আবুল হোসেনের নীরব প্রস্থান ও চেতনার পদ্মা সেতু

Submitted by WatchDog on Wednesday, July 25, 2012

Padma Bridge

খুব নীরবে প্রস্থান করছেন প্রাক্তন যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব আবুল হোসেন। সরে পরার ক্ষণটা বেছে নিয়েছেন এমন একটা মুহূর্তে যখন গোটা জাতি শোকে মূহ্যমান। কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদের প্রস্থান জাতির স্বাভাবিক জীবনকে কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও থমকে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে তার রাজনৈতিক ও সামাজিক চরিত্র ও মূল্যবোধ। এই মৃত্যু বিভাজনের দেশে ক্ষণিকের জন্যে হলেও বয়ে এনেছে ঐক্যের বাতাস। ধর্ম, রাজনীতি ও সামাজিক অবস্থানের উর্ধ্বে উঠে আমরা সবাই শোক করছি, মূল্যায়ন করছি দৈনন্দিন জীবনে এই বরপুত্রের অসামান্য অবদান। জাতির যখন অমাবস্যা আবুল হোসেন টর্চ হাতে নিজের পথ আলোকিত করলেন এবং ভাসালেন বিদায় তরী। এর আগে বেশকিছু টাকা খরচ করে বিশাল একটা বিজ্ঞপ্তি ছাপালেন পত্রিকায় এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাফাই গাইলেন। পাশাপাশি জাতিকে মনে করিয়ে দিলেন রাজনীতিবিদ হিসাবে নিজের সাফল্যের কথা। রাজনীতির শেষ চূড়া মন্ত্রিত্ব, যা জয় করার জন্যে দেশে দেশে রাজনীতিবিদরা শ্রম, মেধা ও যোগ্যতা বিনিয়োগের পাশাপাশি স্বপ্ন দেখে থাকেন। এ বিচারে মাদারীপুরের আবুল হোসেন মন্ত্রী হওয়া কোন অপরাধের বিষয় ছিলনা। বরং সহায় সম্বলহীন পরিবারে জন্ম নিয়েও ক্ষমতার সিড়ি ডিঙ্গানো যায় তার প্রমাণ রেখেছেন জনাব হোসেন। চাইলে এ নিয়ে গর্ব করতে পারি আমরা। একই মন্ত্রিত্বে যখন অপ্রত্যাশিত যবনিকা নামে কষ্ট পাওয়াটা স্বাভাবিক। আবুল হোসেন যতই শৌর্যবীর্যের গান শোনান না কেন, ভেতরে পর্বত সমান কষ্ট নিয়েই যে বিদায় নিচ্ছেন এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কষ্টের কিছুটা হলেও আভাস পাওয়া যায় দপ্তরবিহীন মন্ত্রিত্বের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অলৌকিক ক্ষমতার ইঙ্গিতে। এরশাদ আমলে একজন প্রতিমন্ত্রীকে চিনতাম যিনি পল্লী বিদ্যুতে ঠিকাদারি করতেন। বৃহত্তর ময়মনসিংয়ের এই মন্ত্রী যেদিন ক্ষমতা হারালেন নিজের কষ্টকে এভাবেই বর্ণনা করেছিলেন, ’ডিসি, এসপি সহ প্রশাসনের মোসাহেবি আর পুলিশি স্যালুটের কথা মনে হলে বুকটা ভেঙ্গে যায়, মনে হয় মিশে যাই মাটির সাথে’। আবুল হোসেনের বুকেও নিশ্চয় অনেক কষ্ট। কেবল স্যালুটই উনি মিস করবেন না, মিস করবেন বিলিয়ন ডলার প্রকল্পের মালিকানা। সহমর্মিতা রইল বিদায়ী মন্ত্রীর জন্যে।

বিশ্বব্যাংকের সাথে সাপ-নেউল খেলায় শেখ হাসিনার প্রাপ্তি কতটুকু তা বিচারের সময় হয়ত আসেনি। কিন্তু যখন আসবে আশাকরি ক্ষমতাসীন সরকার জাতির সামনে উন্মোচন করবে পদ্ম সেতুর আসল কাহিনী। ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য আর সম্মানকে কেন আবুল হোসেনের মত একজন মন্ত্রীর কাছে জিম্মি করা হয়েছিল এবং তার খুটি হিসাবে কারা কাজ করেছিল তাদের আসল পরিচয় জানার অধিকার আমাদের আছে। আশাকরি আগত সরকার গুলো তা প্রকাশ করবে। জাতি হিসাবে আমাদের হারানো সন্মান ফিরে পেতে এদের পরিচয়ই হয়ত যথেষ্ট হবেনা, প্রয়োজন হবে বিচার ব্যবস্থার হস্তক্ষেপ। আশাকরি দেশের আদালত, উচ্চ আদালত যথাযত ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসবে। আবুল মন্ত্রীর পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি, প্রধানমন্ত্রীর সস্তা দেশপ্রেম আর দুদকের গোলাম হোসেনদের ফ্রি লাইসেন্সে বিশ্বাস করার সংস্কৃতিতে কিছুটা হলেও ভাটা লেগেছে। ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত, মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের আরব্য উপন্যাস আমরা অনেক পড়েছি। জাতিকে চেতনার মোহজালে নেশাগ্রস্ত বানিয়ে সরকারী সম্পদ লুটপাটের এসব সুর সুরি অনেকটাই ভোতা হয়ে গেছে, বিশেষ করে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। আগামী দিনের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে শিক্ষা হয়ে থাকবে পদ্মাসেতু উপাখ্যান এমনটাই আশা করবো আমরা। এ ব্যাপারে অপরাধ ও শাস্তি পর্বে নিরপেক্ষতা হতে পারে নতুন শুরু।

সেতুর ভাগ্যে শেষপর্যন্ত যাই ঘটুক, শুরু হতে সঠিক পথে থাকার জন্যে অর্থমন্ত্রী ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন। হবুচন্দ্র মন্ত্রীসভায় গবুচন্দ্র মন্ত্রীদের ক্ষমতা কতটা সীমিত তা জেনেও অর্থমন্ত্রী আগাগোড়া অর্থনীতির ভাষায় কথা বলে নিজের ক্ষমতা ও যোগ্যতার প্রতি সুবিচার করেছেন। ধন্যবাদ জনাব মাল মুহিত।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন