জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও হিন্দু দেবতাদের রক্ত পিয়াস...

Submitted by WatchDog on Tuesday, March 27, 2012

Independence day of Bangladesh

খবরের সাথে ছবিটা দেখে জমে উঠা কুয়াশা গুলো সহসাই কেটে গেল। নিজের কাছে নিজেকেই হাল্কা মনে হল। স্মৃতিসৌধের বেদিতে সন্মান শ্রদ্ধা অর্পণ করব আর তাতে নেতা-নেত্রীর ইগো প্রধান্য পাবে না এমনটা হলে বাংলাদেশের ইতিহাস হয়ত নতুন করে লিখতে হত। তা না ঘটায় অনেকের মত আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। অসময়ের ইতিহাস ঘরে বাইরে বড্ড জটিলতার সৃষ্টি করে, যা শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় রক্তারক্তিতে। বাংলাদেশ তার ৪০ বছরের ইতিহাস নিয়ে এমনিতেই কোমর পানিতে ডুবে আছে, নতুন করে কিছু লিখতে গেলে তা হয়ত আমাদের নিয়ে যেত গলাপানিতে এবং ডুবিয়ে রাখত আগামী ৮০ বছর । যা ঘটার তাই ঘটল, যা হওয়ার তাই হল; ওরা একে অন্যকে ধাওয়া করে রক্তারক্তির মাধ্যমে শহীদদের প্রতি সন্মান জানাল। শুনেছি তেত্রিশ কোটি হিন্দু দেবতাদের কেউ কেউ রক্ত ভালবাসেন এবং পুজা অর্চণা হিসাবে লাল রঙের এই তরল বস্তুটিকেই প্রধান্য দেন। স্মৃতিসৌধ নামক এই অমর প্রতিষ্ঠানটি তৈরীর পেছনে যাদের হাত ছিল তারা গোপনে একই স্থানে হিন্দু কোন দেবতাকে সমাহিত করেছিলেন কিনা তা তদন্তের দাবি রাখে।

শহীদদের জন্যে আমাদের কান্না যেন থামতেই চায়না। ফেব্রুয়ারিতে মাস ভরে কাঁদলাম ভাষা শহীদদের জন্যে, মার্চ এলো এবং আমাদের কান্না দুকুল উপচে সাগর হয়ে রূপ নিল মহাসাগরে। এবারের কান্না ৩০ লাখ শহীদদের জন্যে। সামনে আসবে ডিসেম্বর এবং আমরা আবারও কাঁদবো। মার্চ আর ডিসেম্বরের ফাঁকে ফাঁকেও আমাদের কাঁদতে হয়, এবং তা কারও আগমন, কারও নির্গমন, প্রায়ণ অথবা মহাপ্রয়ানের জন্যে। এসব কান্নাকাটির সবটা জুড়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধ, ৩০ লাখ শহীদ আর ৩ লাখ বীরাঙ্গনা অধ্যায়। বিস্‌বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিমের মত আমাদেরও দেশপ্রেম শুরু হয় ৩০ লাখ শহীদদের জন্যে অশ্রু পাতের মাধ্যমে। চাইলে এ নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। আজকের অস্থির পৃথিবীতে দ্বিতীয় একটা জাতির অস্থিত্ব খুঁজে পাওয়া মুস্কিল হবে যারা তাদের শহীদদের জন্যে বছর জুড়ে কান্নাকাটি করার সময় বের করতে পারে। আমরা পারি এবং প্রয়োজনে এ পারার জন্যে হাতে হাতিয়ার নিতেও দ্বিধা করিনা, যেমনটা করলাম ২৬ শে মার্চের সকালে। প্রটোকল ছিল সকালে প্রধানমন্ত্রী আসবেন, পাশাপাশি খবর আসে বিরোধী দলীয় নেত্রীও আসছেন গণতান্ত্রিক দেশের মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে। খবর পেয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে দেশের আইন শৃংখলা বাহিনী। বিরোধী দলীয় নেত্রীর বাসার সামনে বাস, ট্রাক, জীপ আর ঠেলাগাড়ির স্তুপ তৈরীর মাধ্যমে নিজ নেত্রীর মন জয়ের চেষ্টা করেন গোপালগঞ্জের ’কৃতিসন্তান’ পুলিশ হর্তাকর্তার দল। খবর যথাসময় পৌছে যায় সৌধের পাদদেশে অপেক্ষমান বিরোধী ক্যাম্পে। শুরু হয় আমাদের ঐতিহ্য, যা শুরু হওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভাংচুর, ধাওয়া, পালটা ধাওয়া আর সন্ত্রাসের মাধ্যমে একে অপরের ৫০ জনকে আহত করে স্মৃতিসৌধের পাদদেশে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে দেশপ্রেমী জনগণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনী প্রায় ৬ কোটি মানুষ হত্যা করেছিল, যার অধিকাংশই ছিল ইহুদি। ১৯৪৫ সালে সমাপ্ত এ যুদ্ধ নিয়ে ইহুদিরা কেবল কান্নাকাটি করেই ক্ষান্ত থাকেনি, বরং চোখের পানিকে পরিনত করেছিল বিশাল এক শক্তিতে। আজকের ইসরাইল সে শক্তিরই সদম্ভ বহিঃপ্রকাশ। পাশাপাশি আমাদের শক্তির বহিঃপ্রকাশ হিসাব আমরা প্রতিদিন প্রকাশ করছি লাখ খানেক কবিতা, হাজার হাজার গল্প আর প্রবন্ধ। ভাষন, টক শো সহ সব ধরণের গণমাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে চর্চা হচ্ছে দেশপ্রেম। রাজনীতিবিদদের সাথে বুদ্ধিজীবীরা গলা মিলিয়ে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ ও তিতিক্ষার পরিসংখ্যান। কিন্তু হায়, যাদের কলম আর গলা হতে এসব বেদবাক্য বের হচ্ছে রাতের আধারে তাদের হাতেই প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে আমাদের জন্মভূমি। ক্ষুধার্ত হায়েনার মত খাজাঞ্জিখানা লুটের মহোৎসব পালন করছে দেশের রাজনীতি। জাতীয় স্মৃতিসৌধের হাঙ্গামা সে লুটেরই কৌশলগত লড়াই মাত্র। প্রশ্ন হচ্ছে, আর কতকাল চলবে ফাকা ও বাক্য সর্বস্ব কান্নাকাটির এ দেশপ্রেম?

ভালো লাগলে শেয়ার করুন