নোবেলের শান্তি অশান্তি...

Submitted by WatchDog on Saturday, October 11, 2014

Malala Yousafzai

মালালা ইউসুফজাইকে নোবেল দেয়া অন্যায় কারণ সে পাকিস্তানী। পাকিস্তানীদের হাতে ৩০ লাখ বাংলাদেশির রক্ত। সে রক্তের দায় দায়িত্ব কিছুটা হলেও নিতে হবে এই কিশোরীকে। অথচ সময় ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে নেয়নি। শহবাগ চত্বরের শান্তি মিছিলেও সে যোগ দেয়নি। ইউনুস স্যারকে নোবেল দেয়া ঘোরতর অপরাধ কারণ তিনি সুদখোর। সুদ আদায় করতে গিয়ে গরীবের ঘর হতে তিনি উট-মার্কা ঢেউটিন খুলে নিচ্ছেন। এবং দিন শেষে তা জমা করছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের তহবিলে। অনেকের অভিযোগ ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে এই ব্যাংকার শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাননা। সে বিবেচনায়ও তিনি নোবেল পাওয়ার গোগ্যতা রাখেন না। কৈলাশ বাবুকে নোবেল দিলে তা হবে পাক-ভারত সম্পর্কের প্রতিফলন মাত্র। যোগ্যতা-হীনদের নোবেল দিতে গিয়ে নোবেল কমিটি নাকি এ পুরস্কারকে জোকের পর্যায়ে নামিয়ে ফেলেছেন। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ তথা তাদের দালালদের যারা পা চাটবে তাদের জন্যেই নাকি নির্ধারিত থাকে নোবেল পুরস্কার। অবশ্য তা কেবল শান্তির বেলায় প্রযোজ্য কিনা বুঝা যায়নি। রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, মেডিসিন এবং সাহিত্যে এই চাটাচাটির সুযোগ কতটা উন্মুক্ত তাও ভাবনার বিষয়। মোদ্দা কথা নোবেল কমিটি তাদের পুরস্কারের তালিকা চূড়ান্ত করার আগে বাংলাদেশি আইজুদ্দি আর ফাজিলুদ্দিদের মতামত নেয়না এটাই চূড়ান্ত এবং চরম ভুল। ফিলটার স্যারের সভাপতিত্বে শাহবাগ মঞ্চের তত্ত্বাবধায়নের বিবেচনাই হবে নোবেল পুরস্কারের সহি বিবেচনা। যতদিন পর্যন্ত নরওয়ের নোবেল কমিটি ঢাকায় স্থানান্তরিত না হবে ততদিন এ ফ্যাক্টরি হতে যত লওরিয়াট জন্ম নেবে তার সবকটাই হবে অযোগ্য, অপদার্থ ও সাম্রাজ্যবাদের দালাল। জনগণের পয়সায় নরওয়েজিয়ানদের এ তামাশা এ দেশের জনগণ কোনদিনই মেনে নেবেনা।

জনগণের পয়সা!

সুইডেনের শিল্পপতি, আবিষ্কারক ও ব্যবসায়ী আলফ্রেড নোবেল আসলেই কি জনগণের সম্পত্তি ছিলেন? ইতিহাস যা বলে তার সারমর্ম হল, ১৮৩৩ সালে জন্ম নেয়া এই সুইডিশ ছিলেন একাধারে রসায়নবিদ, প্রকৌশলী এবং আবিষ্কারক। মূলত যুদ্ধ সংক্রান্ত সমরাস্ত্র আবিষ্কার, এর উৎপাদন ও বাজারজাত করণের মাধ্যমে অল্প সময়ে বিশাল সম্পদের মালিক হন। তার আবিষ্কারের তালিকার অন্যতম ছিল ডায়নামাইট। ১৮৮৮ সালে ফ্রান্সের এক দৈনিক এই আবিষ্কারকের অবিচুয়ারি লিখতে গিয়ে টাইটেল দেয় ’মার্চেন্ট অব ডেথ ইজ ডেড’। নিজের সম্পর্কে এহেন নির্মম মন্তব্য পড়ে চমকে উঠেন জনাব নোবেল। পূনঃমূল্যায়ন করেন নিজের জীবন এবং মৃত্যুর এক বছর আগে উইল বদল করে জনকল্যাণমূলক কাজকে উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করার জন্য নোবেল পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত দিয়ে যান। এভাবেই শুরু নোবেলের যাত্রা। জনগণের পয়সায় নয়, বরং নিজের ভয়াবহ আবিষ্কারের কাফফারা দিতে একক এক ব্যক্তির আত্মোপলদ্বির ফসল আজকের নোবেল পুরস্কার। আলফ্রেড নোবেলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পদার্থ, রসায়ন ও অর্থনীতির উপর নোবেল প্রদানের দায়িত্বে আছে রয়েল সুইডিশ একাডেমী অব সায়েন্স, চিকিৎসার দিকটা সামলায় সুইডিশ কারলিনস্কা ইন্সটিটিউট এবং সাহিত্য বিষয়ে পুরস্কারের দায়িত্ব সুইডিশ একাডেমীর। কেবল শান্িতর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসে প্রতিবেশী দেশ নরওয়ে হতে। এখানে জনগণের সম্পদ কোনভাবেই জড়িত নয়। পৃথিবীর স্বচ্ছ ও সৎ জাতির তালিকায় সুইডিশ ও নরওয়েজিয়ানদের নাম সবার উপরে। আলফ্রেড নোবেলের পয়সা কার পকেটে যাবে এবং কেন যাবে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিকও তারা। কথিত সাম্রাজ্যবাদের দালাল নাকি তৃতীয় বিশ্বের ’সুদখোর’দের পুরস্কৃত করা হবে এর জন্য রয়েছে স্বচ্ছ একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া সুইডিশ ও নরওজিয়ান ধ্যান ধারণারই প্রতিফলন ঘটাবে এটাই স্বাভাবিক। বিপ্লবের জন্য কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো অথবা চে গুয়াভারকে পুরস্কৃত করবে সুইডেন এবং নরওয়ে এমনটা যারা ভেবে থাকেন তাদের হয় দেশ দুটোর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর মৌলিক জ্ঞান নেই, অথবা মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে যারা সম্পদের সুসম বণ্টনের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে থাকে তাদের সেবাদাস।

দুই দুইটা ওয়ার ইন প্রগ্রেসের কমান্ডার-ইন-চীফ বারাক হোসেন ওবামাকে কেন শান্িতর জন্য পুরস্কৃত করা হবে এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। যে দেশের যুদ্ধ বিমান শত শত নিরপরাধ শিশুদের ঘুমের মধ্যে হত্যা করে সে দেশের প্রেসিডেন্ট কি করে শান্তির ধারক বাহক হতে পারেন নোবেল কমিটির এমন সিদ্ধান্ত খুবই বিতর্কিত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দিনশেষে সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান মুলুকের কিছু মানুষ। দুনিয়া জুড়ে সাধারণ মানুষের হারানোর কিছু নেই নোবেল কমিটির এ সিদ্ধান্ত। আমরা যারা পাকি ও ভারত বিরোধী এবং চেতনার ফিলটারে সবকিছু ধোঁয়ামোছা করতে অভ্যস্ত তাদের উচিৎ হবে নতুন কোন আলফ্রেড নোবেলের সন্ধান করা। বলার অপেক্ষা রাখেনা দেশের অলিগলিতে এমন ব্যক্তির আজকাল অভাব হবেনা। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আমাদের সরকার (অবৈধ) কিছুদিন আগে কজন বিদেশিকে পুরস্কৃত করছেন। সোনার ক্রেস্ট উপহার দিয়ে জাতিকে দায়মুক্ত করেছেন। কিন্তু হায়, দিনশেষে খবর পাওয়া গেল ক্রেস্টের সোনায় কোন সোনা নেই! এ সোনা মন্ত্রী, আমলা, স্বর্ণকার হতে শুরু করে একদল চাটার দল চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। দেশের সরকার প্রধান (অবৈধ) ঘোষণা দিয়ে দায়ী করলেন ক্রেস্ট ম্যানুফেক্টারার স্বর্ণকারদের। এই স্বর্ণকারের দল নিজের মার জন্য বানানো গহনা হতেও নাকি লুটে নেয় নিজের হিস্যা। এ নিয়ে দেশের আইজুদ্দি ফাজিলুদ্দির দল কতটা সোচ্চার ছিল তা ফিরে দেখার দাবি রাখে।

কথিত সুদখোর ইউনুস মাষ্টারকে শান্তিতে নোবেল দেয়ার জন্য খোদ নোবেলকে যারা আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছিলেন তাদের বোধহয় জানা নেই আগের টার্মে নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এই পুরস্কার আনার কাজে গঠিত হয়েছিল একটি কমিটি। মহিউদ্দিন খান আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটিতে আরও ছিলেন যথাক্রমে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম। এরা সরকারী পয়সার শ্রাদ্ধ করে উড়ে গিয়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। লবি করেছিলেন হরেক দুয়ারে। শেষ পর্যন্ত নোবেল সিলেকশন কমিটি হুশিয়ারি দিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশি লবি-ইষ্টদের অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে। এবং এখান হতেই জন্ম নেয় নোবেল ঘৃণা। আজকে যারা মালাল ইউসুফজাই এবং কৈলাশ বাবুর নোবেল প্রাপ্তিতে আহাজারি করছেন তাদের অনেকের অন্তরেই লুকানো আছে অতি পরিচিত মর্মব্যথা।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন