পেপ্পি কিভিনিয়ামির ভারত যাত্রা!

Submitted by WatchDog on Monday, January 11, 2010

Hasina's visit to India

আমার দাদাবাড়িতে ট্রাডিশনটা অনেকদিন পর্য্যন্ত চালু ছিল, গ্রামের এক বাড়িতে নেমতন্নের ব্যবস্থা থাকলে গ্রামের কোন বাড়িতেই সে দিন চুলা জ্বলতনা। পরিবারের একজনকে দাওয়াত দিলে সেজেগুজে বাকি সবাই হাজির হত লাজ লজ্জা চুলায় ঠেলে। যারা ভোজ পর্বের আয়োজন করত তাদেরও জানা থাকত কি হতে যাচ্ছে, তাই ঐ গ্রামে দাওয়াত পর্বের আয়োজন করতে সহজে কেউ সাহষ করতনা। প্রসংগটা টানছি অন্য একটা কারণে। পেপ্পি কিভিনিয়ামি নামের কেউ একজন সহ ১২৪ জনের বিশাল বাহিনী নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত গেছেন সরকারী সফরে। শোনা যাচ্ছে নয়া দিল্লির হীম শীতল বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেও সে দেশের সরকার শেখ হাসিনার জন্যে আয়োজন করেছে উষ্ণ সম্বর্ধনা। ধন্যবাদ জানাতে হয় ভারত সরকারকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেড়াতে আসলেও বোধহয় ভারত সরকারকে এতটা মনযোগী দেখাত না, এ জন্যে শেখ হাসিনা বিশেষ কৃতিত্ত্ব দাবী করতে পারেন।

প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, শেখ হাসিনার মাঝে ভারত সরকার এমন কি খুঁজে পেয়েছে যার জন্যে তাকে খুশী করার এত আয়োজন? শেখ হাসিনা প্রতিবেশী একটা দেশের সরকার প্রধান মাত্র, যে দেশের সাথে ভারতের রয়ে গেছে সীমান্ত সমস্যা, পানি সমস্যা, বানিজ্য ঘাটতি, সর্বোপরী পারস্পরিক বিশ্বাষে ব্যাপক দৈন্যতা। অবশ্য এ ধরনের জামাই(?) আদর পাওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরী করেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী পা রাখছেন ভারতের মাটিতে। আসামের বিচ্হন্নতাবাদী দল উলফার ডকসাইটের নেতাদের বাংলাদেশী আস্তানা গুড়িয়ে দিয়ে তাদের তুলে দিয়েছেন ভারত সরকারের হাতে। ভারত সরকার পুরস্কার সরূপ হাসিনা সরকারকে কি দিতে যাচ্ছে তা জানার জন্যে আমাদের বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবেনা। এখানেও অনেকের মনে দ্বিধা রয়েছে, ভারত সরকার আসলে কাকে পুরস্কৃত করতে যাচ্ছে, হাসিনা সরকার না ব্যক্তি হাসিনাকে? সরকারকে পুরস্কৃত করতে গেলে ভারতকে একগাঁদা ছাড় দিতে হবে; সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধের নিশ্চয়তা, গ্রহনযোগ্য পানি বন্টন চুক্তি, টিপাইমূখী বাধ নির্মান বন্ধের গ্যারান্টি, বানিজ্য ঘাটতি কমিয়ে সহনীয় পর্য্যায়ে আনার চুক্তি সহ আরও অনেক কিছু। ভারত কি প্রস্তূত এতগুলো কন্‌শেসন একসাথে হজম করতে? অতীত অভিজ্ঞতা কিন্তূ অন্য কথা বলে, কথার ফুলঝুড়িতে প্রতিপক্ষকে বেলুনে চড়িয়ে খালি হাতে ফেরত পাঠাতে দেশটার কোন তুলনা নেই। স্বভাবতই সন্দেহের তীর ধাবিত হবে দ্বিতীয় সম্ভাবনার দিকে, অর্থাৎ ব্যক্তি হাসিনাকে পুরস্কৃত করা। আর এই ঐতিহাসিক পুরস্কার পর্বের কালজয়ী স্বাক্ষী হওয়ার জন্যেই কি প্রধানমন্ত্রী পেপ্পি কিভিনিয়ামিকে সফর সংগী বানিয়েছেন? কে এই পেপ্পি কিভিনিয়ামি? আমাদের কে বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নে বৌ। ভাগ্নে বৌ'এর সময় যাতে ভাল কাটে তার জন্যেই হয়ত সফর সংগী হিসাবে নেয়া হয়েছে যথাক্রমে, প্রধানমন্ত্রীর সিবলিং শেখ রেহানা, পুত্র জয় ওয়াজেদ, পুত্রবধূ ক্রিষ্টিনা ওয়াজেদ, নাতনী সুফিয়া ওয়াজেদ, ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, ভাগ্নি আজমিনা সিদ্দিক প্রমূখ। ও হ্যাঁ, পেপ্পি হচ্ছেন বেগম রাদওয়ান সিদ্দিক, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নে বধূ। সফরটা সরকারী সফর না হলে বোধহয় কথা উঠতনা; প্রশ্ন, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সফরে প্রধানমন্ত্রীর ডানে বায়ে এসব পেপ্পীদের প্রয়োজন কি জন্যে? এদের খরচই বা সরকার বহন করছে কোন যুক্তিতে? দেশে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের প্রশ্ন মোকাবেলা করতে হবে সন্দেহ নেই। আবশ্য এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর রয়ে গেছে বিশাল এক মন্ত্রী বহর, প্রয়োজনে মহাশক্তিধর ছাত্রলীগকে ব্যবহার করা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।

শেখ হাসিনা হয়ত একটা কথা ভূলে গেছেন, উনার চীর প্রতিপক্ষ বেগম খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে তৈরী হয়ে আছেন বিমান বন্দর হতে শহর পর্য্যন্ত কাটা বিছিয়ে ফেরার পথ কন্টকাকীর্ন করার জন্যে। সফরের ফলাফল যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ সরকারের হয়ে এই পেপ্পী বেগমের ভারত সফর বেগম জিয়ার কাটা বিছানো মিশনে স্ফূলিংগ হিসাবে কাজ করেবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।


ভালো লাগলে শেয়ার করুন