গাঞ্জার নাও পাহাড় বাইয়্যা যায়...

Submitted by WatchDog on Friday, July 7, 2017

ফুটবলার বাদল রায় এখন সিংগাপুরে। চিকিৎসা নিচ্ছেন। জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রায় মরতে বসেছিলেন। দেশীয় চিকিৎসা সেবার 'মহান' নেটওয়ার্কের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেননি আর্থিক দুরবস্থার কারণে। দুদিন পর পর খবর আসতো মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এককালের বিখ্যাত এই খেলোয়াড়। তবে আমার মত যারা 'ছিলাম বোকা হলাম বুদ্ধিমান' জাতীয় ফ্যাঁকড়া আদম তারা ধরে নিত বিখ্যাত খেলোয়াড়কে নিয়ে মিডিয়ার ঘন ঘন অশ্রু বরনের পেছনে লুকানো একটা উদ্দেশ্য ছিল। আর তা হল বিশেষ একজনের দৃষ্টি আকর্ষণ। অনেকের মত বাদল রায়ের করুণ অবস্থাও দৃষ্টি এড়ায়নি বিশেষ এই জনের। ভোজবাজির মত পাল্টে গেল জনাব রায়ের বেচে থাকার লড়াই। সরকার হতে টাকা এলো। আকাশ ফুড়ে সিংগাপুর হতে এয়ার এম্বুলেন্স উড়ে এসেছিল কিনা জানিনা, তবে বাদল রায়কে সিংগাপুর নেয়া হয়েছিল সরকারী খরচে। এবং চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত করা হয়েছিল সরকারী খরচে। আমার মত যারা জীবন-মৃত্যুকে সৃষ্টিকর্তার লীলাখেলা হিসাবে মেনে নিতে নারাজ, তাদের জন্য রোগ হতে আরোগ্য লাভ তথা বেচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজনীয়তাই মুখ্য। সে হিসাবে বাদল রায় নিশ্চয় ভাগ্যবানদের একজন।

খেলোয়াড় বাদল রায়ের ফুটবল খেলা দেখতে অনেকের মত আমিও মাঠে গেছি। তখনো বোকা হতে বুদ্ধিমান হওয়া উঠেনি বিধায় বুঝতে পারিনি ফুটবলের নামে এরা কি খেলছে। হুদাই হৈ হোল্লা করেছি। রায় বাবুদের হিরো বানিয়েছি। খুব কাছ হতে বাদল বাবুর উত্থান দেখেছি। যাক, এ মুহূর্তে এসব বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক। কারণ ব্যক্তি বিশেষের সুনজরে এসে তিনি এখন জাতীয় খবর। বাদল বাবুকে নিয়ে লেখাটার বোধহয় প্রয়োজন হতনা যদিনা নিজের ত্রাণকর্তাকে নিয়ে বিশেষ একটা মন্তব্য না করতেন। 'মায়ের দয়ায় এ যাত্রায় বেচে গেলাম'। বাদল রায়ের মত যারা বিশেষ এই ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে জীবন যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগা করছেন এবং দেবীর আসনে বসিয়ে কৃতজ্ঞতা ভোগ দিচ্ছেন তাদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে দয়াটা কি আসলে ওনার পাওনা ছিল? গরু ছাগলের ভোটে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে দেশকে লুটপাটের ভাগার বানিয়ে হাজী মোহম্মদ মহসিনের আসনে বসে তিনি পছন্দের মানুষদের পেছনে যে অর্থ বিলাচ্ছেন তার মালিক কি তিনি নিজে? এই বাদল বাবুকে সিংগাপুর পাঠাতে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তার কতটা তেনার নিজের পকেট হতে বেরিয়েছে তা কি কখনো ভাবার সুযোগ হয়েছে? অনেকে বলবেন মৃত্যু পথযাত্রা একজন বাদল রায়ের এতসব ভাবার সময় কোথায়? অমত করছিনা এমনটা যারা ভাবেন। তবে ১৬ কোটির বাকিরা যারা এখনও সুস্থ আছেন এবং তাদের হাজার কান্নাকাটিও বিশেষ ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাবেনা তাদের মনে প্রশ্নগুলো উদয় হলে খুব কি অন্যায় হবে? 'মা'র বিলানো অর্থের ট্রেইল ধরলে তা আমাদের নিয়ে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের ৫০ ডিগ্রী গরমে পশুর মত শ্রম দেয়া স্বদেশীদের দুয়ারে। প্রয়োজনে ওরা টয়লেটে পর্যন্ত ঘুমায়, আধ-বেলা খায়, মা-বাবা স্ত্রী, সন্তানদের বলি দেয় ভাগ্যের আঁকাবাঁকা পথে। ওদের পাঠানো অর্থেই ফুলে ফেঁপে উঠে ব্যাংক সহ দেশের তাবৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উপচে উঠে অর্থনীতি। সে অর্থেই মাল মুহিতরা নীল নীল স্বপ্ন দেখতে শেখে। সে অর্থই পাড়ি জমায় দূরের দেশ সুইজারল্যান্ডে। সে অর্থেই জন্মদিনের নামে চলে ধর্ষণ উৎসবের আয়োজন।

সুচিকিৎসা কোন প্রিভিলেজ নয়, নাগরিকদের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই প্রয়োজন হয় সরকারের। দরকার হয় নির্বাচনের। চিকিৎসার নামে নিয়মিত ভিক্ষা দেয়ার নাম মায়া-মমতা নয়, এ জনগণকে ধোঁকা দেয়ার ঐতিহাসিক ভাঁওতাবাজি। হবুচন্দ্র রাজ্যে অধিক গবুচন্দ্র জন্ম দেয়ার মোক্ষম যন্ত্র।

বাদল বাবু সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন এমনটাই কামনা করি।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন