দাসত্বের ১৫ কোটি ও একজন আদুর

Submitted by WatchDog on Saturday, October 19, 2013

Logi Boitha Awami League

কিবোর্ডে হাত দিয়ে ঠায় হয়ে বসে থাকি। ভাবি কোথা হতে শুরু করা যায়। পত্রিকায় আসা ছবি ও লেখা গুলো বার বার পড়ি। হিমাগারে সংরক্ষিত ইলিশের মত শক্ত হয়ে আসে হাত-পা। চোয়ালের পুরানো ব্যথাটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। কাম চেতনার মত আঙ্গুল গুলাও উত্তেজিত হয় এবং এক সময় নিস্তেজ হয়ে আসে। শেষমেশ ক্রোধ এসে জড়ো হয়। চেপে বসে শরীর ও মগজে। এভাবেই কেটে যায় সময়। অথচ লেখার পাতায় একটা লাইনও জমে হয়না। কিছু একটা না লিখলে মহাজগত্ অশুদ্ধ হয়ে যাবে এমন নয়। হতে পারে এ এক ধরনের দায়বদ্ধতা। তাও নিজের কাছে। এত বড় অন্যায় নিয়ে কিছু একটা না লিখলে ভেতরের জানোয়ারটা বশ মানানো কঠিন হয়ে যায়। পা হতে মাথা পর্যন্ত অদ্ভুত সব পোকাদের কিলবিলানি শুরু হয়। মনে হয় উত্তর মেরুর হীমশীতল বাতাস গ্রাস করে নিচ্ছে আমার বেচে থাকা। প্রথম যেদিন আদুরির ঘটনাটা জানতে পারি রাগের চাইতে অনুশোচনায় ভুগেছি বেশি। জীবন নদীতে উলটো সাতার কেটে ফিরে গেছি নিজ ঘরে। আদুরীদের নিয়েই আমরা বড় হয়েছি। একজন নয়, একাধিক আদুরী ছিল আমাদের। জীবন যুদ্ধে পরাজিত মা-বাবা আপন সন্তানকে অনেকটা ফেরি করার মত বিকিয়ে দেয় ক্রেতাদের কাছে। বিনিময় মূল্য বলতে দাবি করা হয় একমুঠো ভাত, মাথার উপর যেনতেন ছাদ ও বেড়ে উঠার নিশ্চয়তা। এভাবেই শুরু হয় আদুরীদের দাসত্ব, যা অনেক সময় গোয়াল ঘরে খুটি দেয়া বোবা গরুদেরে হার মানায়। না, আমাদের সাথে বেড়ে উঠা আদুরীদের জীবন এভাবে বয়ে যায়নি। দুধের নদীতে সাঁতার কেটে ওদের জীবন কেটেছে বললে নিশ্চয় মিথ্যা বলা হবে।

আসলে জীবনটাই বোধহয় এরকম। কোথাও কোন ঘটনা ঘটে, সে ঘটনার রেশ আমাদের শয়নকক্ষ পর্যন্ত চলে আসে। আমরা উদ্বেলিত হই, উৎকণ্ঠায় থাকি, রাগ করি, ক্ষোভ ও প্রতিবাদে ফেটে পরি। এক ফাঁকে নতুন কোন ঘটনা ঘটে। ধীরে ধীরে ভুলে যাই আগের ঘটনা। রাগ, ক্ষোভ অথবা প্রতিবাদ থিতিয়ে আসে এবং দুহাত বাড়িয়ে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাই সামনের দিকে। মনুষ্যত্বের দাঁড়িপাল্লায় দাঁড় করিয়ে বিচার করলে সবই স্বাভাবিক মনে হবে। চাইলে এ নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। সভ্য সমাজের সবকটা উপাদান আমাদের রক্তে। আদুরী কাহিনীও এর বাইরে নয়। এগার বছর বয়স্ক একটা শিশুর জীবন বাংলাদেশে স্বাভাবিক জীবন নয়। বিশেষ করে আমরা যারা পশ্চিমা দুনিয়ায় শিশু জীবনকে কাছ হতে দেখেছি তাদের কাছে এ শুধু অস্বাভাবিক নয়, অগ্রহণযোগ্য অন্যায় ও অপরাধ। এসব অগ্রহণযোগ্যতা প্রকৃতি প্রদত্ত কোন অভিশাপ নয়, বরং অর্থনৈতিক বেড়াজালে সৃষ্টি মনুষ্য পাপ। এ পাপ হতে বেরিয়ে আসার জন্যই মানুষ যুগ যুগ ধরে লড়াই করছে, সৃষ্টি করছে, ধ্বংস করছে। কেন্দ্রীভূত ভারত, বৃটিশ শাসিত ভারত ও পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় এ প্রক্রিয়ারই অংশ। এ দৌড়ে দেশ ও জাতি হিসাবে আমরা কতটা এগুতে পেরেছি হয়ত সেটাই হবে সভ্যতা যাচাইয়ের মাপকাঠি। আদুরীকে নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। অনেকে সাহায্যের হাত নিয়েও এগিয়ে এসেছেন। সময় আসবে যেদিন ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া আদুরী মাটির পৃথিবীতে স্বাভাবিক ভাবে পা ফেলতে সক্ষম হবে। এ কিশোরীকে নিয়ে হৃদয় ছুয়ে যাওয়া এমন সব লেখা এসেছে যার উপর আমার কাঁচা লেখা নতুন কোন আবেদন সৃষ্টি করবে বলে মনে হয়না। এর কোন প্রয়োজন আছে বলেও মনে হয়না। তবে আদুরী পর্বটা মাথায় এল আজ অন্য প্রসঙ্গে।

২৫শে অক্টোবর নিয়ে দেশে টান টান উত্তেজনা। যেন নতুন কোন অক্টোবর বিপ্লবের পদধ্বনি। লগি-বৈঠার জবাব দিতে কুড়াল-খুন্তি নিয়ে তৈরী হচ্ছে প্রতিপক্ষ। সহজ ভাষায়, রক্তের নোনা স্বাদ নিতে নিমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে আমাদের। যারা রাজনীতি নামক পেশায় ফুলটাইম জীবন কাটান তাদের অনেকের কাছে ২৫শে অক্টোবর নতুন শুরুর সন্ধিক্ষণ। এ পেশা ঠিক রাখতে চাইলে চাকরিতে আসা বাধ্যতামূলক। এসব পেশাজীবীদের অনেকেই ভাড়ায় লোক নামাবে, হাতে ধরিয়ে দেবে কুড়াল খুন্তি। অন্যপক্ষের আছে জনগণের ম্যান্ডেট। তাই তাদের হাতে থাকবে বন্দুক, কামান, ট্যাংক। অর্থাৎ মানুষ মারার প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হবে। গর্জে উঠবে পুলিশের বন্দুক, কুড়ালের আঘাতে থেতলে যাবে কারও মস্তক। আমরা যারা লগি-বৈঠার পশুত্বকে দলীয় চশমায় ’উপভোগ’ করিনি তাদের হয়ত তৈরী থাকতে হবে নতুন সব পৈশাচিকতার স্বাক্ষী হতে। এখানেই আসে আদুরী প্রসঙ্গ। দুই পরিবারের দুই মহিলার কাছে ১৫ কোটি মানুষের প্রায় সবাইকে কেন জানি আদুরী মনে হয়। জাতিকে লগি-বৈঠা দিয়ে পেটাবে, খুন্তি-কুড়াল দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করবে এবং ছুড়ে ফেলবে জীবন নামক ডাস্টবিনে, খুব কি পার্থক্য আছে আদুরীর ভাগ্যের সাথে? নদী নামের যে মহিলা আদুরীর গায়ে আগুনের ছ্যাঁকা দি্ত, ছুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ উন্মুক্ত করে জৈবিক আনন্দ পেত, তার সাথে একজন শেখ হাসিনা অথবা খালেদা জিয়ার খুব কি পার্থক্য আছে? জাতি হিসাবে আমরা যা করছি তা-ও কি একবিংশ শতাব্দীর দাসত্ব নয়? আদুরীকে কিছু আর্থিক সহায়তা দিয়ে হয়ত পায়ের উপর দাঁড় করানো যাবে, কিন্তু তাতে নতুন একজন আদুরীর জন্ম কি ঠেকানো যাবে? গোটা রাষ্ট্রকে দাসপ্রথার আষ্টেপৃষ্টে আটকে দুটি পরিবার নিজেদের প্রভুত্ব কায়েমের যে মধ্যযুগীয় লড়াই করছে তার নাম আর যাই হোক রাজনীতি হতে পারেনা। আর এ অপরাজনীতিও আজীবন চলতে পারেনা। তাহলে আমাদের কি একজন আব্রাহাম লিংকনের অপেক্ষায় থাকতে হবে, যার হাত ধরে জাতি মুক্তি পাবে হাসিনা-খালেদা দাসপ্রথা হতে? সে সময় হতে আমারা আজ কতদূরে?

ভালো লাগলে শেয়ার করুন