দেশীয় ক্রিকেট, বিকেলে ভোরের গল্প।

Submitted by WatchDog on Wednesday, October 20, 2010

Cricket in Bangladesh

পেশাদারী ক্রিকেটের সাথে সৌখিন ক্রিকেটের পার্থক্যটা বোধহয় কালের চক্রে চাপা পরে গেছে। আজকাল ক্রিকেট মানেই স্পনসর, ম্যাচ ফি, সরকারী বেতন-ভাতা, পন্যের বিপনণ, এক কথায় ঘাটে ঘাটে অর্থের ছড়াছড়ি। এ দৌড়ে ভারতীয়রা নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিভিন্ন পেশাদারী লীগ চালু করে। ভদ্রলোকীয় তকমা হতে আধুনিক ক্রিকেটকে কতটা নোংরা গলিতে নামানো হয়েছে তার চমৎকার উদাহরণ আজকের পাকিস্থান। অর্থের জন্যে হেন কোন কাজ নেই যা করতে রাজী হবেনা দেশটার ক্রিকেটাররা। এ দুনিয়ার অন্যতম নবীন দেশ বাংলাদেশও এ দৌড়ে খুব যে একটা পিছিয়ে তা বলা যাবে না। পকেট সমীকরণের সমাধান খুঁজতে এ দেশের ক্রিকেটারও পা বাড়িয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বাণিজ্যে। যে কোন খেলায় এগুলোকেই বলা হয় পেশাদারিত্ব। মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে এগুলো মেনে নেয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোন পছন্দ নেই।

শুধু ক্রিকেট কেন, বলতে গেলে যে কোন স্পোর্টস এখন ভালভাবে বেচে থাকার লোভনীয় প্রফেশন। অর্থের সাথে খ্যাতি, এই দুই মিলে খেলোয়াড়দের অবস্থান এখন অনেক উঁচুতে। বাংলাদেশের ক্রিকেট কবে, কখন এবং কিভাবে পেশাদারী জগতে পা রেখেছিল তার কোন মাইলস্টোন আমাদের সামনে নেই। কিন্তু বাস্তবতা হল দেশীয় ক্রিকেটের পা হতে মাথা পর্যন্ত সবটাতেই এখন প্রফেশনালিজমের রাজত্ব। সরকারী কোষাগার হতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে ক্রিকেট বাণিজ্যে। এ নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত খেলোয়াড়, কোচ সহ প্রশাসনের সবাই কামিয়ে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অংক। হালকা পাতলা চেহারার হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পকেটও কিন্তু কম ভারী নয়। তবে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যান্য পেশাদারদের সাথে বাংলাদেশি পেশাদারদের একটা মৌলিক পার্থক্য আছে, তা হল প্রোডাক্টিভিটি। হারের পর হার উপহার দিয়ে অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটকে অনেকটাই নিশ্চয়তার কাতারে নিয়ে গেছে আমাদের ক্রিকেটাররা। হাজার ব্যর্থতাও কিন্তু ক্রিকেটারদের পকেট স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করতে পারেনি। অনেকে বলবেন এটাও তো প্রেফশনালিজমের অংশ। সহমত। সরকারের ক্রিকেট বিনিয়োগে কিছুটা হলেও ফসল দিয়েছে সদ্য সমাপ্ত সিরিজ। ক্রিকেটের পরিভাষায় বলা হয় হোয়াইটওয়াশ। সোজা বাংলায় নাস্তানাবুদ। সুখের সাগরে ভাসিয়ে জাতিকে এমন এক বন্দরে নিয়ে গেছে যেখান হতে অন্য যে কোন ক্রিকেট আমাদের শুধু হতাশ করবে। অনিশ্চয়তার খেলা এই ক্রিকেট। একটা সিরিজে ভাল খেলেছে বলে আগামী সিরিজ ভাল খেলবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। এমন নিশ্চয়তা থাকলে ক্রিকেটের আসল মজাটাই বোধহয় নষ্ট হয়ে যেত। সদ্য সমাপ্ত সিরিজ হতে একটা উপসংহার টানলে বোধহয় অন্যায় হবেনা, উন্নতি করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। কিন্তু এক সিরিজের এ সাফল্য দিয়ে দেশীয় ক্রিকেটের ’সোনালী’ অতীত ধামাচাপা দেয়ার কোন উপায় নেই। সৌখিন খেলোয়াড়দের নিয়ে এ ধরণের একটা লেখা নিশ্চয় অপলেখা হিসাবে বিবেচিত হত। কিন্তু প্রফেশনাল খেলা আমার মত কোটি কোটি নাগরিকদের খাজনার পয়সায় লালিত, তাই এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা আমাদের জন্মগত অধিকার। ৪-০ তে সিরিজ জেতা কি এতটাই প্রাপ্তি যা ২০ জন খেলোয়াড়কে ঢাকায় একটা করে প্লট আর ১ লাখ টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করতে হবে? বিশ্বকাপ হলে না হয় একটা কথা ছিল, অলিম্পিকে পদক পেলেও না হয় মেনে নেওয়া যেত, কিন্তু একটা হোম সিরিজে মনে রাখার মত একটা সাফল্যের জন্যে এত পুরস্কার? বাংলাদেশের সরকারী খাজাঞ্জিখানা কি সম্পদের সমুদ্রে ভাসে যা হতে যখন খুশি যতটা খুশি খরচ করা যায়? ক্ষমতা হাতে পেলে আমাদের নেতা-নেত্রীরা তা পৈত্রিক সম্পত্তি ভেবে ভুল করতে ভালবাসেন। আর এই ভুলের মাশুল গুনতে হয় খেটে খাওয়া মানুষকে। আমাদের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা অনুপস্থিত, ইংল্যান্ডকে হারায় তো আয়ারল্যান্ডের সাথে হারে, এক খেলায় ভাল খেললে পরিবর্তী ২০ খেলায় ধারাবাহিকভাবে খারপ করে। এমন একটা প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক ফলাফল নিশ্চয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। আরও ২/১টা সিরিজ পর্যন্ত কি অপেক্ষা করা যেত না পেশাদার খেলোয়াড়রদের এমন অপেশাদারি পুরস্কারে পুরস্কৃত করতে?

ভালো লাগলে শেয়ার করুন