যাহা ছয় তাহাই নয়! আওয়ামী-বিএনপি উপাখ্যান!

Submitted by WatchDog on Sunday, September 28, 2014

Bangladesh

বিএনপির সোনালী যুগে কটা বছর দেশে বাস করার সুযোগ হয়েছিল। ইউরোপে একটানা ১২ বছর কাটানোর পর মনে হল এবার ঘরে ফেরার পালা। সাত পাঁচ না ভেবে বলতে গেলে এক কাপড়ে ফিরে আসি মাতৃভূমিতে। ২/১ বছর ঢাকায় চেষ্টা করি ভাগ্য গড়ার। শেষ পর্যন্ত ফিরে যেতে হয় নিজ শহরে। কারণ বাবার মৃত্যু। অর্ধশতাব্দির পুরানো পারিবারিক ব্যবসার দায়িত্ব নিয়ে শুরু করি নতুন এক জীবন, যে জীবন ফেলে গিয়েছিলাম সেই ৭০ দশকে। স্বৈরতন্ত্রের জন্মদাতা, পালক ও এর লালন-কারী শেখ মুজিব ধীরের ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছিলেন গোটা দেশ। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ওলামা লীগ আর আওয়ামী লীগ নামক বিষাক্ত স্পাইডার চেটে পুটে লেহন করে জাতিকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। কিছু পা চাটা কুকুর ও তাদের সুবিধাভোগী বুদ্বি ব্যবসায়ীদের তোষামোদির উপর ভর করে নিজকে স্বঘোষিত পিতা বানিয়ে জাতির ঘাড়ে চেপে বসেন অনন্তকালের জন্য। মানুষ মরছিল হাটে মাঠে ঘাটে। দিনের আলোয়, রাতের অন্ধকারে। ক্ষুধার্ত হায়েনার মত ওরা আসতো এবং উঠিয়ে নিত। লাশের সন্ধানে পাগলের মত ঘুরে বেড়াত আত্মীয় স্বজন। ঢাকা কলেজে পড়ি তখন। ব্যাংক হতে স্কলারশিপের প্রথম কিস্তি উঠিয়ে খোলা আকাশে পা রাখতে ওরা আসে। পরিচয় শেখ কামালের সাগরেদ এবং হাতে পিতার সরবরাহকৃত অস্ত্র। ওরা কেবল সামান্য কিছু টাকা ছিনিয়ে নেয়নি সেদিন, ছিনিয়ে নিয়েছিল একজন তরুণের অন্তহীন কিছু স্বপ্ন। পাকিস্তানীদের তাড়া খেয়ে আমরা ন’টা মাস পালিয়ে বেরিয়েছি, শহর হতে গঞ্জে, গঞ্জ হতে গহীন গ্রামে। কিন্তু সেদিন আশা হারাইনি। কারণ বিশ্বাস করতাম তাদের যেতেই হবে। দুঃসময়ের পর ফিরে আসবে সুসময়। এবং ফিরে এসেছিল। কিন্তু শেখ মুজিব নামক নতুন ইয়াহিয়া খানের আবির্ভাব আমাদের বিশ্বাসে চিড় ধরায়। ভয় ধরে যায় এ হায়েনা আজীবন কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে আমাদের বেঁচে থাকা। এমনি এক অনিশ্চিত সময়ে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে মুক্তি দেয় পিতা নামক নেশা হতে। রক্তের নদীতে রাজনৈতিক পরিবর্তন তাই অনেকের মত আমাকেও আবেগপ্রবণ করতে পারেনি। কথিত পিতার মৃত্যুতে উল্লাস না হোক চাপা স্বস্তি বয়ে আনে জাতীর জীবনে। এবং শুরু হয় নতুন পথচলা।

নিষিদ্ধ গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়া হয় জাতির কাছে। তারই মেঠো পথে দেখা মেলে বিএনপি নামক নতুন রাজনৈতিক দলের। ক্ষুধার্ত পিপীলিকার মত ৭১’এর পরাজিত শক্তি, শেখ মুজিবের হাতে নিগৃহীত জন গুষ্টি, সদ্য রণাঙ্গন ফেরা মুক্তিযোদ্ধা সহ বুদ্ধি ব্যবসায়ীদের অনেকে ভিড় জমায় ক্ষমতার মধু সরোবরে। ঠিক এমন সময়টাতেই মস্কো, লন্ডন, বার্লিন আর ঢাকার জীবন ফেলে আশ্রয় নেই ছোট্ট শহরটাতে। পৈত্রিক সম্পত্তির উপর গড়ে উঠা শিল্পকারখানা কম করে হলেও তিন শ মানুষের আহার যোগাচ্ছে। পারিবারিক ভাবে আমরাও পরিশ্রম করছি দিনরাত। বসন্তর কোন এক সুন্দর সকালে কারখানার সিকিউরিটি দৌড়ে আসে বাসায়। হাঁপাতে থাকে। ভয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকে। কারখানার মাঠে নাকি একদল সশস্ত্র যুবক জড়ো হয়েছে এবং স্থানীয় ছাত্রদল সভাপতির নেতৃত্বে টয়লেট সেপটি ট্যাংক নির্মাণ করছে। ছাত্রদলের সভাপতির আমাদের প্রতিবেশী। নতুন বাড়ি বানাচ্ছে। সেপটি ট্যাংক বানানোর মত যথেষ্ট জায়গা নেই নিজ আঙ্গিনায়। তাই জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছে আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান। বাধা দিলে কাজ হবেনা আগেই জানতাম। কারণ ততদিনে শহর নগর বন্দর তাদের কাছে পদানত হয়ে গেছে। হও বললেই সবকিছু হয়ে যায়। কেবল চেয়ে চেয়ে দেখলাম কি করে নতুন এক জাতির উত্তরণ ঘটছে। ইয়াহিয়া খানের প্রেতাত্মা শেখ মুজিব হয়ে এ যাত্রায় ভর করেছে নতুন এক আত্মায়। কটা বছর বোবার মত নির্যাতন আর নিপীড়নকে মেনে নিলাম। ধরে নিলাম এটাই স্বাধীনতা, এর জন্যই এ দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছিল। ছাত্রদল সভাপতির দৌড় বেশিদূর এগোয়নি। তত্ত্বাবধায়ক আমলে যৌথবাহিনী তাকে মুরগীর মত উলটো করে ঝুলিয়ে রাখে শহরের মুল চত্বরে। শত শত মানুষ জীবন্ত সভাপতির মুখে থু থু দিতে লাইন দেয়। সুযোগ বুঝে আমরাও উপড়ে ফেলি অবৈধ ট্যাংক। দিগন্ত রেখায় হাজির হয় নতুন দানব, আওয়ামী দানব।

জলে স্থলে অন্তরীক্ষ হতে ওরা আসতে থাকে। সবার প্রয়োজন মেটাতে হবে আমাদের। কারণ তাদের গায়ে মুক্তিযুদ্ধের গন্ধ। কপালে জাতির পিতার আশীর্বাদ। এর পরের কটা বছর যা ঘটবে তা বর্ণনা করতে গেলে হাজার রজনীর আরব্য উপন্যাস লিখতে হবে। বিএনপি যদি হায়েনা হয়ে থাকে আওয়ামী লীগ ছিল দৈত্য, দানব, এক কথায় মানব জাতির কলঙ্ক।

আজ দেখলাম কেউ একজনকে শেখ হাসিনা নামক অসুস্থ রুগীকে নিয়ে গান লেখার কারণে সাত বছরের জেল দেয়া হয়েছে। অপরাধ ও শাস্তি পর্ব সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে বেড়ে উঠে। একটা সমাজ কতটা সভ্য তার মাপকাঠি হতে পারে এই পর্ব। গান লেখার জন্য সাত বছর জেল দেয়া গেলে আমার মত একজন সাধারণ নাগরিককে যারা বছরের পর বছর ধরে অত্যাচারের ষ্টীম-রোলারে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়েছে তাদের কি কিছুই হবেনা? আমরা কি এ দেশের নাগরিক নই? আমাদের কি নাগরিক অধিকার বলে কিছুই নেই? দুই পরিবারের দাসত্ব করার জন্যই কি আমাদের জন্ম, আমাদের স্বাধীনতা?

ভালো লাগলে শেয়ার করুন