাইকেল, মৃত্যু পথযাত্রী রুগী নিয়ে এম্ব্যুলেন্স, স্কুলগামী শিশুদের ভ্যন...। ঘন্টাখানেকের জন্যে সব নিথর হয়ে গেল প্রত্যাগমনের শিহরনে। বাতাসে বইল স্বর্গীয় দ্যুতি, চারদিক প্রকম্পিত হল উল্লাসে। উনি ফিরে এসে হাত উঠালেন উর্ধ্বাকাশে, বললেন, হে আমার দেশবাসী, ভালবাসায় সিক্ত হতে আমি ফিরে এসেছি, সাথে এনেছি বিশ্ব জয়ের বায়বীয় মালা। আমরা দেখলাম, শিহরিত হলাম, এবং ধন্য হল আমাদের বেচে থাকা। আর অন্যজন? তিনিও ফিরে এলেন! তবে বিশ্ব নয়, নিজের স্বাস্থ্যকে জয় করে। হয়ত থমকে যায়নি নগর জীবন, প্রকম্পিত হয়নি মেগা শহরের আলো-বাতাস। তবু একদল মালা দিয়ে বরন করে নিল এই ’মনিষীর’ প্রত্যাবর্তনকে। উনি এলেন এবং আকাশে হাত উঠালেন, বললেন, হে আমার মুরিদগন আমি এসেছি। এয়ারপোর্ট দেখল, আমরাও দেখলাম এবং ধন্য হল আমাদের বেচে থাকা। কিন্তূ এখানেই যে সব শেষ নয়। কোথা হতে কি হয়ে গেল, একদল উর্দিপরা ভেজালের দল ভেজাল বাধিয়ে বসল স্বর্গীয় মুহুর্তে। নেতাকে কুস্তি লড়াইয়ে পরাজিত করে বসূমতির কোলে শোয়ানো হল, দু’হাতে পরিয়ে দেয়া হল গণতন্ত্রের জিঞ্জির। খুনের ষড়যন্ত্রে গ্রেফতার হয়ে নেতা রওয়ানা দিলেন নাজিমুদ্দিন রোড। রাস্তায় নিশ্চয় দু’একটা ভেজাল হয়েছিল, হয়ত কোথাও কোন এম্ব্যুলেন্স আটকে গিয়েছিল। তবে যা হওয়ার তা হল এয়ারপোর্টে। মুরিদ্‌দের চোখের জল আর নাকের জল একাকার হয়ে জন্ম নিল অগ্নি স্ফুলিংগের। বিস্ফোরন ঘটে গেল আগমন কাব্যে। এয়ারপোর্ট ভেংগে তচনচ, গাড়ি-ঘোড়া ভাংগল, উর্দিওয়ালাদের লাঠির আঘাতে মুরীদানের কাফেলা হল ক্ষত বিক্ষত। আমরা দেখলাম, দেখলাম এবং ধন্য হলাম গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের আজন্ম লালিত দায়বদ্বতা দেখে।

একই এয়ারপোর্টে অন্যরকম একটা দৃশ্যের কথা মনে না হয়েই যায়না; শেখ হাসিনা ফিরে এলেন চোখ, কান, জিহবা এবং কণ্ঠের চিকিৎসা শেষে। সেই একই ভেজালীর দল ভেজাল করল। এক দলীয় সরকারের জিঞ্জিরে ধরা খেল গণতন্ত্রের টাইম বম্ব। সময়টা ছিল আওলা ঝাউলাদের বাউলা সরকার, তত্ত্বাবধায়ক ভেজাল। হাসিনার নামে সেই একই অভিযোগ, গান পাউডার দিয়ে আদম নিধন। উনিও ফিরে এসে হাত তুললেন, এবার আর চারদিক প্রকম্পিত নয়, বরং নীরবে কোটি ভক্তের চোখের জলে রওয়ানা দিলেন মিন্টু রোডের মেহমান খানায়। আমরা দেখলাম, দেখলাম এবং ধন্য হলাম।

উনারা চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাবেন, ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি দর্শনে পাড়ি দিবেন সাত সমুদ্র, সভা করতে নহবত সাজাবেন, সাজবে এয়ারপোর্ট, নাচবে রাজধানী এবং তা দেখে ধন্য হবে আমাদের বেচে থাকা। আসলে আমরা নিজেরাই বোধহয় নিজদের নমশুদ্র বানিয়ে এ মহামানবদের ব্রাম্মন বানাতে রসদ যোগাই। এই কি সেই আমানুল্লাহ আমান নয় যে ছাত্রাবস্থায়ই কামিয়ে নিয়েছিল শত কোটি টাকা? এই কি সেই শেখ হাসিনা নন যিনি চেকের মাধ্যমে চাঁদাবাজী করতে এতটুকু ভয় পান্‌নি? অনেকেই বলবেন এসব সাজানো কথা, বানানো গল্প অথবা আউলা ঝাউলাদের বাউলা ষড়যন্ত্র! হয়ত তাও ঠিক। কিন্তূ নির্মম সত্য হল, চুরি চামারীতে আমাদের দেশ পরপর ৪বার বিশ্ব চ্যম্পিয়নের খেতাব পেয়েছিল। কে করল এই পুকুর চুরি? কার উদরে হজম হল হাজার হাজার কোটি? আমার? আপনার? তাই যদি হত তাহলে আমি আপনি এই ব্লগে ব্লগিং করে সময় নষ্ট করতাম না, অসূখ বিসূখে তাবিজ কবজের আশ্রয় নিতাম না। যাদের কারনে আমরা আজ কলংকিত অধ্যায়ের মহানায়ক তাদের চিনতে কষ্ট হলে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর 'লাল শালু' উপন্যাসটা পড়ে নিবেন। এরাই সেই মজিদ মিয়া যাদের কারনে বিশ্বে আমাদের পরিচিতি এক নাম্বার চোর হিসাবে। আর উর্ধ্বাকাশে তুলে ধরা ওদের বজ্রমুঠীই সেই শালূ, যা পূজি করে কামানো হয় কোটি অংকের নগদ নারায়ন অথবা কড়কড়ে ক'টা চেক।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন