ফাইটিং উইথ পাকিস্তানি ভূত

Submitted by WatchDog on Saturday, December 21, 2013

স্কুলে পড়াকালীন একটা সময় ছিল যখন ভুতের ভয়ে জীবন প্রায় অচল হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মনে হত সবকিছুতে ভুতের রাজত্ব। পাতাদের ফিসফিসানি, জানালার দুমদাম আওয়াজ আর বেড়ালের নিঃশব্দ চলাফেরা মনে হত তাদেরই প্রেতাত্মা। তামাশার ভয়ে কাউকে বলতে পারতাম না এ কষ্ট। সাহায্যের জন্য শেষ পর্যন্ত মাদ্রাসার হুজুরের দ্বারস্থ হলাম। হুজুর লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা নামের ছুরাটা মুখস্ত করতে বললেন। ভয় চাপলে পরপর কয়েকবার পড়ে চারিদিকে ফু দিলেই নাকি ভুতের গায়ে আগুন লাগতে বাধ্য ছিল। মাবুদ স্বাক্ষী, কম করে হলেও লাখ বার উচ্চারণ করেছি এ দোয়া। কাজ হয়নি। ভয় বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে চলে গেল রাত নামলে হাতে লাঠি নিয়ে চলাফেরা করতে শুরু করলাম। ৭১’এর এপ্রিল মাস। আমাদের শহরে পাক সেনারা প্রবেশ করেছে কেবল। আর দশটা পরিবারের মত আমরাও শহর ছাড়তে বাধ্য হই। এদিক ওদিক ঘুরে শেষ পর্যন্ত ঠাঁই নেই দাদাবাড়িতে। এবং এখানেই শুরু আমার ভুতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার যুদ্ধ। বিদ্যুৎবিহীন দাদাবাড়িতে বাস করতে গেলে ভুত নিধন ছিল বাধ্যতামূলক।

স্পষ্ট মনে আছে অমাবশ্যার সে রাতটার কথা। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এমন রাতেই নাকি ওরা দলবলে বের হয়। গোরস্থানটা ছিল পুবের বিল ও দক্ষিন বিলের কোনায়। ওখানটায় দিনের বেলায়ও যেতে সাহস পায়না অনেকে। গ্রামে হরেক রকম উপকথা চালু ছিল গোরস্থান নিয়ে। জোনাকির আলোর মত ফেরেশতাদের আলোও নাকি দেখা যায় মাঝে মধ্যে। ভয় হতে জেদে রূপ নিল আমার ভুতের ভয়। খুব গোপনে যেতে হল বিলের ধারের গোরস্থানটায়। কেউ দেখে ফেললে পাগল ঠাউরে বিতিকিচ্ছি ঘটনা জন্ম দেয়ার সম্ভাবনা ছিল। বাড়ির কামলা আপ্তরদ্দিকে বলতে বাধ্য হলাম যদি কিছু হয়ে যায় সে ভয়ে। হাতের টর্চটাকে শক্ত করে ধরে হাল্কা পায়ে ঢুকে পরলাম। বুকের ভেতর ঢোলের আওয়াজ আর মুখে পাঁচমিশালি ছুরার ম্যারাথন। লা হাওলা জপতে জপতে শুয়ে পরলাম সদ্য খোঁড়া কবরটার পাশে। বোধহয় পাচ মিনিটের মত স্থায়ী ছিল এ দুঃসাহসিক অভিযান। উপরে তারাহীন আকাশ আর মাটিতে হাল্কা পায়ে শেয়ালদের এদিক ওদিক ঘুরাফেরা ছাড়া আর কিছু দেখেছি বলে মনে হলনা। ভুত নিধন শেষ হওয়া মাত্র টর্চটা মাটিতে ফেলে ভো করে দৌঁড়াতে শুরু করলাম।

ইদানিং নতুন এক ভুত চেপেছে আমাদের কাধে । মেইড ইন পাকিস্তান ভুত। যত দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে এ ভুত আমাদের আঙ্গিনা পেরিয়ে গণভবন বঙ্গভবন পর্যন্ত তাড়া করছে। ছোটবেলায় কুয়াশা সিরিজের বই পড়তাম। অদ্ভুত সব দানবের ভয়ে ঢাকার রাস্তা-ঘাট শূন্য হয়ে যাওয়ার কাহিনী পড়ে শিহরিত হতাম। মনে হচ্ছে কুয়াশা সিরিজের দানব এতবছর পর পাকি ভুত হয়ে ফিরে এসেছে আমাদের মাঝে। ৭১’এর এ ভুত আমাদের উপর ছড়ি ঘুরাবে এমনটা মেনে নেয়া মানে ঐ দেশের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দেয়ার শামিল। তাই কার্টুন ছবির বিশ্ব বাঁচানোর কায়দায় দলে দলে ঝাঁপিয়ে পরছে মেইড ইন পাকিস্তান ভুতের উপর। হাতে লাঠি থাকে কিনা জানিনা, তবে মুখে দেশপ্রেমের ছুরা থাকা মনে হচ্ছে মেন্ডেটরি। ১১০০ মাইল দুর হতে উড়ে আসা এসব দন্তহীন ভূতদের চেহারায় ইয়াহিয়া, নিয়াজি ও টিক্কা খানদের চেহারা দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে ৭১ উত্তর যাদের জন্ম তারা কাজে লাগাতে ভুল করছেনা মুক্তিযুদ্ধে শামিল হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন