ওয়াচডগের রাজনৈতিক গল্প, আন্দাজের গোলা গোলান্দাজ!

Submitted by WatchDog on Friday, November 13, 2009

Bangladesh 2059

অবশেষে ঘুম ভাংগল গোলান্দাজ বয়াতীর। লম্বা একটা হাই তুলে এদিক ওদিক তাকাতেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল, এ কোথায় এল সে! যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ, গাড়ি-ঘোড়ার চিন্‌হ নেই, মাঝে মধ্যে দু’একটা ইঞ্জিনের ভটভটি বাদ দিলে কেবলই রিক্সা আর সাইকেলের সমুদ্র। কঞ্চি বাঁশের মত লম্বা লম্বা দালান, সাথে কবুতরের খুপটির মত লাখ লাখ বস্তি, পরিচিত ঢাকা শহরের সাথে কিছুতেই মেলাতে পারলনা এ দৃশ্য। এটা কি তাহলে শান্তিনগড় এলাকা, নিজকে খুব অসহায় ভাবে জিজ্ঞেষ করল গোলান্দাজ। উঠে দাঁড়াল সে, পেট চো চো করছে খিদায়। যে করেই হোক বাসায় পৌঁছতে হবে, স্ত্রী জেরিন দুপুরের খাবার নিয়ে নিশ্চয় অপেক্ষায় আছে তার। স্ত্রীকে ফোন করে গাড়ি পাঠানোর কথা ভাবল সে। কিন্তূ পকেটে হাত দিতেই হীম হয়ে গেল সমস্ত শরীর, মুঠো ফোন দূরে থাক শরীরে কাপড় বলতে যা আছে তাতে পকেটের কোন অস্থিত্ব নেই, সে একেবারেই উলংগ। শরীরে চিমটি কেটে পরখ করল; না, স্বপ্ন দেখছেনা, দিব্যি জেগে আছে সে। প্রচন্ড ক্ষমতাধর গোলান্দাজ বয়াতী শুধু লীগ রাজনীতির আর্কিটেক্টই নন, দেশী বিদেশী ব্যাংকে ১২০ কোটি টাকা ফিক্সড্‌ ডিপোজিট করা আছে তার নামে। মনে মনে হুংকার ছাড়ল গোলান্দাজ, ’বাসায় যাই আগে, সব কটাকে ঝেটিয়ে বিদায় করব আজ’। কিন্তু কিভাবে বাসায় যাবে ভেবে পেলনা সে, এক রিক্সা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছেনা এ মুহুর্তে।

হাটতে শুরু করল গোলান্দাজ। একটা জিনিষ ভেবে খটকা লাগল তার, প্রায় উলংগ হয়ে হাটছে কিন্তূ একজনও ফিরে তাকাচ্ছেনা তার দিকে। ’হল কি দেশটার, ভোজবাজীর মত এক রাতেই বদলে গেল সব?, পুরানো ব্লাড প্রেসারটার আগমনী বার্তা অনুভব করল রক্তে। একটা বাইসাইকেল এগিয়ে এল তার দিকে, ’কই যাইবেন নেংটা হুজুর? প্রশ্নটা শুনে মগজে লক্ষ কোটি দৈত্য দানবের দাপাদাপি শুনতে পেল সে, ’চড় মেরে বত্রিশ দাঁত ফেলে দেব শুয়রের বাচ্চা’ গর্জে উঠল গোলান্দাজ। সাইকেলটা একপাশে ফেলে ফিরে এল চালক, তলপেট বরাবর কষে একটা লাথি মারল, সাইকেলটা উঠিয়ে নিমিষেই মিশে গেল জনসমুদ্রে। হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পরল গোলান্দাজ, মুখ হতে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে এল। কোন কিছুই মাথায় ঢুকছেনা তার, ঢাকা শহর অথচ কোন গাড়ি নেই, চলাচলের নেই কোন ট্রানসপোর্ট, ব্যঙের ছাতার মত যত্র তত্র গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার দালান-কোঠা, তার দেখা মানুষের চাইতে রাস্তায় দশ গুন মানুস! হঠাৎ করে ভয়টা চেপে ধরল তাকে, নিশ্চয় মস্তিস্কে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে তার। ডাক্তার শমসের এমন একটা আশংকার কথাই বলেছিলেন শেষ সাক্ষাতে। দৃশ্যটা চোখে পড়তে পাগল হওয়ার ব্যাপারটায় নিশ্চিত হয়ে গেল গোলান্দাজ, ফুটপাথে কেউ একজন সোলার প্যানেল সহ ল্যাপটপ ফেরী করছে! ’বাংলাদেশে এ অসম্ভব’, এমনটা ভেবে নিজের চুল নিজেই টানতে শুরু করল গোলান্দাজ বয়াতী।

নিজেই থামাল রিক্সাটা, ’এই ব্যাটা, গুলসান যাবি?’। ‘ইডা আবার কোন জায়গা?’ - জিজ্ঞেষ করল রিক্সা চালক। 'মৌচাক মোড় হয়ে সোজা রামপুরার দিকে যাবি’, তার নিজেরও ভাল করে জানা নেই পথের বর্ণনা, তবু যতটা পারল বুঝানোর চেষ্টা করল রিক্সা চালককে। ’আরে নেংটা বাবা, ওদিকি ত ককোসান, গুলসান হতি যাবি কোন দুইখ্যে!, বলেই রিক্সাওয়ালা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল গোলান্দাজের দিকে। গুলসানের নাম এখন ককোসান! গোলক ধাঁধাঁয় পরে গেল গোলান্দাজ। সম্ভাবনার কথাটা মনে হতে বিদ্যুৎ খেলে গেল শরীর জুড়ে, নিশ্চয় সামরিক অভ্যুত্থান! ’লীগ’কে সড়িয়ে ’দল’ ক্ষমতা নিয়েছে নিশ্চয়, আর তাতেই রাতারাতি বদলে দিয়েছে গুলসানের নাম। আরাফাত রহমান ককো, নামটা মনে হতেই নেতিয়ে এল গোলান্দাজের শরীর। ১২০ কোটি বিদেশে, দেশে আরও ২০০ কোটি, এতগুলো টাকার ভবিষত নিয়ে চিন্তায় পরে গেল শহর লীগের অন্যতম কর্নধার গোলান্দাজ বয়াতী। ঘামতে শুরু করল সে। চারদিক অন্ধকার হয়ে এল হঠাৎ করে, ধূলি ঝড়ে ডুবে গেল ঢাকা শহর। উড়ন্ত পত্রিকাটা ছোবল মেরে ধরে ফেলল গোলান্দাজ, তাতে মুখ ঢেকে মৃতের মত পরে রইল কিছুক্ষন। ২/৩ মিনিট স্থায়ী ঝড়টা বিদায় নিতে পত্রিকার উপর হুমড়ি খেয়ে পরল ক্যুর খবরের আশায়। কোটারা হতে চোখ বেরিয়ে আসতে চাইল গোলান্দাজের, বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল সে! পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রধানমন্ত্রী জামাইমা জিয়ার ছবি, বয়সের ভারে একেবারে নূয্য, জুবুজুবু। অথচ গতকালই হাসিনা মন্ত্রীসভার জনৈক উপদেষ্টা দপ্তরে ভাগ বটোয়ারা হল গুলিস্থান-যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার প্রকল্পের কমিশন প্রাপ্ত ৭০ লাখ টাকা।

২০৫৯ সাল! সাল এবং তারিখটা চোখে পরতেই মুর্ছা গেল গোলান্দাজ বয়াতী।
-চলবে

ভালো লাগলে শেয়ার করুন