চেতনার দিনরাত্রি...

Submitted by WatchDog on Monday, July 27, 2015

Bd Army

’সেনা-সদর নির্বাচনী পর্ষদ-২০১৫’ নামের কোন পর্ষদের অস্তিত্ব আছে তা আমার মত ’ব্লাডি সিভিলিয়ান’দের জানার কথা না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিনতাইকারী ও দেশের স্ব-ঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতে তা জান গেল। অবশ্য ছাউনির ভেতরের তাবৎ খবরা খবর সবই আমাদের জানতে হবে এমন কোন কথা নেই। অনেকটা নিষিদ্ধ জগতের মত এ জগত। এখানে ঘটে যাওয়া ভাল-মন্দের খবর নিয়ে রাজনীতি করারও উপায় নেই। কারণ তাতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। সেনা সদরদপ্তরে এমনি এক পর্ষদের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন জনাবা শেখ হাসিনা। লম্বা ভাষণ দিলেন। যথারীতি পিতা ও দলের স্তুতি বন্দনা করতে ভুলেননি। চেতনার দ্রুত বংশবিস্তার এবং তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানালেন জেনারেলদের। পাশাপাশি দাবি করলেন একমাত্র তেনার অবৈধ দখলদারিত্বের আমলেই সেনাসদস্যদের ভাগ্যন্নোয়নের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যা অন্য কোন সরকার পারেনি। সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বীকৃতি! বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে বিবেচনা করলে কথাটা কেমন যেন স্ববিরোধী মনে হবে। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন ও তার অস্তিত্বের বিবেচনায়। যে কোন দেশের সেনাবাহিনীর প্রথম কাজ হচ্ছে নিজ নিজ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। চেতনা জাতীয় বায়বীয় পদার্থের অস্তিত্ব সেখানে অবৈধ, অবান্তর ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। প্রাসঙ্গিক ভাবে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের একটা দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে ‘you are either with us or against us’...মাতৃভূমির প্রতি বিশ্বস্ত নয় এমন কাউকে সেনাবাহিনীতে নেয়া হলে ধরে নিতে হবে তা শত্রু শিবিরের চক্রান্তের ফসল। চেতনার বংশ বিস্তারের জায়গা সেনা দপ্তর হতে পারেনা। সাধারণ বিবেচনা ও অভিজ্ঞতার আলোকে চেতনা বলতে আমরা বুঝে থাকি সমাজকে বিভক্ত করার মোক্ষম অস্ত্র। এ অস্ত্র দিয়ে গোটা দেশ ও জাতিকে ইতিমধ্যে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছে। ’ভাগ কর এবং খাও’ - উপনিবেশবাদদের এ মৌলিক তত্ত্ব বাস্তবায়নের মাধ্যমে শেখ হাসিনা কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই পদদলিত করছেননা, পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে রূপান্তরিত করছেন পারিবারিক ভোগদখলের সম্পত্তিতে। বলতে অসুবিধা নেই, পারিবারিক সম্পত্তির আজীবন বন্দোবস্ত নেয়ার পথে দেশের সেনাবাহিনী বড় একটি বাধা। তা আমারা যেমন জানি খোদ শেখ হাসিনাও ভাল করে জানেন। রাস্তা পরিষ্কারের কূটকৌশল হিসাবে চেতনার ফেরিওয়ালা এখন সেনা-ছাউনিতে বাজার খুঁজছেন। প্রাসঙ্গিক ভাবে জানতে ইচ্ছা করবে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কোথায় ছিল সে চেতনা? বিডিআরের নিরাপদ চৌহুদ্দিতে সেদিন যাদের কচুকাটা করা হয়েছিল তারা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বস্ত ছিলনা? টিক্কা খানের মাসিক ভাতা খেয়ে যে পরিবার মুক্তিযুদ্ধকে পারিবারিক সম্পত্তি বলে দাবি করছে তাদের বোধহয় জানা নেই কেবল চেতনার তাবিজ দিয়ে দেশ শত্রু মুক্ত করা হয়নি, তার জন্য প্রয়োজন হয়েছিল ষণ্মুখ যুদ্ধের, প্রয়োজন হয়েছিল রক্তের। নিহত সেনা অফিসাররা হচ্ছে সে জন, যারা অস্ত্র হাতে মাঠে নেমেছিল। খোদ পাকিস্তানীরাও সক্ষম হয়নি দেশের অর্ধশত সেনা অফিসার হত্যা করতে, অথচ আজকের ফেরিওয়ালা সেদিন ক্ষমতার সব্বোর্চ আসনে বসে উপভোগ করেছিলেন ৫৭ জন সেনা অফিসারের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড¨। খুনিদের ডেকে এনে আপ্যায়িত করেছিলেন রাজসিক ভোজনে।

দেশের বিচার ব্যবস্থায় চেতনার তৈজসপত্র ক্রয়-বিক্রয় এখন প্রায় সম্পূর্ণ। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের চেয়ার হতে উঠিয়ে এনে বিশ্বস্ত সৈনিকদের একে একে বসানো হয়েছে বিচারকের আসনে। চেতনার আলোকেই ওরা বিচার করছে, রায় দিচ্ছে। তবে সে চেতনা মুক্তিযুদ্ধের নয়, সে চেতনা হাতবদলের চেতনা, লুটপাটের চেতনা, দাসবৃত্তির চেতনা। গোটা সমাজই আজ চেতনার ক্যান্সারের আক্রান্ত। এ চেতনার প্রতিদানই আজ ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার খুন, ঘরে ঘরে ধর্ষণ, রাস্তায় দু-সপ্তাহে ২৫০ জন নিহত। সেনা-সদরে চেতনা বিক্রির পেছনে গোপন কি রহস্য ছিল তা সময়ই প্রমাণ করবে, তবে এ ফাঁকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে শেখ হাসিনা নামের এই বিষাক্ত সাপের বিষদাঁত হতে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন