'মানুষ নয়, মরেছে ছাত্রলীগ'

Submitted by WatchDog on Friday, April 11, 2014

Chattro League

মন্তব্যটা আমার নয়। বাকৃবির ছাত্রলীগ নেতা হত্যা সংক্রান্ত খবরের ফুটনোটে লেখা জনৈক পাঠকের মন্তব্য। মন্তব্য সহ খবরটা ঠাঁই পেয়েছিল স্থানীয় একটা দৈনিকে। একজন মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে এতটা কুৎসিত মন্তব্য কাঙ্খিত হতে পারেনা। সমাজের ভালমন্দ নিয়ে মন্তব্য করা আমাদের জন্মগত অধিকার। তবে এ অধিকার চর্চার পাশাপাশি মৃত ব্যক্তিদের এক ধরণের অলিখিত সন্মান প্রদর্শনের রেওয়াজ আমরা শত বছর ধরে লালন করে আসছিলাম। হয়ত দিন বদলে গেছে। তাই অপছন্দের মানুষকে কবর পর্যন্ত ধাওয়া করতে আজ আমরা কার্পন্য করিনা। জাতীয় রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই মহারথী শেখ মুজিব ও জেনারেল জিয়াকে নিয়ে স্মরণকালের সেরা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এখন সংসদ ভবনের মত স্থানে নিয়মিত চর্চা হচ্ছে। তাই ছাত্রলীগ নেতার ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড¨ নিয়ে একজন সাধারণ বাংলাদেশির এহেন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যে খুব একটা অবাক হইনি। সময় আসলেই বদলে গেছে। নইলে এক কালের অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী এখন কেন খালেদা জিয়ার গা হতে ব্লাউজ খুলে তা নিয়ে গবেষনা শুরু করতে যাবেন! চৌধুরী পরিবারের দুয়েকজনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। পরিচয় পর্বের শুরুটা মন্ত্রিত্ব নামক সোনালী সময়ে নয়, বরং অগ্নির দাপটে জনাবা চৌধুর যখন দাউ দাউ করে জ্বলছেন সে সময়ের। অনেকটা রাগ করেই তাদের কাছে জবাব চাইলাম আগুনে পোড়া একজন মানুষ কি করে এতটা নর্দমায় নামতে পারে। উত্তরটা ছিল সংক্ষিপ্ত ও সহজ। মন্ত্রিত্ব ধরে রাখতে চাইলে এ ধরণের মন্তব্য নাকি বাধ্যতামূলক। উদাহরন হিসাবে তথ্যমন্ত্রী (জারজ ও অবৈধ) জনাব হাসানুল হক ইনু ও প্রাক্তন হাফ-মন্ত্রি হাছান মাহমুদের রেফারেন্স টানলেন। একজনকে চাকরি বাঁচাতে এবং অন্যজনকে চাকরি ফিরে পেতে অহর্নিশি জিয়া পরিবারের কাপড় টানতে হচ্ছে। এফডিসির মহাপরিচালক বাবু পিযুস বন্দোপাধ্যায় চাকরিটা পাওয়ার আগে কটা মাস নিয়মিত একই চর্চায় ব্যস্ত ছিলেন। তখনই দুয়েকজনকে বলতে শুনেছি বাবুর নবুয়ত প্রাপ্তির সময় এল বলে। ভাগ্যদেবীর সন্তুষ্টি লাভের এটাই নাকি সর্বোত্তম পন্থা, মৃত জিয়াকে কবর হতে তুলে ডাস্টবিনে ফেলা, জীবন্ত খালেদা জিয়ার কাপড় খুলে, পরচুলা সরিয়ে, মুখের মেকআপ মুছে, শয়নকক্ষে পর্ন ম্যাগাজিন রেখে অসুস্থ উল্লাস করা। দেবি নাকি বেজায় আনন্দ পান এ ধরণের সাহিত্য চর্চায়। দেবি খুশি তো বাংলাদেশ খুশি। খুশির প্রতিদান হিসাবে দেওয়া হয় রকমারি পুরস্কার। এই যেমন এম্পিত্ব, মন্ত্রিত্ব, রাষ্ট্রের বড় বড় পদ, উচ্চ আদালতের বিচারক সহ অনেককিছু। আর পদ মানেই সরকারী খাজাঞ্জিখানার চাবি। এবং চাবি মানেই সিসিম ফাঁক! বাকিটা খুলে না বললেও চলবে। শ্রদ্বেয় সাংবাদিক মুসা সাহেব ঠিক উলটো কাজটি করতেন। শেষ বয়সে কেন যে দেবি পূজার আসনে বসতে চাননি তা হয়ত রহস্যই হয়েই উনার সাথে কবরে চলে গেছে। স্বনামধন্য এই সাংবাদিকের প্রতি দেবি ছিলেন নাখোশ। তাই রাষ্ট্রের কোন পর্যায় হতেই সন্মান দেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বলাইবাহুল্য উজির নাজির কোতয়ালদের কেউ যদি মুখ ফস্কে দুয়েকটা ভাল বাক্য বলে ফেলেন চাকরি যাওয়ার গিলোটিনে গর্দান রাখবেন। তাই ইচ্ছা থাকলেও কেউ মুখ খুলবেন না।

লেখাটা শুরু করেছিলাম বাকৃবির মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা সাদের মৃত্যু নিয়ে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হতে জানা যায় লোহার রড দিয়ে বেদম পেটানো হয়েছিল তাকে। ফলে ভেঙ্গে গিয়েছিল বাম হাতের কনুই, ফেটে গিয়েছিলে পেটের লিভার। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে নির্যাতন করে হয়েছিল। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে কমিটির পদ নিয়ে কোন্দল। আমরা সবাই জানি ছাত্রলীগের পদ মানেই টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি সহ ৩৬০ পন্থায় অবৈধ উপার্জন। ভাল থাকতে কার না ইচ্ছা করে? ছাত্রাবস্থায় ভাল থাকার উদাহরন টানলে প্রথমে টানতে হবে ছাত্রদলের আমানুল্লাহ আমানের নাম। কেবলমাত্র পদকে পুঁজি করে এই নেতা যে সম্পদ বানিয়েছেন তা বসে খেলেও নাকি হাজার বছর পার করা যাবে। সাদের সামনে কি ভাগ্য বদলানোর উদাহরন ছিলনা? নিশ্চয় ছিল, নইলে কেন মা-বাবার কষ্টের পয়সায় লেখাপড়া করতে এসে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে যাবেন? সাদের পৈশাচিক মৃত্যুতে বাকৃবিতে কিছুটা হৈচৈ হলেও গোটা দেশ ছিল উদাসীন। স্থানীয় মিডিয়া ছিল ঘরজামাইয়ের ভূমিকায়। ক্যাম্পাস হত্যাকা¨ এখন ডালভাত। বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের ছায়াতলে ঘটতে থাকা এ ধরণের নির্মমতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় রয়েছে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা, দেবী অসন্তুষ্টির ভয়।

আসুন এক মিনিটের জন্য থমকে দাঁড়াই এবং ধরে নেই সাদ প্রাণ হারিয়েছে ছাত্রশিবিরের নির্যাতনে। কল্পনা করুন প্রতিবাদ প্রতিরোধের একটা চিত্র। ছবি আকুন হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, হাছান মাহমুদ, হানিফ, তোফায়েল, আমু, নাসিম এবং অপু উকিলদের মত নেতাদের মুখের ভাষার। ফিলটার জাফর সহ বুদ্ধি ব্যাবসায়ীদের চেতনার বিস্ফোরণে গোটা দেশ হয়ত মাটি হতে ছিটকে দশহাত উঁচুতে উঠে যেত। সুপ্রিম কোর্ট বিচারক লীগের বিজ্ঞ বিচারকগণ হয়ত চেতনার হস্তমৈথুনে নষ্ট করে ফেলতেন জাতির বস্ত্র। দেবীর দুর্ভাগ্য সাদের মৃত্যুতে শিবিরের হাত ছিলনা। থাকলে চেতনার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠত গোটা জাতি। রাজনৈতিক বিনিয়োগে শিবির কর্তৃক সাদ হত্যাকাণ্ড দেবী ও তার পরিবারের জন্য বয়ে আনতে পারতো বিশাল অংকের লাভ। ক্ষমতার রুটি হালুয়া রোগে আক্রান্ত একটা জাতি এখন দেবী সন্তুষ্টি লাভে ব্যস্ত। এখানে রক্তের পরিচয় রাজনৈতিক পরিচয়ে। এবং ক্ষমতা তার নিয়ামক শক্তি। মনে আছে ১৯৭৫ সালের কথা? পরাক্রমশালী শেখ মুজিব গোটা দেশকে নিজের করে নেয়ায় ব্যস্ত। রাতের আধারে প্রাইভেট বাহিনী পাঠিয়ে ধরে আনছেন প্রতিপক্ষ। গুম করে দিচ্ছেন কোন ট্রেইল না রেখে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোর উপর নির্বিচারে ট্রাক্টর চালাচ্ছেন। যে সব মূল্যবোধের উপর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার কোমর ভেঙ্গে দিচ্ছেন। সে বছর আগষ্টের কোন এক সকালে জাতি দেখল স্বৈরাচারী শেখ মুজিব লাশ হয়ে পরে আছেন নিজ বাড়িতে। বুকে হাত রেখে বলুন কজন মানুষকে শোক করতে দেখেছেন? আপনি নিজেও কি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেননি? সাদের পরিচয় একজন মানুষ হলেও জাতির সামনে তার পরিচয় একজন ছাত্রলীগার হিসাবে। এই সেই ছাত্রলীগ যাদের হাতে সহস্রাব্দের সভ্যতা এখন নিয়মিত ও পালাক্রমে ধর্ষিত হচ্ছে। একজন সাদের মৃত্যুকে কেউ কেউ তাই মানুষের মৃত্যু হিসাবে দেখছে না, দেখছে ছাত্রলীগারের মৃত্যু হিসাবে। এ অপমৃত্যুর নিন্দা জানানোতে যেমন আছে রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা, তেমনি সচেতন মহলের আছে চাপা ক্ষোভ। যে ক্ষোভ হতে জন্ম নেয় নীরব সন্তুষ্টি। যেমনটা নিয়েছিল ১৯৭৫ সালে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন