খুন, খুনি ও খুনের উপরওয়ালা

Submitted by WatchDog on Saturday, May 10, 2014

Bangladesh

দুদিন আগে কোন এক দৈনিকে পড়েছিলাম পুত্র ও জামাইয়ের কর্মকান্ডে বিপর্যস্ত ত্রানমন্ত্রী জনাব মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরি মায়া। বিষণ্ণতা গ্রাস করেছে তাকে এবং পদত্যাগের কথা ভাবছেন। কিন্তু আজ মন্ত্রিকে দেখলাম তার পুরানো চেহারায়। জোর গলায় ঘোষনা দিয়েছেনে নারায়ণগঞ্জ সেভেন মার্ডারের সাথে তার পরিবারের কেউ জড়িত নয়। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সাবধান করে দিয়েছেন যারা মন্ত্রীর ভাষায় এসব গুজব ছড়াচ্ছে তাদের পরিণতি সম্পর্কে। গুণধর পুত্র জনাব দিপু চৌধুরির নামের পাশে খুনী শব্দটা এই প্রথম ব্যবহূত হচ্ছেনা। আওয়ামী লীগের আগের টার্মেও পুত্রের খুনের মূল্য গুনতে হয়েছিল এই নেতাকে। শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ভেসে উঠার দিন হতে গতকাল পর্যন্ত জনাব চৌধুরিকে মন্ত্রনালয়ে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক কর্মকান্ড দুরে থাক ব্যক্তিগত কাজেও ঘর হতে বের হননি। গতকাল হঠাৎ করে উদয় হলেন এবং নিজ পুত্র ও জামাতার পক্ষে নির্দোষিতার সাফাই গাইলেন। সাথে হুমকি দিতেও ভুল করেননি। কি এমন ঘটল গতকাল অথবা এর আগের দিন? অনুমান নির্ভর হলেও আমি নিশ্চিত জনাব মায়া উপর মহলের গ্রীন সিগন্যাল পেয়েই মাঠে নেমেছেন এবং যথাযত আশ্বাস পেয়ে মুখ খুলছেন। মন্ত্রীর উপর মহল কে এবং কি আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়েছেন সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আসুন যাকে নিয়ে কথা উঠছে সেই জামাতার পরিচয় ঘাটতে হাঁটু পানি পেরিয়ে কোমর পানিতে নামি।

বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া (তাবৎ সুবিধা সহ) র‌্যাব-১১’এর প্রাক্তন কমান্ডার লেঃ কর্নেল সাঈদ তারেকের বাবা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মুজিব বিয়ে করছিলেন মরহুম প্রেসিডেন্ট এবং বঙ্গমাতা উপাধি আবিস্কারক জনাব জিল্লুর রহমানের ভাতিজি দেলোয়ারা বেগমকে। বাড়ির লজিং মাষ্টারকে বিয়ে করে অনেকটা ঘরজামাই মর্যাদায় কর্নেল মুজিবকে লালন পালন করতেন জনাবা দেলোয়ারা বেগম। বাংলাদেশকে যদি এ মুহূর্তে ওয়ান ওয়াম্যান শো হিসাবে আখ্যায়িত করা যায় দেশটার সেনাবাহিনীকেও আখ্যা দেয়া যাবে ওয়ান ম্যান শো হিসাবে। আর এই ম্যানটা হচ্ছেন মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দীকি। ঢাকার উত্তর পাড়ার অঘোষিত বাদশা বলা হয় এই জেনারেলকে। তিনি যদি বলেন ’হও’, সাথে সাথে তা হয়ে যায়। বলাই বাহুল্য এই হওয়ার পেছনে কাজ করে রাজনীতির লম্বা হাত। জেনারেল সিদ্দীকি হচ্ছেন শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা এবং পাশাপাশি সহোদরা শেখ রেহানার দেবর। জুনিয়র তারেক, অর্থাৎ সাঈদ তারেক হচ্ছেন জেনারেল সিদ্দীকির আপন ভাগিনা। আমরা যারা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের লম্বা হাতের সাথে পরিচিত তাদের জন্য সমীকরনটা খুব সহজ। র‌্যাব-১১’এর কমান্ডার এবং ভাড়াটিয়া খুনি সাঈদ তারেককে বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে যাওয়ার মত আইন-আদালত, থানা-পুলিশ অথবা বাহুতে যথেষ্ট পেশী নিয়ে কোন মার সন্তান জন্ম নেয়নি বাংলাদেশে। তাই তদন্ত কমিশনের নামে যে তামাশা চলছে তার রিপোর্ট কি হবে তার রূপরেখা চাইলে এক্ষুনি দাড় করানো যেতে পারে। ‘৭ খুনের মামলায় সাঈদ তারেক ফুলের মত পবিত্র। মন্ত্রিকে হেয় করার জন্য পুত্র দিপু চৌধুরির নাম জড়ানো হচ্ছে। নিখোঁজ নুর হোসেন ও তার সহযোগীরাই এই হত্যাকা¨ের আসল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী। জনগণের সামনে আওয়ামী লীগকে হেয় করার জন্য বিএনপি-জামাত জোট পরিকল্পিত ভাবে হত্যাকা¨ে ত্রাণমন্ত্রির পরিবারকে জড়াচ্ছে।‘ হত্যাকা¨ের উত্তাপ ঠান্ডা হয়ে আসলে শীতলক্ষ্যার পানিতে আরও কটা লাশ ভাসতে দেখা যাবে। যার মধ্যে থাকবেন নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান। ব্যাপারটা খুব সোজা, তাই নয় কি? শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত লেফট্যানেন্ট মায়া। মায়ার মেয়ের স্বামী র‌্যাব ১১’এর বিদায়ী কমান্ডার সাঈদ তারেক। শেখ হাসিনার পারিবারিক সদস্য ও একান্ত বিশ্বস্ত প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দীকি। এই জেনারেলের আপন ভাগিনা সাঈদ তারেক। কেবল ৭জন কেন, ৭০০ জনকে খুন করে পার পেয়ে যাওয়ার জন্য এ কি যথেষ্ট নয়? কেচো খুড়তে সাপ বেরোনোর মত আরও বের হচ্ছে সাঈদ তারেক কেবল ৭ হত্যাকা¨ের আসল খুনিই নন, বরং ইংরেজি টিভি সিরিজ স্পেনসার ফর হায়ার কায়দায় বাংলাদেশের অনেক জেলায় ভাড়ায় খুন করতে যেতেন।

অযোগ্য ও অপদার্থ ব্যক্তিদের জরায়ুতে জন্ম নেয় অপরাধ। আজকের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সে অযোগ্যাদেরই একজন। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, জাতির পিতা, রাজাকার এ জাতীয় কতগুলো শব্দের আড়ালে নিজের অযোগ্যাতাকে লুকানোর ধান্ধায় রাস্ট্রের সবকটা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছেন নির্লজ্জের মত। ব্যক্তি ও পারবারিক রাজত্ব কায়েমের অসূস্থ চিন্তা ভাবনায় পিতার যোগ্য উত্তরসুরী হিসাবে আবির্ভুত হয়েছেন ক্ষমতার মঞ্চে। বন্দুকের নলের মুখে স্বাধীনতার অন্যতম স্তম্ভ গণতন্ত্রের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন দাসত্বের শৃংখল। মানুষ খুন হচ্ছে, মানুষ মরছে। অনেকটা হাওর বাওর বিলে মাছ ধরা উৎসবের মত খুনের উৎসবে মেতে উঠেছে অপরাধী চক্র। আর এই চক্রের মুল চালিকা শক্তি বর্তমান সরকার ও তার প্রাইভেট বাহিনী। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও র‌্যাবের মত খুনি বাহিনীর যৌথ মিলনে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাফিয়া রাজত্ব। ঘরে বাইরে সব খুনের দায় দায়িত্ব সরকারের। জনগণ ভোট দিয়ে সরকার বানায় স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যু নিশ্চিত করার আশায়। শেখ হাসিনা গায়ের জোরে সে দায়িত্ব নিয়েছেন। এবং গত ৫ই জানুয়ারী হতে প্রতিদিন প্রমান করছেন দেশ শাসনে পিতার মতই সমান অযোগ্য। দেশের প্রতিটা খুন ও গুমের প্রতিকার ও বিচারের জন্য ধর্না দিতে হয় শেখ হাসিনার দরবারে। কেবল তিনি আদেশ দিলেই সচল হয় প্রশাসন। বলাই বাহুল্য তিনিও আদেশ দেন দলীয় ও পারিবারিক সমীকরণের উপর ভিত্তি করে। যার ফলে দেশ এখন দাড়িয়ে আছে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দোরগোড়ায়। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতির আসল চেহারা মাত্র। দেশের প্রত্যেকটা মন্ত্রী, এম্পি, প্রশাসন, বিচারক এক একজন নুর হোসেন। এদের নিয়োগ দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক এজেনডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে। নারায়ণগঞ্জ হত্যাকান্ড তারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া, উপদেষ্টা জেনারেল তারেক, কমান্ডার সাঈদ তারেক, খুনি নুর হোসেন, খুনের শিকার নজরুল এরা সবাই পারিবারিক নেটওয়ার্কের খেলোয়াড় মাত্র।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন