রাজনীতির ১/১১ বনাম ১/১১'র রাজনীতি...

Submitted by WatchDog on Sunday, January 10, 2010

1/11 Bangladesh

রাজনীতির দিগন্ত রেখায় ১/১১’র রেশ চীরদিনের মত মিলিয়ে গেছে এ জাতীয় উপসংহারে আসার সময় এখনো হয়ত আসেনি। মিশন ১/১১ বিদায় নিয়েছে ঠিকই, কিন্তূ যাদেরকে ঘিরে এই আয়োজন তাঁরা জীবনের শেষ দিন পর্য্যন্ত এ অধ্যায়কে মনে রাখবেন তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১/১১’র উত্থান ছিল হঠাৎ ধেয়ে আসা কালবৈশাখীর মত, এমনটা মনে করা হবে দেশটার রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। অনিশ্চয়তার ঘোলা পানিতে মৎস শিকার দেশীয় রাজনীতির পুরানো সাংস্কৃতি, অতীতে অনেকেই অংশ নিয়েছেন এ ধরনের শিকারে এবং তুলে নিয়েছেন বিএনপি, জাতীয় পার্টির মত লাভজনক পন্য। কোন প্রেক্ষাপটে ১/১১ আধ্যায়ের অভ্যুদয় ঘটেছিল এ নিয়ে আর্ন্তদলীয় বিতর্ক চলতে পারে অনন্তকাল ধরে, কিন্তূ সাধারণের মানুষের কাছে এর কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। ঘটনা ১৯৭১ সালে ঘটেনি যা নিয়ে জাতির স্মৃতিতে তেনা পেচানো যাবে। ক্ষমতার পালা বদলে কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয় এ প্রশ্নের উত্তরেই লুকানো আছে ১/১১’র ভ্রুন। রাজনীতিবিদ্‌রা যত তাড়াতাড়ি এ সহজ সত্যটা উপলদ্বি করতে পারবেন ততই উনাদের জন্যে মংগল, এবং মংগল ১৫কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশেরও।

দলীয় লাভ ক্ষতির মাপকাঠিতে রাজনীতিবিদ্‌রা মূল্যায়ন করছেন ১/১১কে, স্বভাবতই ক্ষতিগ্রস্ত দল বিএনপির কাছে এ শুধু একটা তারিখ নয় বরং তাদের জন্যে সাম্রাজ্য পতনের শুরু। ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে আওয়ামী লীগ হয়ত ভূলে যাওয়ার ভান করছে ১/১১’র তিক্ত স্বাদ, যা সময় এলে বানের গতিতে বেরিয়ে আসতে বাধ্য। ভোটের দৌড়ে ফলাফলের ঘোড়া যদি অন্য আস্তাবলে ঠাই পেত নিশ্চয় বদলে যেত ১/১১ মূল্যায়নের মেরু। এমনটাই আমাদের রাজনীতি, ব্যক্তি ও দলীয় লাভ লোকসানের র্নিলজ্জ প্রদর্শনী। কথা, কাজ ও লেখায় রাজনীতিবিদ এবং তাদের সেবাদাসের দল আমাদের এটাই বুঝাতে চাইছে ১/১১’র ফলে সবচাইতে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের অর্থ যদি রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের অবাধ লাইসেন্স হয়ে থাকে, নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে গণতন্ত্র। মামুন, ফালু, খোকা, আমান, তারেক, মহিউদ্দিন আলমগীর আর হাজী সেলিম গংদের জন্যে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি তা আমাদের জানা হয়ে গেছে। একজন বাবর আলী ও একজন মোর্শেদ খানের গুপ্তধন রক্ষার্থে যদি মন্ত্রের প্রয়োজন হয় বাংলাদেশের গণতন্ত্র হচ্ছে সে মন্ত্র, এবং এ গণতন্ত্রের প্রাইস ট্যাগ এক কাপ চা ও একটা আকিজ বিড়ি। আঠারটা মাস বাংলাদেশের মানুষ চা আর বিড়ি হতে বঞ্চিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তূ বিনিময়ে পেয়েছে বনখেকো ওসমান গনি, ব্যাংক খেকো বাকির ভাই, অফিস পিওন ফালু, লাগেজ ব্যবসায়ী বাবর, রাজনীতিবিদ তারেক জিয়া, রাস্তার ফকির মামুন, সাংবাদিক আতিকুল্লাহ আর আমলা আলমগীরদের নগ্ন তৈলাক্ত নিতম্ব। এক বছরের ব্যবধান খুব একটা বড় ব্যবধান নয়, এত তাড়াতাড়ি শাক দিয়ে সমুদ্র ঢাকতে রাজনীতিবিদ্‌রা সমর্থ হবেন এমনটা আশা করার কোন কারণ নেই।

১/১১ কি আদৌ কিছু দিয়েছে আমাদের? এমন একটা প্রশ্নের আগে আমাদের জানতে হবে ঐ সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশাই বা ছিল কি। শর্ট টার্মে এ ছিল দেশের আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রন। লগি বৈঠার দামামায় দেশের কেন্দ্রবিন্দুতে পানি পথের যুদ্ব থামানোর কৃতিত্ব দেশের রাজনীতিবিদ্‌দের নয়, এ কৃতিত্ব ১/১১’র কথিত ষড়যন্ত্রকারীদের। আমাদের নিজদেরই উত্তর দিতে হবে, ঐ মুহুর্তে কোনটা ছিল বেশী জরুরী, পাথর যুগের বর্বর গণতন্ত্র, না একবিংশ শতাব্দীর মনুষ্য জীবন? শর্ট টার্ম সরকারের কাছে লং টার্ম প্রত্যাশা এক অর্থে বিদঘুটে সরকারকে আইনী বৈধতা দেয়া। আমরা কি তৈরী ছিলাম ঐ সরকারকে বৈধতা দিতে? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদেরই দিতে হবে। লং টার্ম সফলতার খাতায় কিছুই জমা করতে পারেনি ১/১১’র সরকার, এ জন্যে কি তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে রাজনৈতিক সরকারগুলোকে কেন আসামী করতে পারছিনা আমরা? জনগণের রায়ে তারা তো ৫ বছরের জন্যে ক্ষমতাসীন হন, কি এমন সাফল্য এই সরকারগুলোর? আর যদি ব্যর্থতার প্রসংগ টানা হয় এর ফিরিস্তি দিতে আরব্য উপন্যাসের সহস্র রজনীও যথেষ্ট হবেনা। ১/১১ আর যাই হোক আমাদের উপহার দেয়নি হ্যাঁ/না ভোটের ভন্ডামী, জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়নি চীফ মার্শাল ল এডমিনস্‌ট্রেটর নামের পোয়াতী জেনারেল যাদের পশ্চাৎদেশ হতে জন্ম নেয় বিএনপি/জাপার মত জারজ সন্তান।

রাজনীতিবিদ এবং তাদের সহযোগী লুটেরা দল বিদেশী চক্রান্তের দোহাই দিয়ে ধামাচাপা দিতে ভালবাসেন ১/১১’র উত্থানকে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে দেশ বিক্রীর নীল নক্সাই নাকি ছিল ১/১১’র মুল উদ্দেশ্য। শুনতে খুব ভাল শোনায় যা দেশপ্রেমের অংগ প্রত্যংগগুলোতে সুড়সুড়ি দেয়। জানিনা দেশের কোন সম্পদকে কুক্ষিগত করার জন্যে বিদেশীরা এমন ষড়যন্ত্রে জড়াচ্ছে। যতদূর জানি ঢাকা সহ দেশের সব জায়গায় গ্যাসের অভাবে শুধু শিল্প কারখানাই বন্ধ থাকছেনা, সাথে বন্ধ থাকছে বাসা বাড়ির রান্নাবান্না। এই গ্যাসের জন্যেই কি এত তেনা পেচানো? কোথায় সে গ্যাস? গ্যাস যদি না হয় তা হলে কি তেল? মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো হতে এখনো হাতে পায়ে ধরে বাকিতে কমমূল্যে তেল আমদানী চলছে বহু বছর ধরে। তা হলে মাটির তলায় কি এমন গুপ্তধন লুকানো আছে যার জন্যে ১/১১’র মত মহা আয়োজন দরকার ছিল? এর উত্তর রাজনীতিবিদ্‌দের জানা থাকলে এখনই তা প্রকাশ করা উচিৎ। এমন একটা তত্ত্ব আমাদের রাজনীতির মাঠে পেনালটি গোলের মত কাজ করে, দেশ বিক্রী! আমার জানা নেই ১৫কোটি বহুমূখী মানুষ আর হাহাকার করা মাটির তলা নিয়ে বিশ্বের কোন দেশ দখল নিতে আসবে বাংলাদেশকে। আমরা নেংটা হয়েও যদি কাউকে আমাদের শরীর নিবেদন করি এ নষ্ট শরীর ছোঁয়ার মত খদ্দের পাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দেশ বিক্রীর মায়াকান্না কেবলই রাজনৈতিক ভাওতাবাজী, লুটেরা দলের কদর্য্য চেহারা লুকানোর বহুবিধ কলাকৌশলের অংশ মাত্র।

১/১১’র মত বেআইনী সরকারের জন্মদাতা রাজনীতিবিদ নিজেরা, এর ভালমন্দের দায় দায়িত্ব নিতে হবে তাঁদেরকেই, এতে সাধারণ জনগণকে জড়ানোর কোন সূযোগ নেই। রাজনীতিবিদ্‌দের জন্যে এর প্রয়োজন ছিল, আর আমাদের জন্যে প্রয়োজন ছিল ভাল মন্দ চেনার একটা সূযোগ। আমরা নিশ্চয় চিনেছি, রাজনীতিবিদ্‌রা চিনেন্‌নি এটাও বোধহয় সত্য নয়। সচিবালয়ের অলিগলিতে এখনো যখন কমিশন হাত বদল হয় নিশ্চয় ১/১১’র প্রেতাত্মা দাঁত বের করে ভয় দেখায়, না চাইলেও সামনে এসে দাঁড়ায় নাজিমুদ্দিন রোডের দিনগুলি। মইন উদ্দিন ফকরুদ্দিনের গুষ্টি উদ্বার করে ক্ষমতা হারানোর ব্যথা হয়ত সাময়িক উপশম সম্ভব হচ্ছে, কিন্তূ তাতে ক্ষমতার রংগমঞ্চে নতুন মুয়া-ফুয়াদের আগমনের সম্ভাবনা দূর হচ্ছে এমনটা ভেবে শান্তি পেলে রাজনীতিবিদ্‌রা ভুল করবেন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন