পিছু হটার এখনই সময়

Submitted by WatchDog on Sunday, November 10, 2013

India and Bangladesh

রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাত যতই ঘনিভূত হচ্ছে ততই বাড়ছে জাতি হিসাবে আমাদের অস্থিত্বের আশংকা। এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিবিদদের বিরামহীন তৎপরতা, পাশাপাশি দেশী বিদেশি সংবাদ মাধ্যমের খবর বিশ্বাস করলে আমরা ধরে নিতে পারি রাজনীতির ভাগ্য এখন আমাদের হাতে নেই, বরং তা নির্ধারিত হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত হতে। স্বার্থ-বান্ধব আওয়ামী সরকার ভারত সরকারের একমাত্র পছন্দ, এমন একটা উপসংহারে আসতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয়না। বুলেট খরচ না করেই অনুপচাটিয়া গংদের হাতের মুঠোয় পাওয়া, নিজ দেশের নদী ভরাট করে প্রতিবেশী দেশের ট্রানজিটের ব্যবস্থা করা, এমন ঐশ্বরিক সম্প্রদানের নজির দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে খুজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ হয়। ভারত আমাদের তিন দিকের প্রতিবেশি। আয়তন, লোকসংখ্যা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সহ অনেক কিছুতেই ওরা এগিয়ে। কিন্তু একটা জায়গায় ওদের নিকৃষ্টতা পৃথিবীর বাকি সব নিকৃষ্টতাকে হার মানাতে বাধ্য, প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক।

পাকিস্তানের কথা বাদই দিলাম, নেপাল, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশ সহ কোন প্রতিবেশীকেই কেন জানি ক্ষমতাধর ভারতীয় সরকার সার্বভৌম দেশ হিসাবে মানতে রাজি নয়। ভয়াবহ বানিজ্য ঘাটতি ও চোরাচালানি বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক আয়তনে ছোট একটা দেশকে গলাধঃকরণ করেই ক্ষান্ত থাকেনি, বরং একতরফা মিডিয়া আগ্রাসনের মাধ্যমে দেশের আন্তসামাজিক ও আন্তপারিবারিক সমীকরণে ধরিয়ে দিয়েছে ভয়াবহ ফাটল। পরিকল্পিত ভাবে সীমান্ত উন্মুক্ত করে এ দেশে ঠেলে দেয়া হচ্ছে ফেন্সিডিল, ইয়াবার মত নেশার বস্তু, সাথে আসছে অস্ত্র। যুবসমাজ নেশায় ধুকছে, হাতে অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য দিবা লোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে হায়েনার মত। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে বিদেশি সংস্কৃতির নোংরা থাবা। ক্ষুদ্র ও ভারী শিল্প বলতে বাংলাদেশে যা ছিল তার সবই এখন জাদুঘরে। স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিবেশী হিসাবে আমাদের ক্রিকেট দলকেও তাদের দেশের মাঠে নিতে অনীহা। এমনটাই আমাদের প্রতিবেশী। এমন একটা প্রতিবেশীর পছন্দের সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার। এ যেন দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে যাওয়ার সমীকরণের মত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এক দেশের সরকার ও অন্যদেশের রাজনৈতিক দল একে অপরের পরিপূরক।

ভারতকে ফিরিয়ে দেয়ার মত কৃতজ্ঞতার তালিকা এত তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাওয়ার নয় শেখ হাসিনার জন্য। সবাইকে হারিয়ে শেখ পরিবারের দুই সন্তানকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল প্রতিবেশী দেশে। সন্তানদের ভরন পোষন সহ সব খরচ বহন করেছিল দেশটার সরকার। স্বভাবতই দুই পক্ষের বর্তমান আচরণে লেনদেনের অলিখিত প্রভাব খুজে পাওয়া যায়। ব্যক্তি হাসিনার অনেক কিছু দেয়ার আছে রাষ্ট্র ভারতকে এবং ভারতেরও অনেক কিছু পাওয়া আছে শেখ হাসিনার কাছে। সমস্যা হচ্ছে, শেখ হাসিনাই গোটা বাংলাদেশ নয়, শেখ পরিবারও এ দেশের ইজারা নেয়নি। যে দেশের সরকার গরু চোরাচালানির জন্য তার প্রতিবেশী দেশের গরীব সাধারণ মানুষকে পশু পাখির মত গুলি করে মারে, তাদেরই মালামাল পারাপারের জন্য আমরা নদী ভরাট করে দেই সামন্যতম চিন্তা না করে, এখানেই আসে আন্তদেশীয় সম্পর্কের চাইতে ব্যক্তি সম্পর্কের লেনাদেনার প্রশ্ন। দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও ভারত ও শেখ পরিবারের জন্য লেনাদেনা, দায় শোধ ও কৃতজ্ঞতার বিনিময়ের মত। ধীরে ধীরে পরিস্কার হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে ব্যক্তি হাসিনার অধীনে নির্বাচন আয়োজনের করার আসল কারিগরের চেহারা। এ কারিগর ভারত। স্বার্থ-বান্ধব সরকারের পূত গন্ধময় শাসনের ফলাফল আগ বাড়িয়ে বুঝতে পেরেছিল এসব নিরামিষ খোর ধূর্ত শয়তানের দল। দেশের মানুষ বুঝে উঠার আগেই তাদের গলায় ঝুলিয়ে দেয় মৃত্যুদণ্ড। দেশের বিচার ব্যবস্থার ঘাড়ে বন্দুক রেখে তিতাস নদী ভরাটের মতই ভরাট করে রেখেছিল দেশের নির্বাচন নদী। ভেবেছিল এ নদীতে সাতার কেটে জনম জনম ধরে শোসন করতে থাকবে তিন দিক হতে বন্দী কোটি কোটি মানুষের একটা দেশকে। আসলে বাংলাদেশ প্রতিবেশী বেনিয়াদের বিবেচনায় কোন দেশ নয়, বরং ব্যবসা-বানিজের হাট। অনেকটা বাবুর হাটের মত।

বয়স ছোট হলেও স্পষ্ট মনে আছে ঘটনা গুলো। ৬৯’এর গন-আন্দোলন হতেই বোধহয় শুরু। আইয়ুব খান মোনায়েম খান গং পাইকারি হারে গ্রেফতার করছে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে এবং এই গংদের দেশীয় দোসরা উল্লাস করছে আইনশৃংখলার দোহাই দিয়ে, আস্ফালন করছে পেশি শক্তির মহড়া প্রদর্শনের মাধ্যমে। ৭১’এ মুক্তিযুদ্ধে চলাকালীন একজন মুক্তিযোদ্ধা অথবা তাদের পরিবারের কাউকে গ্রেফতার অথবা লাশ ফেললে একই কায়দায় উল্লাসে মেতে উঠত পাকিস্তানি দোসরের দল । বিজয় মিছিল, হুমকি, হাজার বছরে লড়কেলেঙ্গা পাকিস্তানের পক্ষে স্তুতি আর পাক সেনাদের বীরত্বের মহাভারত লেখায় মেতে উঠত এসব ভাড়াটিয়া সেবাদাসের দল। আজ একবিংশ শতাব্দির প্রথমাংশে এসে আবারও দেখতে হচ্ছে এসব কুলাঙ্গারদের প্রেতাত্মা। ওরা আইয়ুব, ইয়াহিয়া আর মোনায়েম খাঁ’দের মতই আস্ফালন করছে এবং ভয় দেখাচ্ছে শক্তি দিয়ে দমিয়ে দেবে দেশের অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছা।

১৭৩ দিন হরতাল, শত শত মানুষ খুন এবং নিজেদের জরায়ুতে তত্ত্বাবধায়ক নামক সরকারের জন্ম দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার স্বাদ নিয়েছিলেন। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে ঠেলে দিয়ে উদ্বার করেছিলেন প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ। পাচ বছর ধরে রাষ্ট্রকে নিবিড় লুটপাটের পর দেশের মানুষ উনাদের জন্য এখন মোহম্মদী বেগের মত। তাই বাঁচার জন্য আবারও দ্বারস্থ হয়েছে ভারতীয় গনিকাদের দুয়ারে। এবং তাদের ঔরস হতেই জন্ম নিয়েছে গণতন্ত্র রক্ষার নতুন হযরতে আলা, শেখ হাসিনা। এসব ভন্ডামি, নষ্টামির সাথে এ দেশের মানুষ অনেকটাই এখন পরিচিত। আগের বার বেগম জিয়া যেমন পারেন নি, এ যাত্রায় শেখ হাসিনাও পারবেন না। এ ইতিহাসের অমেঘো পরিণতি, এ হতে ইয়াহিয়া আইয়ুব, হিটলার মুসোলিনি, শেখ মুজিব জেনারেল জিয়া, এরশাদ বেগম জিয়া যেমন রেহাই পাননি, শেখা হাসিনাও রক্ষা পাবেন না। যুদ্ধের মাঠে বুদ্ধিমানরাই পিছু হটে। শেখ হাসিনা বুদ্ধিমান হয়ে থাকলে পিছু হটার এখনই সময়। অন্তত প্রাণে বাচতে পারবেন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন