নিঝুম দ্বীপে নীবিড় ছাত্র চাষ!

Submitted by WatchDog on Friday, January 4, 2013

Student Politics in Bangladesh

সোভিয়েত দেশের লৌহমানব লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভের মৃত্যুর পর দেশটার কম্যুনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ক্ষমতায় আসেন এককালের কেজিবি প্রধান ইউরি আন্দ্রোপভ। কনস্টানটিন চেরনেনকো নামের পলিটব্যুরোর অন্য এক সদস্য ব্রেজনেভ-আন্দ্রোপভ ডাইনাস্টির গ্যাপে কিছুটা সময় শাসন করে গেলেও তা জাতীয় তথা আর্ন্তজাতিক রাজনীতিতে তেমন কোন প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু কমরেড আন্দ্রোপভ শাসনের শুরুতে এমন কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করে যা ছিল তৎকালিন সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার জন্যে অপ্রত্যাশিত ও নজিরবিহীন। যেহেতু সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্রে ব্যক্তিমালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজের কোন সুযোগ ছিলনা তাই আক্ষরিক অর্থে দেশের গোটা কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় সবাই কাজ করত সরকারের হয়ে। হঠাৎ করে মস্কো, লেনিনগ্রাদ, কিয়েভ সহ দেশটার বড় বড় শহরগুলোতে রেড আর্মি সপ্তাহের কার্য্য দিবসগুলোর ৯টা-৪টা ভেতর শপিং সেন্টার গুলো ঘেরাও করে পরীক্ষা করতে শুরু করে কেন কর্মক্ষম মানুষ গুলো এ সময় কাজ ফেলে কেনা-কাটায় সময় ব্যয় করছে। ছাত্ররাও ছিল সরকারী অনুদানের অন্যতম সুবিধাভোগী, তাই তাদের উপর চড়াও হয় নির্দয় ভাবে। ক্যাম্পাস ফেলে অসময়ে গায়ে বাতাস লাগানোর মাশুল গুনতে শুরু করে হাজার হাজার ছাত্র। আমি নিজেও তখন সোভিয়েত দেশের ছাত্র। এবং খুব কাছ হতে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে পচে যাওয়া সোভিয়েত দেশের এই অভূতপূর্ব পরিবর্তন।

উপরের ছবিটা কেন জানি সে দিন গুলোর কথাই মনে করিয়ে দেয়। তারা ছাত্র। হাতে বই-খাতার বদলে লাঠি-সোঠা আর চোখে মুখে প্রতিশোধের জ্বলন্ত আগুন। ছবিটা যেহেতু দিনের আলোতে নেয়া ধরে নিতে পারি সকাল ৯টা হতে বিকাল ৪টার ভেতর কোন এক সময় তোলা। এটা কি সে সময় নয় যখন ছাত্রদের ক্লাশরুমের চৌহাদ্দিতে শিক্ষকদের লেকচার শোনার কথা? মা-বাবা কি এ জন্যেই তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠায়নি? দেশ আজ বিদেশীদের দখলে নয়। মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে নতুন কোন ৫২’র জন্ম দেয়ার মত অবস্থায় নেই আমরা। তাহলে এরা কারা? কি এদের মিশন? অনেকে বলবেন গণতন্ত্র রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী এরা। ছাত্রদের কি তাহলে দেশের তাবৎ সমস্যা সমাধানের ঠিকাদারী দেয়া হয়েছে? মা-বাবার কষ্টের পয়সা শ্রাদ্ধ করে, সরকারী বাজেটের সিংহভাগ সুবিধা ভোগ করে ছাত্র নামের যারা বড় হচ্ছে তার কি কেবল ভবিষতকেই কবর দিচ্ছে, না-কি বর্তমানকেও ঠেলে দিচ্ছে গভীর অন্ধকারে? প্রশ্ন হচ্ছে কার স্বার্থে এ শিক্ষা? কোটি টাকা বিঘার সম্পত্তিতে ঠাঁই দিয়ে ছাত্রদের দস্যুবৃত্তিতে অনেকে জাতীয় ঐতিহ্য ও বিবেকের প্রতি সন্মান দেখানোর আত্মসন্তূষ্টি খুঁজে পান। কিন্তু এ শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ডকে কতটা বাঁকা করছে তার হিসাব নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে্ন বলে মনে হয়না।

বঙ্গোপসাগরের মনোরম ও নৈসর্গিক পরিবেশের দ্বীপ সন্দ্বীপ। এখানে মাটি, পানি ও আকাশের মিলন মেলায় মানুষকে তার জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। ঢাকা শহরের যান্ত্রিক পরিবেশ হতে ছাত্রদের সরিয়ে এমন একটা মনোরম পরিবেশে ঠেলে দিলে একদিকে তারা নিজেরা যেমন খুঁজে পাবে নিজেদের, পাশাপাশি জাতিও মুক্তি পাবে ছাত্র নামের পশুত্ব হতে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী আর খুলনার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো আগামী ২৫ বছরের জন্য সন্দ্বীপ অথবা নিঝুম দ্বীপের মত কোন দ্বীপে পাঠিয়ে ছাত্র তৈরীর নিবিড় চাষাবাদ প্রকল্প বিবেচনার জন্য জাতির কাছে অনুরোধ রইল।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন