এরিয়্যাল শ্যারন, নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের ইসলামী জঙ্গিবাদ

Submitted by WatchDog on Monday, January 13, 2014

ariel sharon

এরিয়্যাল শ্যারনকে আট বছর আগেই বিদায় জানিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ঈশ্বরের লেনাদেনা চুকিয়ে বেচারা স্বর্গপরীদের সাথে জলকেলিতে মেতে উঠেছেন এতদিনে। কিন্তু কোথায় কি, পুটি মাছে ঘি... তিনি যে এতদিন বেঁচে থাকবেন খোয়াবেও কল্পনা করিনি। আট বছর কেউ কোমায় থাকতে পারে এমনটা ভাবার মত মানসিক শক্তি এখনো অর্জন করিনি। তাই অবাক হয়েছি তার এই দীর্ঘায়িত মৃত্যুতে। ফেসবুক সহ ভার্চুয়াল দুনিয়ায় যাদের সমসাময়িক বিচরন তাদের কাছে নামটা পরিচিত শোনাবে এমনটা আশা করিনা। তবে মধ্যপ্রাচ্যে প্যালেস্টাইনিদের ভাগ্যের সাথে যাদের উঠা বসা আছে তাদের কাছে ইসরায়েলি এই জেনারেলের নাম হিটলারের মতই সুপরিচিত। নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মত কিছু নেই। সংযোজন করার মত নতুন খবর হচ্ছে ১৯২৮ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারী জন্ম নেয়া এই বুলডোজার এ মাসের ১১ই জানুয়ারী ভবলীলা ত্যাগ করেছেন। হ্যা, এ নামেই তিনি স্বদেশবাসীর কাছে পরিচিত।

ariel sharon

কে এই এরিয়্যাল শ্যারন? আসুন ফিরে যাই ১৯৪৮ সালে। ইসরাইলের কথিত স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সৈনিক। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে আরব বিশ্বকে পিষে ফেলার অন্যতম ’নায়ক’ও ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালের ইয়ম-কিপুর যুদ্ধের কমান্ডার এবং সর্বশেষ ১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধের সেনা নায়ক। সে যুদ্ধে সাবরা ও শাতিলা রিফিউজি ক্যাম্পে ইসরাইলি বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিল তার অন্যতম প্রধান নায়কও ছিলেন এই কসাই। লেবাননের নির্বাচনে বশির গামায়েলের নেত্রীত্বে কাতায়েব পার্টি নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করছে মাত্র । কিন্তু নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে সে পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। ইসরায়েলিদের প্ররোচনায় লেবাননী জনগণ বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় দেশটায় আশ্রয় নেয়া প্যালেস্টাইনি উদ্বাস্তুদের হাত ছিল এই হত্যাকাণ্ডে যদিও পরে প্রমাণিত হয় এর পেছনে ছিল সিরিয়া সমর্থিত লেবাননী জঙ্গি সংগঠন। ১৯৮২ সালে ইসরায়েলিরা লেবানন আক্রমন করে। উদ্দেশ্য সে দেশ হতে প্যালেস্টাইনিদের উচ্ছেদ করা। ইসরায়েলের সাথে যোগ দেয় লেবাননের খ্রীষ্টান ফালাংগিষ্ট এবং সাউথ লেবানিজ আর্মি নামের জঙ্গিরা। যে মুহূর্তে প্যালেস্টাইনীরা ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করেছে কেবল তখনই ওদের ঝাঁপিয়ে পরে একদিকে লেবাননের অভ্যন্তরীন জঙ্গি দল, অন্যদিকে তাদের সহযোগী ইসরায়েলি নিয়মিত বাহিনী। যার নেত্রীত্বে ছিল এই এরিয়্যাল শ্যারন। নিরস্ত্র প্রায় ৪ হাজার প্যালেস্টাইনি কয়েক ঘন্টার মধ্যে কচুকাটা করা হয়। এ হতে শিশু, নারী, বয়স্ক, শারীরিক প্রতিবন্ধী কেউ রক্ষা পায়নি। শ্যারন ও তাদের সঙ্গীদের রক্তাক্ত উল্লাসে কেঁপে উঠে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। আজ পর্যন্ত এ পশুত্বের জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে শোনা যায়নি। বরং যাকে এই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্যেক্তা হিসাবে চিহ্নিত করা হয় সেই এইলি হোবেইকা পরবর্তীতে লেবানিজ মন্ত্রীসভায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

ariel sharon

আজকের দুনিয়ায় মার্কিন নেত্রীত্বে উন্নত বিশ্ব কথিত ইসলামী জঙ্গিবাদ দমনের নামে শেখ হাসিনার মত রাজনৈতিক পতিতাকেও ক্ষমতায় ধরে রাখতে কুণ্ঠিত হচ্ছেনা। অথচ জঙ্গিবাদের জন্মদাতা ইসরাইলকে লালন করছে নিজেদের বগলের তলায়। পাশাপাশি ভারতের চরম উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী শক্তি বিজেপির ক্ষমতায়নকে স্বাগত জানাতেও কার্পণ্য করছেনা। এরিয়্যাল শ্যারন ও নরেন্দ্র মোদিদের পশুত্বকে অন্ধ দৃষ্টিতে বিচার করে বাংলাদেশের মত একটা দেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ সন্ধান করা উলঙ্গ হিপোক্রেসি এবং বাস্তবতার চরম বিকৃতি।

আমার মত যারা পরজনমে বিশ্বাসী নয় তাদের অনেকেই বিশ্বাস করে মাটির পাপ মাটিতে মোচন করতে হয়। যেমন করে গেলেন এরিয়্যাল শ্যারন। মস্তিস্কের রক্তক্ষরণ তাকে আট বছর ধরে শাস্তি দিয়েছে। এক কালের পরাক্রমশালী এই খুনি তিলে তিলে, ধুকে ধুকে মোচন করে গেছেন প্রতি কণা প্যালেস্টাইনি রক্তের দেনা।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন