বেগম জিয়ার ক্ষমা তত্ত্ব ও কিছু প্রশ্ন

Submitted by WatchDog on Monday, October 28, 2013

Awami League and BNP

যা হওয়ার কথা তাই হচ্ছে। রক্ত ঝরছে। অলিগলি রাজপথে এখন রক্তের হোলিখেলা। এ দেশে রক্তই যেন সব সমস্যার একমাত্র সমাধান। আইয়ুব খানকে বিদায় করতে রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল। তেমনি হয়েছিল ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানদের বিদায় করতে। স্বদেশি এরশাদও কম যাননি। তিনিও তৃষ্ণার্ত ছিলেন এবং রক্ত দিয়ে মেটাতে হয়েছিল সে তৃষ্ণা। সময় এখন ভিন্ন। ইয়াহিয়া, টিক্কা ও এরশাদের জুতায় পা রেখে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে রক্ত চাইছেন গণতন্ত্রের কথিত রক্ষক জনাবা শেখ হাসিনা। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার বাঁকা পথ খুঁজছেন তিনি। সুপ্রিমকোর্টের বিচারক লীগের মোজাম্মেল বিচারককে দিয়ে শাসনতন্ত্র সংশোধন করিয়েছেন। এখন বলছেন তিনি শাসনতন্ত্রের রক্ষক, সেবক এবং পুজারী মাত্র। এই মহাপবিত্র কাগজে হাত দেয়ার ক্ষমতা নাকি খোদ ঈশ্বর বৈ অন্য কেহ রাখেন না। আইরনি হচ্ছে, এ ধরনের অন্ধ সেবকদের ক্ষমতার মসনদ হতে কোন পথে তাড়ানো যায় তার নীলনক্সাও এই হাসিনাই দেখিয়ে গেছেন। এবং এখানেই আসে জ্বালাও, পোড়াও, হরতাল, রক্তের উন্মাদনা এবং বিদায় পর্ব। অপর পক্ষ শেখ হাসিনার তৈরী রোডম্যাপে খোদ হাসিনাকেই ধাওয়া করছে। এবং আইয়ুব, ইয়াহিয়া, টিক্কা এবং এরশাদের মত শেখ হাসিনাকেও বিদায় নিতে হচ্ছে। উনি নিজে তা বুঝেন নি ব্যাপারটা এমন নয়। নিশ্চয় বুঝে থাকবেন। মন্ত্রি, এমপিদের ব্যক্তিগত সহকারিরা বুঝে থাকলে, শেখ হাসিনার না বুঝার কোন কারণ নেই। সচিবালয় ছেড়ে ওরা দলে দলে পালাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারীকে মন্ত্রি নিজে আটক দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর সহাকারী পাঁচ বছরের ছুটি চেয়ে দরখাস্ত করেছেন। ঠিকানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে সময় সিলেকশনের ব্যাপারে ভদ্রলোক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। মনে মনে হিসাব কষে দেখেছেন আগামী পাঁচ বছর প্রতিপক্ষ দল ক্ষমতায় থাকবে এবং উনাদের মত একই কায়দায় দেশকে লুটতে থাকবে। সময়ের শেষপ্রান্তে ওদেরও পালাতে হবে। মন্ত্রি পাড়ায় এসব একান্ত ব্যক্তিগত সহকারীদের চাকরি দেয়া হয় বিশেষ একটা উদ্দেশ্য। মন্ত্রনালয়ের লুটের বখরা জড় করে মন্ত্রীর বাসায় পৌছে দেয়া। সেজন্যই যুদ্ধের দামামা বাজার রাতেই তাদের পালানোটা বিশেষ জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। কারণ প্রতিপক্ষ ক্ষমতায় বসে চ্যাং দোলা পর্বটা তার মাধ্যমে শুরু করলে মন্ত্রি, এমপি নামের এসব আলীবাবা চল্লিশ চোরদের অনেক লোমহর্ষক কাহিনী বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা থেকে যায়। বলার অপেক্ষা রাখেনা তারা কেবল নিজেদের অপরাধ হতে পালায় না, পালায় বসদের জন্যও। যাদের নিমক খেয়ে সম্পদের পাহাড় বানায় তাদের বিপদে ফেলে পালানোর মত আদম নয় এরা। ক্ষমতার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে বিমানবন্দরকে নিরাপদ বানিয়ে পাচার করে নেয় মন্ত্রীর সম্পদ। এবং বিদেশে গিয়ে মন্ত্রীর সম্পদ পাহারা দেয়ার পবিত্র কাজে নিয়োজিত হয়। এবং একদিন এদেরই দেখা যায় জাতিসংঘের সামনে প্লাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ করতে। উদ্দেশ্য, প্রতিপক্ষের চুরি হতে প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করা।

শেখ হাসিনার লেফটেন্যান্টরা পালাচ্ছে। আগের পর্বে একই কাজ খালেদা জিয়ার সৈনিকরাও করেছিল। সমসাময়িক রাজনীতির জটিল সমীকরণ মেলাতে চাইলে আমার মত ম্যাঙ্গোদের হিসাব খুব সোজা, ক্ষমতার মসনদ হতে চেলা চামুণ্ডা সহ শেখ হাসিনাকে এ যাত্রায় বিদায় নিতে হবে। এবং বঙ্গভবন ও গণভবনের লাল কার্পেট মাড়িয়ে মসনদের দিকে রওয়ানা দিবেন জনাবা খালেদা জিয়া। আমার এ লেখার মূল উদ্দেশ্য বেগম জিয়ার ক্ষমতায়ন নিয়েই। তিনি নিজেও অনুভব করছেন ক্ষমতার নিঃশ্বাস। তাই কথা ও কাজে প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন ভবিষৎ প্রধানমন্ত্রীর। বাংলাদেশের রুগ্ণ ও পঙ্গু রাজনীতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করার মত কোন ইঙ্গিত নেই দিগন্ত রেখায়। আশা করলে সে আশা ভাঙ্গতে সময় লাগে না। এই যেমন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার গন্ধ পেয়েই কথা নিয়েছিলেন নতুন ধারার শাসন সৃষ্টি করার। যার মধ্যে অন্যতম ছিল, বিরোধী দলীয় ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব, সততা, স্বচ্ছতা সহ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন। এসব প্রতিশ্রুতির কয়টা বাস্তবায়িত হয়েছে তার ফলাফল পাওয়া যাবে আগামী নির্বাচনী রায়ে। দশ টাকা সের চাল আর বিনামূল্যে সারের কথা না-ই আনলাম। একই কায়দায় খালেদা জিয়াও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। রাজনীতির এসব গতবাঁধা ভাওতাবাজি আমলে নেয়ার কোন কারণ নেই। তারপরও জনাবা জিয়ার দুটো প্রতিশ্রুতির দিকে নজর না ফেরালেই নয়। প্রথমত, নতুন ধরণের শাসনের কথা বলছেন তিনি। অবশ্য বিস্তারিত কিছু বলছেন না এর উপর। নতুন শাসন যদি সন্তানের হাতে ক্ষমতা সঁপে রাজনীতি হতে বিদায় নেয়া হয় আমার মত ম্যাঙ্গোদের জন্য তা নতুন কিছু নয়। বরং নতুন বোতলে পুরানো মদ ঢালা। সত্যিকার অর্থে যদি নতুন কিছু নিয়ে মসনদে যেতে চান তার কিছু রূপরেখা এখনই প্রকাশ করা উচিৎ। রেকর্ড হিসাবে তুলে রাখলে ভবিষতে কাজে আসবে। দ্বিতীয়ত, বেগম জিয়া ঘোষনা দিচ্ছেন তিনি প্রতিহিংসার রাজনীতি করবেন না। এবং হাসিনা সহ সবাইকে মাফ করে দেবেন। খটকার শুরু এখানটায়।

মাফ করে দেবন? জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে কোন অপরাধ গুলো মাফ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বিডিআর হত্যাকাণ্ড¨? পদ্মাসেতু লুট? সোনালী ব্যাংক লুট? শেয়ার মার্কেট লুট? ডেসটিনি হরিলুট? ছাত্রলীগের মহামারী? ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসের উপর ব্যক্তিগত আক্রোশ? কোন অপরাধ হতে রেহাই দেবেন শেখ হাসিনা গংদের? ইসলাম ধর্মে একটা কথা আছে, যে অন্যায় করে এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় তারা সমান অপরাধী। খালেদা জিয়া যদি আওয়ামী লীগের এসব অপরাধ পর্ব ক্ষমা যোগ্য মনে করেন আমরা ধরে নেব তিনিও ছিলেন এ অপরাধ চক্রের অংশীদার। ক্ষমতার চূড়ান্ত ঠিকানায় বসে যে নেত্রী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুম করানোর মত অপরাধ করতে পারেন, কেবল ব্যক্তিগত খায়েশ অপূর্ণ থাকার কারণে ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে চরম অপদস্থ করতে পারেন তাকে ক্ষমা করার জন্য জনগণ রায় দেবেনা। মহানুভবতা ভাল জিনিস, কিন্তু তার জন্য চাই যোগ্য স্থান, কাল ও পাত্র। ৫৭ জন সেনা অফিসারকে বাঁচানোর জন্য একটা বুলেট খরচ করতে যিনি বাধ সেধেছিলেন সেই তিনি হেফাজতিদের নিরস্ত্র মিছিলে পাগলা কুকুরের মত লেলিয়ে দিয়েছিলেন সরকারের সবকটা বাহিনী। আমরা দেখতে চাই এ জন্যে কেউ না কেউ আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছে, কেউ ফাঁসিতে ঝুলছে। লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথের ভিখিরি বানিয়ে সম্পদের পাহাড়ের উপর যারা ঘোড়া দাবাচ্ছে তাদের ক্ষমা করার জন্য জনগণ বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানাবে না। ক্ষমা নয়, রাষ্ট্রীয় লুটেরাদের কোমরে আমরা দেখতে চাই দড়ি, গলায় ফাঁসি। আবুল হোসেন চক্রকে মাফ করা হলে তা হবে রাষ্ট্রীয় অপরাধ, এবং সে অপরাধের দায় দায়িত্ব নিতে হবে নতুন সরকারকেই।

বেগম খালেদা জিয়া, পরিষ্কার করুন আপনার ’ক্ষমা’ তত্ত্ব। এবং তা নির্বাচনের আগে। ক্ষমা করা নয়, বরং চাওয়া দিয়েই শুরু করতে পারেন আপনার প্রতিশ্রুত নতুন ধরণের শাসন। পুরানো শাসন ঘেটে দেখুন, ক্ষমা চাওয়ার ঝাঁপিটা আপনাদেরও ছোট নয়।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন