ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী

Submitted by WatchDog on Sunday, July 27, 2014

Bangladesh Biman

শরীর নয় যেন ধারালো ছুরি! অন্তত ভদ্রমহিলা নিজকে তাই মনে করছেন তাতে সন্দেহ রইলনা। এসব জানতে মনোবিজ্ঞানী অথবা মাইন্ড রিডার হওয়ার দরকার হয়না। শরীরী ভাষাই সব বলে দেয়। দম্ভে, অহমিকায় পা নীচে নামছেনা। ভাল করে লক্ষ্য করলে মনে হবে তিনি উড়ছেন। দু’ঘণ্টা হয়ে গেল দেখছি। অথচ একবারের জন্যও হাসতে দেখলাম না। এমন একটা চাকরির মুল শর্ত হাসি। হাজার যন্ত্রণার মাঝেও হাসতে হয়। এমনকি নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও হাসি দিয়ে তা লুকাতে হয়। বলছিলাম বাংলাদেশ বিমানের মরহুম নিউ ইয়র্ক-ঢাকা রুটের কোন এক ফ্লাইটের কথা। ভদ্রমহিলার চাকরিটা এয়ারহোস্টেসের। আন্তর্জাতিক রুটে এ ধরনের চাকরির অন্যতম অলিখিত শর্ত শরীর এবং চেহারা। লম্বা আকাশ জার্নির ক্লান্তি ভুলিয়ে যাত্রীদের মন সতেজ রাখার অন্যতম কৌশল এই সুন্দরী তত্ত্ব। পৃথিবীর অনেক এয়ারলাইন্স এ শর্ত মেনেই তাদের চাকরি দেয়। বিমানের এই মহিলা তা কতটা পূরণ করতে পেরেছেন তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। বিশেষ করে আমার মত যাদের লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে চড়ার অভিজ্ঞতা আছে। মুখের ভাষার সাথে চেহারার কিছু যৌগিক সম্পর্ক থাকে যা অনেক সময় শরীরের আবেদন অথবা লাবণ্যকে ম্লান করে দেয়। মহিলাকে নিবিড় ভাবে লক্ষ্য করলে মনে হবে যাদের সেবার জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সবাই অবাঞ্ছিত, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং উড়ে এসে জুড়ে বসা একদল বিকৃত আদম। এদের সেবা যত্নের দায়িত্ব নিয়ে তিনি যেন জাতিকে বিরাট উপকার করছেন। যাত্রীদের কেউ ম্যাডাম, কেউ আপা, বয়স্কদের কেউ আবার মা ডেকে নিজেদের চাহিদার কথা জানান দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে চেহারায় সামান্যতম হেরফের হচ্ছেনা। সৌজন্য বোধ বলে আমাদের অভিধানে কোন শব্দ আছে এ মুহূর্তে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করল না। কিন্তু বিশ্বাস করতে হল। এবং তা বিশেষ একটা জায়গায়। ইকোনমি ক্লাসের প্রথম দুটি লাইন সরব ছিল কিছু সাদা যাত্রীর কোলাহল মুখর উপস্থিতিতে। মুখ ’এফ’ শব্দের পুতময় গন্ধে ভরা এসব যাত্রীদের সবকিছুতে ছিল তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের ভাব। কিন্তু কোন এক অলৌকিক কারণে এই দুই লাইনের যাত্রীদের বেলায় মহিলার চেহারায় দেখা গেল ১৮০ ডিগ্রী পরিবর্তন। কথা বলত গিয়ে যেন লুটিয়ে পরতে চাইছেন তাদের গায়ের উপর। বিনয়, ভদ্রতা এবং প্রফেশনালিজমের সবকটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ডানা মেলে এক সাথে আবির্ভূত হল যেন। এ রকম একটা স্বর্গীয় মুহূর্তে পেছন হতে কেউ একজন উচ্চস্বরে ডাক দিল। সে ডাকে ভদ্রতার লেশমাত্র ছিলনা। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন মহীয়সী। যাত্রীর দিকে এমন চোখে তাকালেন যেন চোখের সামনে একজন ধর্ষক দেখছেন। বাকি যাত্রীদের দিকেও তাকালেন এমন একটা ভাব নিয়ে যেন বিশ্ব-সুন্দরী এই মহিলার ইজ্জতের চেম্বারে সবাই হাত দিতে চাইছে।

সে যাত্রায় তার ইজ্জতের চেম্বারে হাত দিতে কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে দিয়েছিল। তাও সরকারের কোন এক গোপন বাহিনী। চেম্বার হতে নাকি চকচকে সোনার গয়না প্রসবিত হয়েছিল। অনেক আগে টিভিতে বিমানের জনপ্রিয় একটা কমার্শিয়াল চালু ছিল। যার মুল বক্তব্য ছিল, ‘ছোটা হয়ে আসছে পৃথিবী।‘ অর্থাৎ বিমানের নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসছে গোটা দুনিয়া। সন্দেহ নেই আজকের বাস্তবতা ঠিক উলটো। আজকের বিমান মানেই চোর ও চুরি। পাইলট হতে শুরু করে বিশ্ব-সুন্দরী হোষ্টসদের একটাই মিশন, ইজ্জতের চেম্বারকে ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের পেট ও পকেট ভর্তি করা। শুনে ভাল লাগছে এসব স্বঘোষিত সুন্দরীদের পৃথিবীও নাকি ছোট হয়ে আসছে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন