বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা...বেশ্যা বাজারের গোপাল ভাড়!

Submitted by WatchDog on Friday, January 17, 2014

Bangladesh - Justice System

১৯৯৫সালের ১৯শে এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশেষ একটা দিন। ঐ দিন ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যের ওকলাহোমা শহরে ঘটে এমন এক ঘটনা যা পরবর্তীতে বদলে দেয় আমেরিকানদের জীবন। টিমোথি ম্যাকভেই নামের এক স্বদেশি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় শহরের আলফ্রেড মিউরাহ ফেডারেল বিলডিং। শক্তিশালী ঐ বিস্ফোরণ কেড়ে নেয় ১৬৮টি জীবন। হৃদয়বিদারক ঐ ঘটনা কাঁপিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ভীত। যে ঘটনা মার্কিনিরা খবরের কাগজ ও টিভির পর্দায় দেখতে অভ্যস্ত এমন ঘটনা তাদের চোখের সামনে ঘটবে কেউ কল্পনা করতে পারেনি। স্বভাবতই ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয় ঘটনার নায়ক ম্যাকভেইকে ঘিরে। বলাই বাহুল্য ঘটনার প্রথম প্রহরে অনেকেই ধরে নিয়েছিল কাজটা ইসলামী জঙ্গিদের। এমন তত্ত্ব হালে পানি না পেতে খুব একটা সময় লাগেনি। খুব অল্প সময়ের ভেতর পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় টিমথি ও তার সহযোগীকে। ওরা দুজন মিলে বদলা নিচ্ছিলো ১৯৯৩ সালে টেক্সার অঙ্গরাজ্যের ওয়াকোতে ঘটে যাওয়া অন্য একটা ম্যাসাকারের। কালট লীডার ডেভিড কোরেশ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে টোবাকো, এলকোহল ও ফায়ার আর্মস সহ হরেক রকম অভিযোগ ছিল ফেডারেল প্রশাসনের। এবং এক সময় এ্যাকশনে যেতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় পুলিশ। অবরোধ করে আটকে ফেলে কোরেশ সহ তার আশ্রমের বাকি সবাইকে। ব্যাপক রক্তপাতের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে এই অধ্যায়ের। ভেভিড কোরেশ সহ সেক্টের বাকি সবাই আগুনে পুড়ে মারা যায়। সরকারী ভাষ্য ভেভিড নিজের দেয়া আগুনেই আত্মাহুতি দিয়েছিল এবং বাকিদেরও বাধ্য করেছিল সহমণে। মোট ৭৫ জনের মৃত্যু হয় এ ঘটনায়। উগ্রপন্থী মিলিশিয়া ও আমেরিকার প্রথম গলফ যুদ্ধের সৈনিক টিমোথি ম্যাকভেই মেনে নিতে পারেনি ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম। প্রতিশোধ হিসাবে ট্রাক ভর্তি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় ওকলাহোমা শহরের সরকারী দালান।

সবেমাত্র অষ্ট্রেলিয়া পাট চুকিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছি। থাকি ডালাসে। হাতে অফুরন্ত অবসর। এক টিভি দেখা ছাড়া করার মত তেমন কোন কাজ নেই। চাকরি খোজা কোথা হতে শুরু করব তারও হদিস করতে পারিনি। টিমোথি বিচার পর্বের শেষ অধ্যায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে তখন। এক সময় বেঁচে থাকার সব কটা দরজা বন্ধ হয়েছে টিমোথির জন্য। শরীরে লিথাল ইঞ্জেকশন ঢুকিয়ে কার্যকর করা হয় তার মৃত্যুদ¨। কেবল ইঞ্জেকশন পর্বটা বাদে ফাঁসি পর্বের বাকি সবকিছু সরাসরি সম্প্রচার করে স্থানীয় মিডিয়া। ১৬৮ জনের খুনি একজন অপরাধীর এহেন শাস্তি সমাজে স্বস্তি সহ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেয়ার কথা। বাস্তবেও ঘটেছিল তাই। কিন্তু ব্যক্তি আমি কিছুক্ষণের জন্য হলেও থমকে গেলাম। একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষকে সরকারী আয়োজনে হত্যা করার যৌক্তিকতা খুঁজে পেতে কষ্ট হল। খুনির প্রতি এতদিনের ঘৃণা হঠাৎ করে কেন জানি সহানুভূতিতে রূপ নিল। মনে মনে অলৌকিক এমন কিছু আশা করছিলাম যা বদলে দেবে টিমোথি ম্যাকভেইয়ের ভাগ্য। কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। সুস্থ সবল টিমোথিকে মরণ চেয়ারে বসিয়ে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে লাশ বানানো হয়। কিছুক্ষণ পর তার লাশ ফিরিয়ে দেয়া হয় নিকট আত্মীয়দের কাছে।

উপরের ছবি দুটো বাংলাদেশের। চট্টগ্রামের এই দুই যুবককে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেছে। কারণ গুলো আমাদের সবার পরিচিত। গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে ওতপেতে থাকা সহযোগীরা পুলিশকে আক্রমন করে। আসামী দ্বয় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হয়। এবং তাতেই মৃত্যু হয় তাদের। পুলিশেরও একজন আহত হয় এই ’যুদ্ধে’। বাস্তব ঘটনার সাথে পুলিশি বক্তব্যের তফাৎ বাংলাদেশের কুকুর বেড়ালেরও বুঝতে অসুবিধা হয়না। যে কারও ইশারায় পুলিশ এই দুজনকে উঠিয়ে নিয়ে খুন করেছে। হয়ত বিনিময়ে কারও কাছ হতে পেয়েছে বিশাল অংকের টাকা। পুলিশ বলছে ওরা সন্ত্রাসী, সমাজে অশান্তি সৃষ্টিকারী। সরাসরি না বললেও আমাদের বুঝে নিতে হয় এভাবে কাউকে মারার ভেতর অন্যায় কিছু নেই। কতটা অন্যায় করেছিল এই দুই ’আসামী‘? অপরাধ কি সাবেক পুলিশ কমিশনার নুরমোহম্মদের চাইতেও বেশি? উল্লেখ্য, এই কমিশনার চাকরিকালীন সময়ে ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ বানিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিলেন। নুরার আসল চেহারা সমাজে প্রকাশ পাওয়ার আগে তাকে রাষ্ট্রদূত বানিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেয় আগের বৈধ ও বর্তমানের জারজ সরকার। কথিত রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত বাবু কেবল এক রাতেই সত্তর লাখ কামাতে গিয়েছিলেন। কতটা বৈধ ছিল সে আয়? সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান ও ডেসটিনি নামক বুবিট্রাপের হোতা জেনারেল হারুনের চাইতেও কি বেশি ছিল এই দুই স্বদেশির অপরাধ? চাইলে এ তালিকা লম্বা করা যায়। ল্যাজ ধরে টান দিলে হয়ত মাথা চলে আসবে। সে মাথায় এক জোড়া চোখ, কান, নাক আর কিছু চুল বসালে এমন কিছু চেহারা বেরিয়ে আসবে যা হজম করার মত উদর বাংলাদেশ এখন নাই বললেই চলে। পুলিশ ও র‌্যাব ঘরণায় ক্রসফায়ার ব্যবসা এখন রমরমা ব্যবসা। বস্তা ভর্তি টাকা নিয়ে যে কেউ ধর্ণা দিতে পারে এই দুই বাহিনীর দুয়ারে। চট্রগ্রামের এই দুই হতভাগার ছবিই বলে দেবে বাকি ইতিহাস।

জরুরি কাজে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলাম। পথে ফতুল্লায় বিশাল ট্রাফিক জ্যাম দেখে থমকে গেলাম। কারণটা বের করতে একটু সময় লেগে গেল। রাস্তা আটকে স্থানীয় লোকজন আনন্দ করছে। আনন্দের অতিসয্যে কেউ কেউ রং খেলছে। বাসযাত্রীরাও রেহাই পাচ্ছেনা এ অযাচিত আনন্দ হতে। বাজারের ভেতর নাকি মিষ্টি বিতরনের ফোয়ারা বইছে যা আমরা বাসযাত্রীরা মিস করছি। এ আনন্দের কারণ? আছে একটা নিশ্চয়। এবং তা ভয়াবহ। এলাকার দুই ’সন্ত্রাসী’ র‌্যাবের গুলিতে নিহত হয়েছে। আর তাতেই আমজনতা জেগে উঠেছে এবং সমস্যা সমাধানের আনন্দে নাচতে শুরু করেছে। আমার মনে হল নো ম্যানস ল্যান্ডে আছি আমি। এই ল্যান্ড এমন একটা দেশের ল্যান্ড যেখানে জন্ম-মৃত্যু, বেঁচে থাকা, মরে যাওয়ায় কোন স্বরলিপি নেই। চাহিদা নেই। তাগাদা নেই। অথচ বিচার ব্যবস্থার নামে এখানে লোয়ার কোর্ট, আপার কোর্ট সহ হাতি ঘোড়া, বাঘ ভল্লুক সবই আছে। এ নিয়ে আমাদের গর্বেরও অন্ত নেই। কারণ এসব কোর্টের হাত ধরেই দেশ তত্ত্বাবধায়ক নামের ’কুমির’ হতে মুক্তি পেয়েছিল।

টিমোথি ম্যাকভেইকে বিচার প্রক্রিয়ার সবকটা রাস্তা মারিয়ে ফাঁসির মঞ্চে নেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রামের এই দুই বাঙ্গালি কি বেচে থাকার সামান্যতম অধিকার নিয়ে জন্ম নেয়নি?

ভালো লাগলে শেয়ার করুন