হিলারি ক্লিনটন ও ই-মেইল ফিয়াস্কো...

Submitted by WatchDog on Friday, November 4, 2016

রিপাব্লিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার নির্বাচনী ক্যাম্পের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছেন এফবিআই প্রধান জেমস কমি। ব্যাপারটা আবারও সেই ই-মেইল জটিলতাকে ঘিরে। বাইরের দুনিয়ায় হিলারি ক্লিনটনের এই ই-মেইল বিপর্যয়কে হাইলাইট করে এমনভাবে তুলে ধরা হচ্ছে যেন ভয়াবহ কোন অপরাধের সাথে জড়িয়ে আছেন ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী। আমাদের মত দেশে যেখানে খুনের আসামীকে রেহাই দেয়া হয় দলীয় পরিচয়ে সেখানেও হিলারির ই-মেইল নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। অথচ শতকরা প্রায় ৯৯জনেরই জানা নেই ঘটনার সারমর্ম।

ওবামা প্রশাসনের প্রথম টার্মে সেক্রেটারি অব স্ট্যাইট (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) থাকাকালীন হিলারি ক্লিনটন অফিসিয়াল কাজে অনেক সময় অরক্ষিত সার্ভার হতে ই-মেইল আদান-প্রদান করেছিলেন। এ ধরণের সার্ভার হতে গোপন তথ্য সম্বলিত ই-মেইল প্রেরণ কোনভাবেই নিরাপদ ছিলনা। বিশেষ করে ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত রাষ্ট্রের অতি গোপন তথ্যাবলী। বিরোধী ক্যাম্পের আশংকা সত্য করে ব্যক্তিগত সার্ভার হতে প্রেরিত সবকটা ই-মেইল হ্যাক করে ঘটা করে বিশ্ব মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়। এ ধরণের ক্রিমিনাল এক্টের মূল হোতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। ডিক্টেটর পুতিনের একনিষ্ঠ ভক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া মনেপ্রাণে চাইছে ট্রাম্প জিতে যাক এবারের নির্বাচনে। প্রকাশিত ই-মেইলের উপর দেশের সিনেট কমিটিতে শুনানি হয় এবং ১১ ঘণ্টা ধরে হিলারি ক্লিনটনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পাশাপাশি চলে এফবিআইয়ের তদন্ত। ভয় ছিল অতি গোপন (ক্লাসিফাইড) কোন রাষ্ট্রীয় তথ্য হ্যাকারদের হাতে পড়েছে কিনা যার ফলে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। শুনানি ও তদন্ত শেষে এই সিদ্ধান্তে আসা হয় হ্যাকড হওয়া ই-মেইল গুলোতে এমন কোন কনটেন্ট ছিলনা যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে। হিলারি নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। খেলা এখানেই সাঙ্গ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি।

হুমা মাহমুদ আবেদিন হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠদের একজন। ভারতীয় মুসলিম ইমিগ্রেণ্ট পরিবারে জন্ম নেয়া এই ট্যালেন্টেড মহিলা হিলারির নির্বাচন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ করছিলেন। এন্থনি উইনার হুমার স্বামী। নিউ ইয়র্কের ইহুদি অধ্যুষিত এলাকার ডেমোক্রেট দলীয় এই কংগ্রেস-ম্যান প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নিউ ইয়র্ক শহরের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য। সম্ভাবনাও ভাল ছিল। ইহুদি হওয়ার কারণে বিভিন্ন লবি হতে অঢেল অর্থের নিশ্চয়তা আসতে শুরু করেছিল। বোমা বিস্ফোরণের মত খবরটা দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে মিডিয়া তথা রাজনৈতিক আঙ্গিনায়। এন্থনি উইনার প্রায় রাতেই ল্যাপটপ ও মোবাইল হতে নিজের কুৎসিত ও নোংরা ছবি অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের কাছে পাঠাতে অভ্যস্ত। মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তোলে তার এই নোংরা দিক। স্বভাবতই সড়ে দাড়াতে হয় মেয়র নির্বাচন হতে। পাশাপাশি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন কংগ্রেস হতেও। রাজনীতি হতে অকালে বিদায় নিতে হয় এই উদীয়মান নেতাকে। স্ত্রী হোমা আবেদিন অনেক মান অভিমানের পর ক্ষমা করে দেন স্বামীকে। বলা হয় বোঝাপড়ার মধ্যস্থতা করেন ক্লিনটন পরিবার। ঝামেলা কাটিয়ে হোমাও ফিরে যান হিলারির অধীন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। হঠাৎ করে খবর লিক হয় এন্থনী উইনার আবারও চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের নোংরা অভ্যাস। মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারণা প্রায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের সাথে তার নিজের নেংটা ছবির আদান-প্রদান। এ যাত্রায় হোমা ক্ষমা না করে আলাদা হয়ে যান চরিত্রহীন স্বামীর কাছ হতে। আঁতে ঘা লাগে এন্থনীর এবং প্রতিশোধ নিতে মিডিয়াতে প্রকাশ করেন মাঝে মধ্যে স্ত্রী হোমার ল্যাপটপ ব্যবহার করেছিলেন এসব অপকর্মে। এখানেই জেগে উঠেন রাজনীতির মাঠে আরেক লম্পট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নির্বাচনী ক্যাম্প দাবী তোলে হিলারি ও হোমার মধ্যে বিনিময় করা ই-মেইল গুলো পরীক্ষা করে দেখতে। কারণ হিসাবে বলা হয় যে ল্যাপটপ হতে এন্থনী নোংরা ছবি পাঠিয়েছিল একই ল্যাপটপ হতে হিলারির সাথে অনেক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনিময় করেছিলেন হোমা। এবং সব ই-মেইল আবারও হ্যাকড হয় পুতিন বাহিনীর হাতে। ব্যাপারটা নিয়ে আমেরিকান জনগণ মাথা ঘামাতে যেতোনা যদিনা হঠাৎ বোমা ফাটানোর মত এফবিআই প্রধান জেমস কমি ঘোষণা না দিতেন তার সংস্থা নতুন করে তদন্ত করবে হিলারির ই-মেইল। এই ঘোষণাকে পুঁজি করে ট্রাম্প ক্যাম্প হরেক রকম স্পেকুলেশন ছড়াচ্ছে...বলছে এফবিআই নিশ্চয় এমন কিছু পেয়েছে যার কারণে বাধ্য হয়েছে নতুন করে তদন্তে নামতে। চরিত্রহীন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে এ পর্যন্ত ১১ জন মহিলা সামনে এসেছেন। খোদ ট্রাম্পের মুখ হতে বের হওয়া কুৎসিত কথাবার্তার ভিডিও এসেছে মিডিয়ায়। অসৎ এই বিলিওনিয়র নিজের মেয়ের শরীর নিয়েও নোংরা মন্তব্য করেছেন যার অডিও খুঁজলে পাওয়া যাবে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়।

রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের অপরাধ এবং যৌন নিপীড়নের অপরাধকে দাঁড়িপাল্লায় দাঁড় করালে অপরাধের পাল্লাটা কার দিকে হেলে পড়বে তার উপর রায় হবে আগামী ৮ই নভেম্বর।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন