আসুন এদেরও হোসনি মোবারকের রাস্তা দেখাই

Submitted by WatchDog on Friday, March 4, 2011

Sheikh Family & Sheikh Hasina

কামাল, জামাল, রাসেল - বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতে তিন অপ্রতিদ্বন্ধী নাম। একটা পুরানো হলেও বাকি দুটোর জন্ম আওয়ামী ক্ষমতার ভরা যৌবনে। সরাসরি শেখ কামালের নাম ব্যবহার না করলেও আবাহনী ক্লাবের আসল পরিচয় শেখ কামাল ক্লাব হিসাবেই, অন্তত এমনটাই বুঝানো হয়েছে আমাদের। নামে বৈচিত্র থাকলেও একটা জায়গায় ক্লাব গুলোর পরিচয় অভিন্ন, ক্লাবগুলো শেখ পরিবারের সদস্য ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভাইদের নামে। গতকাল নতুন একটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়ে গেল আবাহনী ক্লাবে। প্রধানমন্ত্রী মোনাজাতের মাধ্যমে ফিতা কাটলেন শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সের। ঘোষনা দিলেন এ কমপ্লেক্স হবে বিশ্ব মানের। বাবার নামে ৫০ হাজার কোটি টাকার এয়ারপোর্ট আর বিলিয়ন টাকার স্যাটেলাইটের মত শেখ কামাল কমপ্লেক্সের প্রাইস ট্যাগ উন্মুক্ত করা হয়নি, তবে ম্যাংগো পিপলদের বুঝতে অসুবিধা হয়না ক্রীড়া কমপ্লেক্সকে বিশ্বমানের মর্যাদা দিতে ব্যয় করা হবে কোটি কোটি টাকা। অনেকে প্রশ্ন করবেন একদল ক্রীড়া প্রেমিক নিজেদের পকেট উজাড় করে কমপ্লেক্স তৈরীতে বিনিয়োগ করবেন তাতে আমার মত হাভাতে ব্লগারের হা হুতাশ করার কি আছে। যৌক্তিক প্রশ্ন। সমস্যা নিশ্চয় একটা আছে, না হলে এ নিয়ে লিখতে যাব কেন?

শেয়ার বাজারের শোক কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে হাজার হাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর। অনেকে হয়ত আদৌ কাটিয়ে উঠতে পারবে না। অনেকের সংসার ভাঙবে, অনেকে আবার সব হারনোর ক্ষত নিয়ে কাটিয়ে দেবে জীবনের বাকিটা সময়। নিউটনের সূত্র মানতে গেলে আমাদের মানতে হবে পদার্থের সৃষ্টি যেমন নেই, নেই ধ্বংসও, এক চেহারা হতে অন্য চেহারায় রূপান্তরিত হয় মাত্র। কাগজের টাকার বেলায়ও এই সূত্র প্রযোজ্য কারণ কাগজও একটা পদার্থ। শেয়ার বাজার হতে লুটে নেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা নতুন করে জন্ম নেয়নি, হাত বদল হয়েছে মাত্র। একদল লুটেরা ক্ষমতার কারসাজিতে লুটে নিয়েছে বাকিদের, সহজ সরল অংক। নিউটনের সূত্র মতে লুটের টাকারও ধ্বংস নেই, তা এক রূপ হয়ে অন্য রূপে রূপান্তরিত হয় মাত্র, এই যেমন আর্ন্তজাতিক মানের স্পোর্টস কমপ্লেক্স। ওরা বিনিয়োগকারী এবং একদল পাকা শিকারি। ওদের ভাল করেই জানা থাকে শিকারের সন্ধান। আর্ন্তজাতিক মানের শেখ কামাল কমপ্লেক্স তেমনি এক শিকার, হাই রিটার্ন ষ্টক। আমার সমস্যা এখানেই। বাবার নামে, ভাইয়ের নামে আর ভ্রাতৃবধূর নামে শূন্য বিলে ঝুলন্ত বিমানবন্দর অথবা মহাশূন্যে ঘুর্ণায়মান স্যাটেলাইট পাঠানোর ভেতর হয়ত অন্যায় কিছু নেই, কিন্তু প্রশ্ন জাগে এসবে শেখ পরিবারের নিজস্ব বিনিয়োগ কতটা? ওদের কি অর্থাভাব? প্রশ্নটার উত্তর পেতে আমাদের বোধহয় আরও কটা বছর অপেক্ষা করতে হবে। শেখ ডাইনেস্টি অমর করার মহাপ্রকল্প জন্ম নিচ্ছে অনেকটা ডায়েরিয়া কায়দায়। সকালে বাবার নামে তো বিকেল ভাইয়ের নামে, অমাবস্যায় এয়ারপোর্ট তো জোছনায় স্যাটেলাইট, জলে, স্থলে অন্তরীক্ষে পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মা-বাবা, ভাই ও ভ্রাতৃবধূদের নাম। তালিকার সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে এমন একটা সময় আসবে যখন বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে ৩৪০ ডিগ্রী ঘুর্ণি কায়দায় প্রদর্শিত হবে শেখ পরিবারের নাম।

সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর ’লাল সালু’ উপন্যাস যারা পড়েছেন তাদের হয়ত পরিচয় আছে মজিদ মিয়া চরিত্রের সাথে। বাবার নামে মাজার ব্যবসায় শেখ হাসিনার উৎকর্ষতা ও ক্ষিপ্রতা এ যাত্রায় মজিদ মিয়াকেও হার মানিয়েছে। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধনের পাশাপাশি নির্মূল করছেন সম্ভাব্য ভবিষ্যত প্রতিপক্ষদেরও। আওয়ামী লীগের অতীত ও বর্তমান শাসনামল ছাড়া বাকি সব শাসন করা হয়েছে অবৈধ। এক শেখ মুজিব ছাড়া বাকি সব নেতা এখন জারজ। ৪০ বছর ধরে বাস করা বসত বাড়ি হতে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে উচ্ছেদ করেছেন অনেকটা টেনে হিঁচড়ে, এবং রাতারাতি কোটি টাকার সে স্থাপনা ভেঙে হাত দিয়েছেন প্রতিশোধ প্রকল্প বাস্তবায়নে।

শেখ কামাল, শেখ জামাল আর শেখ রাসেল কোন বিচারে জাতীয় বীর তার বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা নেই। একদল ষড়যন্ত্রকারীর বর্বরতার শিকার হয়ে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছিল শেখ পরিবারের এসব সদস্যদের। রশি ঝুলনো হয়েছে কুচক্রীদের অনেকের গলায়। বাকিদের ধরার জন্যেও চলছে ধাওয়া ধাওয়ি। জাতি হিসাবে আমাদের আর কি করতে হবে তাদের জন্যে? আপন মা-বাবা, ভাই-বোনের মৃত্যুকে স্মরণ করে কজন চোখের পানি ফেলে সাড়া জীবন? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা তার পারিবারিক শোককে ১৭ কোটি মানুষের প্রতিদিনের শোক হিসাবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে চাইছেন। আর কত হজম করতে হবে এসব আবর্জনা? সময় কি আসেনি রুখে দাঁড়াবার? একদল অযোগ্য, অপদার্থ আর রাষ্ট্রীয় লুটেরাদের কুশাসনের শাসনকেই কি ভাগ্য বলে মেনে নিতে হবে আমাদের? হোসনি মোবারকের পতনের পাণ্ডুলিপি লেখা হয়েছিল ফেইসবুকে। পারিবারিক একনায়কতন্ত্রের জংলী শাসনের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সময় কি হয়নি আমাদের? আসুন আমরাও এমন একটা প্লাটফর্ম গড়ে তুলি যেখান হতে রচিত হবে হাসিনা-খালেদার অন্তিম যাত্রার আলোকিত অধ্যায়।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন