মার্কিন ইতিহাস ও একজন বারাক হোসেন ওবামা

Submitted by WatchDog on Monday, August 8, 2016

Barak Obama

জন কেরি যে বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাড়িয়ে পরাজিত হয়েছিলেন সে বছর ডেমোক্রেটদের কনভেনশনে কী-নোট নিয়ে যে বক্তা অডিটোরিয়ামে উপস্থিত শত শত ডেলিগেট এবং বাইরের কোটি কোটি আমেরিকানদের মুগ্ব করেছিলেন আমিও ছিলাম তাদের একজন। নিউ ইয়র্কের বেইসমেন্টের রুমটায় বসে বন্ধু মোরশেদের সাথে বক্তাকে নিয়ে অনেকক্ষণ তর্ক করেছিলাম। ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের এই সিনেটরকে আগপাছ চিন্তা না করে ভবিষ্যৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলাম। বাস্তবতার চাইতে আবেগই হয়ত সেদিন বেশি কাজ করেছিল। জোরালো বক্তব্য সহ এমন অর্থপূর্ণ ভাষণ আগে কোথাও শুনেছি বলে মনে করতে পারিনি। মোর্শেদের ভাষ্য ছিল এমন প্রেসিডেন্টের জন্য মার্কিনীরা এখনো প্রস্তুত নয়। আমার ভবিষৎবাণী বাস্তবে রূপ নিতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০০৮ সালের দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে সিনেটরকে দেখে খুব বেশি অবাক হইনি। আমি জানতাম তাকে থামানো যাবেনা। হোক তার গায়ের রং অথবা মিশ্র ধর্মীয় ব্যকগ্রাউণ্ড। সবেমাত্র নাগরিকত্ব নিয়েছি। পৃথিবীর অন্যতম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য মুখিয়ে আছি। যেহেতু কোন দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না তাই দলীয় প্রাইমারীতে ভোট দেয়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু মনে প্রাণে কামনা করছিলাম হিলারির বিরুদ্ধে এই সিনেটরের বিজয়। গোটা-বিশ্বকে চমক দিয়ে হাফ কালো, হাফ মুসলমান ও একজন হাফ কেনিয়ান প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ক্লিনটন মেশিনারীসকে পরাজিতে করে ছিনিয়ে নেন দলীয় মনোনয়ন। বাকিটা ইতিহাস। হা, এই সিনেটর আর কেউ নন, বিশ্বের সবচাইতে শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা। এ দেশের দাসপ্রথা বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। গায়ের রং এখনো এ দেশে ভয়ানক শক্তিশালী ফ্যাক্টর। তেমনি একটা দেশে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ফেরত অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর স্বনামধন্য জন ম্যাককেইনকে বলতে গেলে ধরাশায়ী করে বিজয় ছিনিয়ে নেন ওবামা। বদলে গেল আমেরিকার ইতিহাস। আফ্রিকা হতে ধরে আনা কালো কালো কুন্তা কিনতেদের কেউ একজন হোয়াইট হাউজে বাস করবে এ হিসাব বড় বড় প¨িতদের গবেষণায়ও ঠাঁই পায়নি। সর্বকালের সব হিসাব ভঙ্গ করে কালো চামড়ার একজন সপরিবারে প্রবেশ করেন হোয়াইট হাউজে। এ বোধহয় আমেরিকাতেই সম্ভব ছিল। পৃথিবীর দ্বিতীয় কোন উন্নত দেশে নয়। ২০০৮ সালের চরম অর্থনৈতিক দুর্যোগ কাঁধে নিয়ে শুরু করেছিলেন যাত্রা। দেশের শতকরা প্রায় ৯ জন ছিলে বেকার। স্টক মার্কেটে নেমেছিল অশ্রুত ধ্বস। ব্যাংক অব আমেরিকা, চেস ম্যানহাটন ব্যাংক গুলোর মত দৈত্য ব্যাংকগুলো চলে গিয়েছিল দেউলিয়া পর্বের শেষ ধাপে। ওখান হতে টানা শুরু করেন। আজ ২০১৬ সালে আমেরিকার বেকার সংখ্যা শতকরা ৪’এর কিছু উপরে। স্টক মার্কেট সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙ্গে সামনে এগুচ্ছে। সরকারী ঋণ কল্পনাতীত গতিতে কমছে। আমেরিকা বেরিয়ে এসেছে দুটো অগ্রহণযোগ্য যুদ্ধ হতে।

আর কটা মাস পরেই ইতিহাস হয়ে যাবেন বারাক হোসেন ওবামা। পিছু রেখে যাবেন নিজের লেগাসি। একজন ইমিগ্রান্ট হিসাবে আমেরিকার ইতিহাসের অংশ হতে পেরে নিজকে সবসময়ই ধন্য মনে করবো। ২০১২ সালের নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্টের দফতর হতে শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম একজন সক্রিয় ডেমোক্রেট হিসাবে। যাওয়া হয়নি ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামা ভুলে যাননি ১২’র নির্বাচনে তার সহযোদ্ধাদের।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন