এই দুনিয়া মায়ার জালে বান্ধা...বান্ধা রে

Submitted by WatchDog on Friday, August 6, 2010

adultery in bangladesh

গানটা আমার খুবই প্রিয়। সূযোগ পেলেই শুনি আর সাথে সূর মেলানোর চেষ্টা করি। মগজে আউলা চক্কর লাগলে গানের কথাগুলো খুব কাছের মনে হয়। যে প্রশ্নের উত্তর নেই চাইলে তারও উত্তর পাওয়া যায় গানটায়। মাঝে মধ্যে খুব ভোরে কাজে যাই। বাসা হতে অফিস দশ মিনিটের রাস্তা। হেঁটেই যাই সাধারণত। সূর্যটা উঠি উঠি করে তখন। জনশূন্য শহর সাথে সান্ডিয়া পাহাড়ের মৃদু-মন্দ বাতাস মনটা ভীষন হাল্কা করে দেয়। গলা খুলে গান গাওয়ার পারফেক্ট সময়। বিশেষ করে বাউল গান। এত সকালে আমাকে বোধহয় আশা করেনি ওরা। খুব একটা চমকে উঠেছিল তাও বলা যাবে না। ওরা লেসবিয়ান। অফিসে বসে সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন জাহিরের অবকাশ নেই, তাই কিছুটা হলেও বিব্রত দেখাল। আমিও ইগনোর করার ভাব দেখালাম। টেবিলে বসতেই ঝিম মেরে উঠল মগজের চেম্বারগুলো। একি দেখলাম সকাল বেলা! দুই মানবীর এ ধরনের ভালবাসার কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না। ‘এই দুনিয়া মায়ার জালে বান্ধা’- এই একটা লাইনে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলাম মগজে কিলবিল করা হাজারও প্রশ্ন।

ভালবাসার কোন দেয়াল নেই, পশ্চিমা দুনিয়ায় বাস করতে গেলে এটাকে চিরন্তন সত্য হিসাবে মেনে নিতে হয়। হরেক রকম ভালবাসা এখানটায়। পলিগমি, মনাগমি, হেটরাসেক্সুয়াল, বাইসেক্সোয়াল, হমোসেক্সুয়াল ছাড়াও এমন সব ভালবাসার অস্তিত্ব পাওয়া যায় যা আমাদের সমাজে একেবারেই অকল্পনীয়। কিন্তু ট্যুইষ্টেড ভালবাসার লীলাভুমিতে এমন ঘটনা খুবই বিরল যেখানে প্রেমের কারণে মা তার আপন সন্তানকে হত্যা করতে বাধ্য হয়। এমন পশুসুলভ ভালবাসার নজির পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ হয়। আমরা কিছুটা হলেও এগিয়ে আছি এ দিক হতে। শেক্সপিয়ার বেচে থাকলে নিশ্চয় আগ্রহী হতেন এ নিয়ে অমর কোন সাহিত্য কর্ম সৃষ্টিতে।

প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে জনৈক ব্লগার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন আইন করে পরকীয়া বন্ধের জন্যে। বড় অসম্ভব দাবি সন্দেহ নেই। হিউম্যান রিলেশন জটিল এক বিজ্ঞান, যা সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হিসাবেই থেকে যাবে অনন্তকাল ধরে। ৫ বিলিয়ন আদমের ৫ বিলিয়ন ভিন্ন চাহিদা, আইন করতে গেলে হয়ত একই সংখ্যক আইন করতে হবে। সোজা বাংলায় তা অসম্ভব। আইনকে শয়নকক্ষে নিয়ে যাওয়ার ভেতর নৈতিকতার প্রশ্নও জড়িত। তাই এ ধরণের আইন পাশ করা হলেও এর যথাযত প্রয়োগ নিয়েও থেকে যাবে সন্দেহ আর সংশয়।

ত্রিমুখী প্রেমের বলি হয় প্রতিবছর পৃথিবীর কথা বাদ দিলেও আমাদের দেশে ভেংগে যাচ্ছে শত শত সংসার, ঘাত সংঘাতে প্রাণ হারাচ্ছে ততধিক মানুষ। কিন্তু নিজের শরীর ও মনের চাহিদা পুরণ করতে গিয়ে মা তার সন্তানকে হত্যা করে ফ্রিজের ভেতর লুকিয়ে রাখে, তা অলীক কল্পকাহিনী বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এমনটাই ঘটছে আমাদের দেশে। ভেবেছিলাম ওটা হয়ত বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা দ্বিতীয়বার ঘটার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমাদের সমাজে সংক্রামক ব্যাধির মত অপরাধও বিস্তার লাভ করে আলোর গতিতে। একই ধরনের দ্বিতীয় ঘটনাটা ঘটে গেল স্বল্প সময়ের ব্যবধানে। ব্যাপারটা নিয়ে হাজার হাজার পরিবারের দুঃশ্চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে হয়। - জানালার গ্রীলে ফাঁক ৬ ইঞ্চি। এ ফাক গলে সাড়ে ৩ বছর বয়সী শিশু তানহা ইসলাম জেনিফার লাশ নিচে ফেলে সম্ভব ছিলো না। তাই খুন করার পর জেনিফার মাথার দু’পাশে কেটে ও পাঁজরের হাড় ভেংগে ফেলা দেয়া হয় উপর হতে। এবং কাজটা সমাধা করে ৩ বছর বয়সী জেনিফার মা হালিমা খাতুন। পাঠক, এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া হয়ত জানা হবেনা, কিন্তু আমার ইচ্ছে করছে কোথাও কষে একটা লাথি মারি। আমার কেন জানি মনে হয় আমাদের গোটা সমাজকে এ মুহূর্তে লাইগেশন ও ভেসে্‌ক্‌টমির আওতায় আনা উচিৎ। শিশুর জন্ম দিয়ে আমরা তার ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারছি না দেউলিয়া রাজনীতির কারণে। তার উপর প্রেমের খড়গ দিয়ে জবাই করে পুরে রাখছি ফ্রিজে, মাথা ট্রিম করে ঠেলে ফেলছি জানালার বাইরে। আসলেই কি সন্তান জন্ম দেয়ার যোগ্যতা রাখি আমরা?

মাছে ভাতে বাঙ্গালীর সংজ্ঞা এখন অতীত। সমাজের সাথে আমাদের মন মানসিকতাও এসেছে আমুল পরিবর্তন। নষ্ট সমাজে প্রায় ১০০টা টিভি চ্যানেল মারফত আমাদের শয়নকক্ষে পৌছে দেয়া হচ্ছে পরকীয়ার অমৃত স্বাদ। গন্দমের এ স্বাদ হতে বিবি হাওয়ার দলকে স্বয়ং ঈশ্বরও ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি, আর আমাদের চরিত্রহীন রাজনীতি ঠেকিয়ে রাখবে বলাই বাহুল্য।

ক্যান্সার প্রকৃতির এ সমস্যার তাৎক্ষণিক কোন সমাধান দেখছি না। এবং এ নিয়ে ভাবতে গেলেও মগজের চেম্বারগুলো কিলবিল করে উঠে। হয়ত পারফেক্ট সময় বাউল কবি আবদুল করিমের গানটা গাওয়ার ... এই দুনিয়া মায়ার জালে বান্ধা, বান্ধা রে!

ভালো লাগলে শেয়ার করুন