পায়ুপথে বায়ু নিষ্কাসন ও একজন চামুন আলী, চান হাজী ও ছ্যার ছ্যার আলীর গল্প...

Submitted by WatchDog on Monday, September 14, 2015

গল্পটা হয়ত কারও কাছে শোনা। এমনও হতে পারে আমার নিজেরই বানানো। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস কাহিনীর রূপকার পিরোজপুরের নুরু মামা। মামার স্বভাবটাই ছিল এরকম। যে কোন সাধারণ ঘটনাকে অসাধারণ বানিয়ে হাসির ঢেউ বইয়ে দিতে পারতেন। গল্পটা ছিল এ রকম...উপজেলা লেভেলের বিশিষ্ট এক রাজনীতিবিদ ঘটা করে সভা ডেকেছেন। জনগণের ভাল-মন্দ নিয়ে তিনি বয়ান করবেন, তাই মাইকিং আর পোষ্টারিংয়ে ছেয়ে গেল গোটা এলাকা। নির্দিষ্ট দিনে গরুর হাটের মাঠটাও কানায় কানায় ভরে উঠল। তা দেখে নেতার চেলাচামুণ্ডারাও স্বস্তির ঢেকুর তুলল। বাদ জুমা নেতা মঞ্চে উঠলেন। মঞ্চের ব্যপারে নেতার নিজস্ব কিছু পছন্দ অপছন্দ ছিল। যেমন মঞ্চে নিজের পাশে দ্বিতীয় কাউকে জায়গা দিতেন না। একাই বয়ান করতেন। জনগণের ভাল-মন্দ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগের নদীতে সাতার কাটতেন। কথায় কথায় গালাগালিও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তো এ যাত্রায়ও সবকিছুর ব্যবস্থা ছিল। বয়ান চলছে এবং শ্রোতারাও মন দিয়ে শুনছে নেতার ভাষণ। হঠাৎ করেই দেখা দিলে সমস্যাটা। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হবে। পেটের গ্যাস পায়ুপথ দিয়ে বের করতে হবে। ব্যাপক শব্দ সন্ত্রাসের সম্ভাবনার কথা ভেবে একটু হচকচিয়ে গেলেন তিনি। মঞ্চে দ্বিতীয় কেউ নেই যার উপর চাপানো যাবে তীব্র গন্ধের দায়। বুদ্ধিটা হঠাৎ করেই মাথায় এলো। সামনের আসনে বসা চামুন আলী দফাদারের দিকে চোখ গেল। চোখের ইশারাটা চেলার মগজে ঢুকল না। তাই অন্যপথ ধরতে হল। নিয়মিত ভাষণ বন্ধ করে চামুন আলীকে প্রশংসায় ভাসিয়ে মঞ্চে এসে আসন গ্রহণ করার জন্য আহবান জানালেন। তা শুনে চামুন আলী মাটি ছেড়ে আসমানে উড়ে গেল। গর্বে বুকের ছাতি তিন হাত লম্বা হয়ে গেল। নিজের চেয়ারটা হাতে করে মঞ্চে উঠে এলো চমন আলী এবং বত্রিশ দাঁত বের করে বসে পড়লো নেতার পাশে। নেতাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। এতক্ষণ ধরে আটকে রাখা শব্দ বোমাটা প্রচণ্ড শব্দে আঘাত করলো জনসভায়। মাইকের বদৌলতে তা সভার চর্তুকোনায় পৌঁছে গেল। জনতা হতভম্ব হয়ে গেল। নেতা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে নেকড়ের দৃষ্টিতে তাকালেন চামুনের দিকে এবং প্রচণ্ড একটা লাথি মেরে চেয়ার সহ মঞ্চের নীচে ফেলে দিলেন। নিজে রুমাল দিয়ে নাক চেপে অশ্রাব্য গালিতে চামুনের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করলেন। সাময়িক বিপর্যয় কাটিয়ে সভার কাজ নতুন করে শুরু করলেন। কিন্তু পেটের শব্দ বোমাকে কিছুতেই বাগে আনতে পারলেন না। আবার শ্রোতাদের দিকে চোখ ফেরালেন। এবার উত্তর পাড়ার চান মিয়া হাজীকে মঞ্চে ডাকলেন। চান মিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে চেয়ার নিয়ে বসে পড়লো নেতার পাশে। শব্দ বোমা যথারীতি দ্বিতীয় আঘাত হানলো। তীব্র গন্ধে জনসভায় হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। এবার চান মিয়ার পালা। তাকেও মঞ্চ হতে ফেলে দেয়া হল বুক বরাবর লাথির মেরে। শ্রোতাদের বুঝতে বাকি রইলোনা নেতার চালাকি। কিন্তু এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করলোনা। শব্দ বোমা যথারীতি পেটে তালগোল পাকাতে থাকলো এবং বিপুল বিক্রমে বেরিয়ে আসার দামামা বাজাতে শুরু করলো। সামনের সাড়িতে ছ্যার ছ্যার আলীকে দেখে আশার আলো দেখতে পেলো নেতা। যথারীতি তাকেও মঞ্চে আসার হুকুম দেয়া হল। বেকে বসলো ছ্যার ছ্যার। এবার চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল চামুন আলী। চান হাজীও যোগ দিল চামুনের সাথে। বেফাঁস মুখের জন্য এলাকায় ছ্যার ছ্যারের নাম আছে। দেরী করলোনা সে। মুখ বোমা ফটিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো নেতার উপর। ক্ষিপ্ত জনতা ধাওয়া করলো নেতাকে। একসাথে এত লোকের ভার সইতে না পেরে হুরমুর করে ভেঙ্গে গেল মঞ্চ। যে যেভাবে পারলো সেভাবেই ধোলাই দিল নেতাকে। ছ্যার ছ্যার আলী নেতার পরনের আন্ডারওয়ারটা হাতরে নিয়ে ঝটপট সরে পড়লো।

প্রাসঙ্গিক একটা কারণে কাহিনীটা মনে পড়লো। দেশ হতে বিরোধী দল চিরতরে বিনাশ করার জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হাতে নিচ্ছে বর্তমান সরকার। এ পথের নতুন দাওয়াই হচ্ছে বিরোধী দলের অপারেশন ক্লিন-হার্টের দায়মুক্তি অবৈধ ঘোষণা। দলকানা দলদাসরা বলবেন এ সিদ্ধান্ত তো উচ্চ আদালতের, তাতে সরকার নিয়ে ত্যানা পেঁচানোর অবকাশ কোথায়! আমি বলি দেশের উচ্চ আদালত ছাত্রলীগেরই নতুন সংস্করণ। ওরা পেটায় লাঠিসোটা নিয়ে আর এরা পেটায় কলম হাতে। ওরা মায়ের পেটের খালাত ভাই। অপারেশন ক্লিন-হার্টের নামে খালেদা সরকার অবৈধ হত্যায় হাত রক্তাক্ত করেছিল। জাতিকে ধাপ্পা দিতে খুনকে হার্ট এট্যাকের তত্ত্বে কবর দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কাজ হয়নি। যা বুঝার তা সবাই বুঝে নিয়েছিল। তো বর্তমান সরকার সে দিনের হার্ট এট্যাকের অটোপসী করিয়ে বিরোধীদের শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিতে পারবে সন্দেহ নেই। কারণ এসব অবৈধ হত্যার দায় কোন সরকারই এড়াতে পারবেনা। কথা হচ্ছে যে সরকার পিপিড়ার মত মানুষ মারছে, গুম করছে তারা করবে দায়মুক্তির বিচার! হয়ত পারবে। এবং পারবে বিরোধী সবাইকে জেল-হাজত খাটিয়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে। প্রশ্ন উঠবে খেলার মাঠে বিরোধী দল না থাকলে নিজেদের পায়ুপথ দিয়ে যেসব বহ্য বের হবে তার দায় দায়িত্ব কার উপর ঠেলবে? ইনু, হানিফ আর হাসান মাহমুদদের শব্দ বোমারই বা কি হবে? জনসভা করতে গেলে যেমন চামুন, চান আর ছ্যার ছ্যার আলীদের দরকার হয় তেমনি রাজনীতির নামে চুরি-চামারি, লুটপাট, খুন আর ধর্ষণ করতে গেলে বিরোধী দলেরও দরকার আছে।

http://www.ittefaq.com.bd/court/2015/09/13/35937.html

ভালো লাগলে শেয়ার করুন