অপারেশন সাতক্ষীরা-গাইবান্ধা ও একজন জর্জ ষ্টিনি জুনিয়র!!!

Submitted by WatchDog on Monday, January 20, 2014

Bangladesh and Dirty Politics

সত্তর বছর আগের ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন বর্ণবাদে বিভক্ত । দেশটার সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের শিল্প শহর আলকলুও মুক্ত ছিলনা এ অভিশাপ হতে। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রেল লাইনকে বিভক্তি রেখা মেনে এক পাশে বাস করত ধনী সাদারা এবং অপর পাশে হূত দরিদ্র কালোরা। ১৯৪৪ সালের ২৩শে মার্চ বেটি জুন বিনিকার ও মেরি এমা থেমস নামের যথাক্রমে ১১ ও ৭ বছর বয়স্ক দুটো সাদা বালিকা নিখোঁজ হয়ে যায় সাদা এলাকা হতে। সাইকেলে চড়ে বন্য ফুলের সন্ধানে বেরিয়েছিল ওরা। তারপর আর কেউ দেখেনি তাদের। পরদিন মেয়ে দুটোর মৃতদেহ পাওয়া যায় কালোদের এলাকায়। মগজ থেতলে কে বা কারা অগভীর নর্দমায় পুতে রেখেছিল লাশ। জর্জ ষ্টিনি জুনিয়র নামের ১৪ বছরের এক বালক ও তার ছোট বোন এমি ছিল শেষ ব্যক্তি যারা দেখেছিল হারিয়ে যাওয়া বালিকা দুটোকে। প্রতিদিনের মত সেদিনও রেললাইনের উপর বসে অলস সময় কাটাচ্ছিল তারা। দ্রুত গতির দুটো সাইকেল হঠাৎ করে থেমে যায় তাদের সামনে এবং চালকের আসন হতে মেয়ে দুটো জানতে চায় বনফুলের সন্ধান। এবং এখানেই সূত্রপাত হয় জর্জ ষ্টিনির সমস্যার। পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে। বেটি ও মেরি হত্যাকাণ্ডের দায় চাপিয়ে আদালতে নিয়ে যায়। এক মাস স্থায়ি বিচারে কোন স্বাক্ষী তলব করেনি প্রসিকিউশন। মামলার সবটাই আবর্তিত হয়েছিল পুলিশি রিপোর্টকে ঘিরে। জর্জকে অভিযুক্ত করতে অল হোয়াইট জুরির সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। বিচারক ষ্টাম্পটার ১৪ বছরের এই যুবককে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে বিন্দুমাত্র দেরি করেননি।

৭০ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডের পুণঃবিচার করতে যাচ্ছে সাউথ ক্যারোলাইনার উচ্চ আদালত। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী জর্জের বোন এমি এখনো বেঁচে আছে এবং এ যাত্রায় স্বাক্ষী দিতে যাচ্ছে আদালতে। উল্লেখ্য, প্রথমবার তাকে অনুমতি দেয়া হয়নি স্বাক্ষী হওয়ার। এমির মতে, ঘটনার দিন জর্জ সকাল-সন্ধ্যা তার সাথে ছিল এবং খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল একেবারে অসম্ভব। তাছাড়া মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় থাকা খোদ জর্জ তার এক ইনমেইটের কাছে বলে গেছে পুলিশি চাপ ও অত্যাচারের ফলে খুনের দায় নিয়ে বাধ্য হয়েছিল সে।

দূরের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ বছর আগে কি ঘটছিল এ নিয়ে বাংলাদেশিদের মাথা ঘামানোর কোন হেতু আছে বলে মনে হবেনা। এ বিচারে আমার লেখা অপ্রাসঙ্গিক ও সময়ের অপচয় মনে হতে পারে। কিন্তু আমার মত যারা ন্যায় ও সত্যের চূড়ান্ত বিজয়ে বিশ্বাসী তাদের কাছে ঘটনার স্থান, কাল ও পাত্র কোন ব্যাপার নয়। ৭০ বছর আগে কেবল মাত্র কালো হওয়ার ’অপরাধে’ গণতান্ত্রিক আমেরিকায় তারা ছিল নিপীড়িত, বঞ্চিত, শোষিত ও নিগৃহীত। আজ এত বছর পর কি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে না বাংলাদেশের সাতক্ষীরা গাইবান্ধা অঞ্চলে? কেবল মাত্র ভিন্নমত পোষন করার কারণে বর্তমান সরকার সেনা, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ে ঝাঁপিয়ে পরছে কথিত জামাতিদের উপর। বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে বাড়িঘর। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য। দিনের আলোতে গুম করে রাতের আধারে লাশ বানিয়ে ফেলে দিচ্ছে হাটে মাঠে ঘাটে। লাশ আর লাশে গিজগিজ করছে জনপদ। অনেকটা মার্কিন সাদাদের মত এসব তান্ডবে জৈব উল্লাস করছে মানুষ নামের একদল পশু। তারা নিজদের দাবি করছে মুক্তি, স্বাধীনতা ও চেতনার সৈনিক হিসাবে। এদের চেহারায় চাইলে খুঁজে পাওয়া যাবে আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের এক্সট্রিম বর্ণবাদী সাদা গ্রুপ কুক্সুক্লান নামক সন্ত্রাসীদের ছবি। ৭০ বছর পর আমেরিকায় সম্ভব হলে আমাদের দেশেও সম্ভব। হয়ত ৭০ বছরে নয়, ১৭০ বছরে। আজ হোক কাল হোক সত্যের জয় হবেই। আজীবন এমনটা থাকতে পারেনা আজকের বাংলাদেশ। এক দিন না একদিন এ দেশেও প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন এবং পালে লাগবে সুশাসনের হাওয়া। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সেদিন পুনর্মূল্যায়িত হবে প্রতি বিন্দু রক্তের হিসাব। যাদের লাশে ভরে উঠছে লোকালয় হয়ত তাদের ফিরিয়ে আনা যাবেনা, কিন্তু বন্দুকের নলের মুখে যারা রক্তগঙ্গায় অবগাহন করেছিল অন্তত তাদের মিথ্যাচার হতে মুক্ত করা যাবে এ জাতির ইতিহাস।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন