সুশাসনের রোজনামচা: ১৯শে মে, ২০১৪

Submitted by WatchDog on Wednesday, May 21, 2014

Bangladesh

ঘটনা-১: যদি মুঠো ফোনে যোগাযোগ করেন রিংটোন হিসাবে ভেসে আসবে সূরা ইয়াসিনের তেলাওয়াত। হয় আপনি বিমোহিত অথবা ভাববেন নিশ্চয় জামাত হেফাজতের কেউ। কথায় বলে, বৃক্ষ নাম তার ফলে পরিচয়। সূরা ইয়াসিন সম্প্রচারকের পরিচয়ও তার কর্মে, ধর্মে নয়। ধারণা নিতে চলুন বাংলাদেশের আর দশটা শহরের মত আরও একটা শহরে ঘুরে আসি। এ যাত্রায় সিলেটের সুন্মাগঞ্জে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এই ’ধর্মযাজকের’ পরিচয় খাপ খোলা তলোয়ার হিসাবে। নাম হাসানুজ্জামান ইস্পাহানী। বয়স মাত্র ২৯। এই বয়সেই রাজনীতির সবকটা অলিগলি মাড়ানো প্রায় শেষ। যার ভেতর জেলখানাও অন্তর্ভুক্ত। ২০০১ সালে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের হাত ধরে রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভাব। তারপর আর পিছু তাকাতে হয়নি। ভাড়াটে খুনি, চাঁদাবাজ, পতিতালয়ের পিম্প, বিয়ের আসর হতে কনে উঠিয়ে তৃতীয় পক্ষের হাতে সপে দেয়ার মত অলৌকিক কর্মকান্ডের ধারক, বাহক হিসাবে ব্যাপক ’সুনাম’ অর্জন করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান এখন আর এম্পি নন। তাই ইস্পাহানীকে নিরাপত্তা দেয়ার কেউ নেই। তাই বলে বসে নেই নিষিদ্ধ সাম্রাজ্যের এই অধিপতি। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ না থাকায় পা রেখেছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ শামসুন্নাহার বেগম শাহানা রাব্বানীর আঙিনায়। বলাই বাহুল্য জনাবা রব্বানী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সৈনিকদের একজন।

ঘটনা-২: স্থান ফেনী শহরের একাডেমী সড়কে অবস্থিত বিলাসী নামের সিনেমা হল। সময় প্রায় ১১টা। ১০০ ক্যাডারের ছোটখাটো একটা দল মোটরসাইকেলে চড়ে চলমান একটা গাড়িকে অনুসরণ করছে। মাঝে মধ্যে চক্কর দিচ্ছে। রাস্তার শত শত মানুষ খোলা চোখে দেখছে ফিল্মই কায়দার এ প্রদর্শনী। শেষ পর্যন্ত থামতে বাধ্য হল গাড়িটা। আর অনুসরণ নয়, এবার একশনে যাওয়ার পালা। গর্জে উঠল একাধিক বন্দুকের নল। গাড়ির ভেতর লুটিয়ে পরলেন ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান একরামুল হক। গাড়িতেই কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হল তার লাশ। তারপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হল গাড়িটায়। দাউ দাউ করে জ্বলছে মৃত্যুপথযাত্রী একজন মানুষ। মানুষ নির্বকার হয়ে তাকিয়ে দেখছে। ঢাকায় সরকার প্রধানের কানে গেল এ ঘটনা। ঘটনাচক্রে এও জানলেন সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে চেয়রাম্যান ইকরামুলের প্রতিপক্ষ ছিলেন বিএনপির এক নেতা। বিদ্যুৎ গতিতে নির্দেশ দিলেন গ্রেফতারের। গ্রেফতারের আগেই লুটপাট সহ জ্বালিয়ে দেয়া হল কোমর ভাঙ্গা, দিশেহারা, মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত রাজনৈতিক দলের এই নেতার বাড়ি।

ঘটনা-৩: শিল্প শহর টঙ্গির কোন এক ব্যস্ত রাজপথ। সাভার ক্যান্টনমেন্ট হতে গাড়ি বহর খাদ্য ও অন্যান্য রসদ নিয়ে রওয়ানা দিয়েছে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। ঠিকানা খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট। টঙ্গির রাস্তায় অনেকটা ড্রোণ হামলার কায়দায় ট্রাক বহরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কনস্টেবল আব্বাস আলী ও বাবর আলী। অভিযোগ, সেনা সদস্যদের গাড়ি হাল্কা ধাক্কা দিয়েছে পুলিশ পিকআপভ্যানকে। পুলিশের এএসআই আনোয়ার হোসেন মোটর বাইকে নিয়ে চাতক পাখির মত অপেক্ষায় থাকেন শিকারের আশায়। তার উপর ধাক্কার অভিযোগ। এ যেন সোনায় সোহাগা। ধাক্কার কাফফারা ধার্য করা হয় ৫০ হাজার টাকা। এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার জনাব শাহাদাত হোসেনকে ট্রাক হতে নামিয় উত্তম-মধ্যম দেয় আনোয়ার হোসেনের বুলডগ দ্বয়। এক পর্যায়ে খবর চলে যায় উত্তর পাড়ায়। একদল পোশাকধারী সেনা সদস্য স্থানীয় জনগণের সহায়তায় খুঁজে পায় আব্বাস আলী ও বাবর আলীকে। এবং এক নাগাড়ে দেয়া হয় বেধড়ক গণপিটুনি।
খবর চলে যায় উপর মহলে। নির্দেশ আসে এবং স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় রক্ষা পায় পুলিশের দুই ঈগল।

ঘটনা-৪, ৫ ও ৬: সিলেটে ব্যবসায়ী অপহরণ। চুয়াডাঙ্গায় সাংবাদিকের ক্ষতবিক্ষত লাশ। দৌলতপুর সীমান্ত হতে দশ বছরের এক বালককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ।

রোজনামচা অসম্পূর্ণ থাকবে আমাদের অবৈধ সরকারের জারজ অর্থমন্ত্রীর একটা বক্তব্য তুলে না ধরলে: "পাঁচ বছরের জন্যে এসেছি, পাঁচ বছরই থাকব: একটি ছোট দল হওয়ার পরও বিএনপিকে আরেকটি নির্বাচনের সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মানুষ আমাদের যে বিপুল ম্যান্ডেট দিয়ে পুনর্নির্বাচিত করেছেন, তাতে আর মেয়াদের আগে নির্বাচনের প্রয়োজন নেই"

ভ্যালারে জন্মভূমি, বেচে থাক চিরকাল!!

ভালো লাগলে শেয়ার করুন